তোপকাপি প্রাসাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পুরনো প্রাসাদ
বসফোরাস থেকে তোপকাপি প্রাসাদের দৃশ্য
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
স্থাপত্য রীতিউসমানীয়, বারোক (Baroque)
শহরইস্তানবুল
দেশতুরস্ক
নির্মাণকাজের আরম্ভপঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়
গ্রাহকউসমানীয় সুলতানগণ
স্বত্বাধিকারীTurkish state
কারিগরী বিবরণ
কাঠামোগত পদ্ধতিvarious low buildings surrounding courtyards, pavilions and gardens
আকার৫৯২,৬০০ - ৭০০,০০০ বর্গ মিটার
নকশা এবং নির্মাণ
স্থপতিদ্বিতীয় মুহাম্মদ, আলাউদ্দিন, দাউদ আগা, মিমার সিনান

তোপকাপি প্রাসাদ (তুর্কি ভাষায়: Topkapı Sarayı অর্থঃ কামানগোলা প্রাসাদ[১], উসমানীয় তুর্কি ভাষায়: طوپقپو سرايى) তুরস্কের ইস্তানবুল শহরে অবস্থিত একটি রাজকীয় প্রাসাদ। দ্বিতীয় মুহাম্মদ পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই প্রাসাদের নির্মাণকাজ শুরু করান। এই প্রাসাদ প্রায় ৪০০ বছর (১৪৬৫ - ১৮৫৬) ধরে উসমানীয় সুলতানদের বাসস্থান হিসেবে বিদ্যমান থাকে।[২]

এই প্রসাদটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান এবং রাজকীয় বিনোদনস্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তবে বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে মুসলমানদের জন্য পবিত্র স্মরণচিহ্ন যেমন হযরত মোহাম্মদ এর আলখাল্লা এবং তরবারি।[২] তোপকাপি প্রাসাদ "ইস্তানবুলের ঐতিহাসিক এলাকা" এর অন্তর্ভুক্ত যা ১৯৮৫ এ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষিত হয়েছে, এবং শ্রেণী iv এ "উসমানীয় সময়ের প্রাসাদ্গুলোর সবচেয়ে ভাল সামগ্রিক উদাহরণ" হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।[৩]

বাইজেন্টাইন কনস্টান্টিনোপল জয়ী সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের নির্দেশে স্থাপনাটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে। চারটি মূল চত্বর এবং অনেক ছোট ছোট ভবন নিয়ে এই জটিল প্রাসাদটি গড়ে তোলা হয়েছে। রাজকীয় বাসস্থান হিসেবে এর গুরুত্ব উচুতে হলেও প্রাসাদে প্রায় ৪,০০০ লোকের বাসস্থান ছিল,[২] যা পূর্বে একটি বিশাল তীরবর্তী এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে ১৫০৯ সালের ভূমিকম্প এবং ১৬৬৫ সালের অগ্নিকান্ডের পরে বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে প্রসাদ চত্বরটির সম্প্রসারণ করা হয়। প্রাসাদে মসজিদ, একটি হাসপাতাল, কয়েকটি বেকারি বা রুটিঘর এবং একটি টাঁকশাল রয়েছে।[২] প্রাসাদের নাম অনুবাদে হয় "কামান ফটক প্রাসাদ", নামটি এসেছে নিকটবর্তি একটি ফটক থেকে, যা ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে।

১৭ শতকের সুলতানগণ বসফরাস এ অবস্থিত নতুন প্রাসাদে সময় ব্যয় করতে পছন্দ করতেন, ফলে তোপকাপি প্রাসাদ ক্রমে ক্রমে এর গুরুত্ব হারাতে থাকে। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে রাজসভা নতুন তৈরি ডোলমাবাঞ্চ প্রাসাদে স্থানান্তর করার সিন্ধান্ত নেন সুলতান প্রথম আবদুল মজিদ। ডোলমাবাঞ্চ প্রাসাদ ছিল ইউরোপীয় শৈলীতে তৈরি শহরের প্রথম প্রাসাদ। যদিও কিছু রাজকর্ম যেমন রাজকীয় কোষাঘার, গ্রন্থাগার, মসজিদ এবং টাঁকশাল তোপকাপি প্রাসাদে থেকে যায়।

১৯২১ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর , তোপকাপি প্রাসাদ সরকারি রায়ে ১৯২৪ এর এপ্রিল ৩ তারিখে সাম্রাজ্যিক সময়ের জাদুঘরে পরিণত হয়। তোপকাপি প্রাসাদ জাদুঘরটির বর্তমানে সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। প্রাসাদ চত্বরে কয়েকশ ঘর এবং প্রকোষ্ঠ রয়েছে, তবে জনসাধারণের দর্শনের জন্য এখন শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ঘরগুলোতেই প্রবেশাধিকার রয়েছে। চত্বরটিতে মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী ছাড়াও তুর্কি সেনাবাহিনীর সশস্ত্র কর্মীদের পাহারায় মোতায়েন রয়েছে। প্রাসাদে উসমানীয় স্থাপত্যকলার বহু উদাহরণসহ বিপুল সংখ্যক চীনা মাটির বাসন, পোশাক, অস্ত্র, ঢাল, বর্ম-আবরণ, উসমানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নকল, ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিক হস্তলিপির সংগ্রহ রয়েছে সেই সাথে উসমানীয় বিভিন্ন মূল্যবান ধন ও রত্ন প্রদর্শনী ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Necipoğlu, Gülru (১৯৯১)। Architecture, ceremonial, and power : the Topkapi Palace in the fifteenth and sixteenth centuries। Internet Archive। New York, N.Y. : Architectural History Foundation ; Cambridge, Mass. : MIT Press। আইএসবিএন 978-0-262-14050-8 
  2. Simons, Marlise (১৯৯৩-০৮-২২)। "Center of Ottoman Power"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-০৪ 
  3. ICOMOS (২০০৬)। "2006 Periodic Reporting" (PDF)State of Conservation of World Heritage Properties in Europe SECTION II। UNESCO। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-১৭