দ্বারকানাথ কোটনিস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বারকানাথ কোটনিস
জন্মঅক্টোবর ১০, ১৯১০
মৃত্যু৯ ডিসেম্বর ১৯৪২(1942-12-09) (বয়স ৩২)
মাতৃশিক্ষায়তনবম্বে বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাচিকিৎসক
দাম্পত্য সঙ্গীগুয়ো কিউইংলান
সন্তানইনহুয়া (১৯৪২ - ১৯৬৭)
পিতা-মাতাশান্তারাম কোটনিস

দ্বারকানাথ শান্তারাম কোটনিস (দেবনাগরী: द्वारकानाथ शांताराम कोटणीस, চীনা: 柯棣华) (অক্টোবর ১০, ১৯১০ – ডিসেম্বর ৯, ১৯৪২) ভারতের পাঁচজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন যাঁরা দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধের সময় চীনে চিকিৎসা সহায়তার জন্য গেছিলেন। তিনি ভারতচীন দুই দেশের সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দুই দেশের মানুষের কাছে সম্মানিত।

প্রথম জীবন[সম্পাদনা]

দ্বারকানাথ শান্তারাম কোটনিস মহারাষ্ট্রের সোলাপুরে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শান্তারাম্ম কোটনিসের তিন পুত্র ও পাঁচ কন্যা ছিল। দ্বারকানাথ বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেঠ গোবর্ধনদাস সুন্দরদাস মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। কোটনিস পিতার কাছ থেকে দেশপ্রেম ও সেবার ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

চীন যাত্রার প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

জাপানের চীন আক্রমণের পরে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে চু তে জওহরলাল নেহরুকে ভারত থেকে কয়েকজন চিকিৎসককে চীনে পাঠাতে অনুরোধ করেন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে জুন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবাসীর কাছে এই বিষয়ে আবেদন করেন। এছাড়াও তিনি মডার্ণ রিভিউ পত্রিকায় দূর প্রাচ্যে জাপানের ভূমিকা বিষয়ে এক নিবন্ধ লেখেন। [১] সুভাষচন্দ্রের ডাকে সাড়া দিয়ে এলাহাবাদ থেকে মদনমোহন অটল, নাগপুর থেকে এম চোলকর, কলকাতা থেকে দেবেশ মুখোপাধ্যায়বিজয় কুমার বসু এবং সোলাপুর থেকে কোটনিস যোগদান করেন ও ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। [২]

চীনে চিকিৎসাকার্য্য[সম্পাদনা]

পাঁচজনের এই চিকিৎসক দল চীনের ঊহান শহরের হানকো বন্দরে পদার্পণ করলে তাদের ইয়েনান পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের অভ্যর্থনা জানান মাও সে তুং, চু তে ও অন্যান্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা। চীন যাওয়ার পরে কোটনিস পিতার মৃত্যুসংবাদ পান কিন্তু কোটনিস সেবার ব্রত পরিত্যাগ করে দেশে ফিরে আসেননি। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি উটাই পর্বতের নিকটে জিন-চা-জি সীমান্তে মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে থাকা অষ্টম রুট বাহিনীতে যোগদান করেন। কোটনিস যুদ্ধ চলাকালীন অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে প্রায় ৮০০ আহত সৈন্যের চিকিৎসা করেন। এই সময়ে কিছুদিন জিন-চা-জি (晉察冀) সৈন্য বিভাগে ডঃ বেথুন স্বাস্থ্যবিধি বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক ভাষণ দিতেন। পরে তাকে ইয়েনানের ডঃ বেথুন আন্তর্জাতিক শান্তি হাসপাতালের ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রথম অধিকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাঁচজনের এই দলের বাকি সদস্যরা মিশন শেষে ভারতে ফিরে যান কিন্তু দ্বারকানাথ কোটনিস আর ফেরেননি। চীনা ভাষা শিখে নেন এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

পরিবার[সম্পাদনা]

১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে কোটনিস ডঃ বেথুন আন্তর্জাতিক শান্তি হাসপাতালের এক সেবিকা গুয়ো কুইংলানকে (চীনা: ) বিবাহ করেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে আগস্ট তাদের এক ছেলের জন্ম হয়। নিয়ে রংঝেনের উপদেশ মতো ভারতের চীনা প্রতিশব্দ ইন () ও চীনের চীনা প্রতিশব্দ হুয়া () মিলিয়ে তার নাম রাখা হয় ইনহুয়া[৩][৩][৪]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

চীনের শিজিয়াঝুয়াংয়ে দ্বারকানাথ কোটনিসের সমাধি

প্রতিকূল যুদ্ধকালীন পরিবেশে প্রতিনিয়ত কাজের দরুন কোটনিসের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। ইনহুয়ার জন্মের মাত্র তিন মাস পরেই কোটনিস মৃগীরোগে আক্রান্ত হন। পরপর একটানা খিঁচুনির ফলে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই ডিসেম্বর কোটনিসের মৃত্যু হয়।

চলচ্চিত্রে কোটনিসের জীবন[সম্পাদনা]

কোটনিসের জীবন নিয়ে শান্তারাম রাজারাম ভাঙ্কুদ্রের পরিচালনায় ও খ্বাজা আহমেদ আব্বাসের রচনায় ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ডঃ কোটনিস কি অমর কহানি নামে একটি হিন্দী চলচ্চিত্র তৈরী হয়। [৫] ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে কে ডি হ্যুয়া দাই ফু নামে এক চীনা চলচিত্রও তার জীবন নিয়ে তৈরি হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Japan's Role in the Far East" (originally published in the Modern Review in October 1937): "Japan has done great things for herself and for Asia. Her reawakening at the dawn of the present century sent a thrill throughout our Continent. Japan has shattered the white man's prestige in the Far East and has put all the Western imperialist powers on the defensive - not only in the military but also in the economic sphere. She is extremely sensitive - and rightly so - about her self-respect as an Asiatic race. She is determined to drive out the Western powers from the Far East. But could not all this have been achieved without Imperialism, without dismembering the Chinese Republic, without humiliating another proud, cultured and ancient race? No, with all our admiration for Japan, where such admiration is due, our whole heart goes out to China in her hour of trial" The Essential Writings of Netaji Subhas Chandra Bose Edited by Sisir K. Bose & Sugata Bose (Delhi: Oxford University Press) 1997 p190
  2. Deepak, B. R.। India-China Relations in the First Half of the 20th Century 
  3. [১] Neha Sahay, "The Legend Lives on", The Telegraph, Calcutta, India, November 16, 2006
  4. "May Sino-Indian Friendship Develop From Generation to Generation", People's Daily, June 02, 2000
  5. Dr Kotnis Ki Amar Kahani The Tribune, December 17, 2006.

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Abbas, Khwaja Ahmad. And One Did not Come Back! The Story of the Congress Medical Mission to China. Bombay: Sound Magazine, 1944.
  • Basu, Dr. B. K., Light on China: Call of Yanan - Story of the Indian Medical Mission to China 1938-1943, Edited by Manjeet H. Singh. Sketches by David Olivant. Foreign Languages Press Beijing, 2003, Hardback 420pp 235 x 155mm, আইএসবিএন ৭-১১৯-০৩৪৭৬-৬
  • Gao Liang: Dr. Kotnis. A Short Biography. New Book Centre, Kalkutta 1983.
  • Kotnis Mangesh Shantaram: The bridge for ever. A biography of Dr. Kotnis. Somaiya, Bombay / New Delhi / Madras 1982.
  • Guo Qinglan: My Life with Kotnis. Manak, New Delhi 2006.
  • Sheng Xiangong, Jin Hede: Dr. Kotnis in China. Dolphin Books, Beijing 1987.
  • Hán Hǎishān 韩海山 (Ed.): Kē Dìhuá zài Táng Xiàn 《柯棣华在唐县》. Héběi rénmín chūbǎnshè 河北人民出版社, Shijiazhuang 1992.
  • Sheng Xiangong et al. "An Indian Freedom fighter in China: A Tribute to Dr. D. S. Kotnis", Beijing: Foreign Language Press, 1983, p. 174.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]