ডেফল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ডেফল
ডেফল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Malpighiales
পরিবার: Clusiaceae
উপপরিবার: Clusioideae
গোত্র: Garcinieae
গণ: Garcinia
প্রজাতি: G. xanthochymus
দ্বিপদী নাম
Garcinia xanthochymus
L.
প্রতিশব্দ

Garcinia tinctoria and Garcinia dulcis (misapplied)

ডেফল একপ্রকার সপুষ্পক বৃক্ষ। এটি ডাম্বেল, ডেমগোলা (চাকমা ভাষায়) এবং আরুয়াক (গারো ভাষায়) নামে পরিচিত।[১] ইংরেজিতে একে ‘ফলস ম্যাংগোস্টিন’, 'মাংকি ফ্রুট' ‘এগ ফ্রুট’ বা ‘ইয়েলো ম্যাংগোস্টিন’ নামে ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Garcinia xanthochymus যা Clusiaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। গাছটির আদি নিবাস মালয়েশিয়া।

বিস্তার[সম্পাদনা]

ডেফল গাছের আদি নিবাস মালয়েশিয়া[২]। 'Garcinia' গণভুক্ত প্রায় ১৪০ টি প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে ডেফল প্রজাতিটি হাওয়াই দ্বীপে প্রথম নিয়ে যান Albert Jaeger ১৯০০ সালে। [৩] বাংলাদেশের সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বনাঞ্চলে ডেফল গাছ দেখা যায়।[১] বাংলাদেশে একসময় প্রচুর ডেফল গাছ দেখা যেত, তবে বর্তমানে এর ব্যাপকতা লোপ পেয়েছে। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সহজেই এই গাছ জন্মানো সম্ভব। রোদেলা ও ছায়াময় উভয় জায়গাতেই এই গাছ জন্মে। এটি অনাবৃষ্টি সহনশীল।[৪]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

ডেফল গাছ সাড়ে চার থেকে সাড়ে সাত মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতা উজ্জ্বল সবুজ, চকচকে, লম্বাটে বল্লমাকার, কিনারা খাঁজকাটা ও আগা সূঁচালো, ২০-২৪ সেমি লম্বা। এর ফুল সাদা, ১৯ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। ফুল ফোটে মার্চ থেকে মে মাসে। ফল মাঝারি আকারের আপেলের সমান; ৮-১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফলটি মসৃণ, অগ্রভাগ সূঁচালো, এবং কিছুটা বাঁকানো; কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে গাঢ় হলুদ রঙের হয়। [১] শীতকালে গাছে যখন পাতা ঝরে যায়, তখন ফল পাকতে শুরু করে। এই ফলের শাঁস সুগন্ধযুক্ত ও রসালো। ভেতরে এক বা একাধিক বীজ থাকে। ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি।[৫] ডেফল গাছে প্রচুর ফল হয়। এতে যখন ফল হয়, তখন দেখতে খুবই সুন্দর দেখায়।

ডেফল গাছ
কাঁচা ডেফল
ডেফল ফুলের কুঁড়ি

ব্যবহার[সম্পাদনা]

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ডেফল চাষ করা হয় এর ফলের জন্য। পাকা ডেফল অত্যন্ত টক।[৪] এটি দিয়ে জ্যাম, জেলি, আচার, জুস, সস, চাটনি, টক ডাল এবং তরকারি তৈরি করা হয়। যদিও পাকা ডেফল থেকে এর বীজ ও খোসা আলাদা করা একটু সময় সাপেক্ষ। সিলেটের বাজারে কাঁচা ডেফল বিক্রি হয়; সেখানে টক বা ডাল রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বানর ও অন্যান্য পশু-পাখিরাও ডেফল খেয়ে থাকে। ডেফল গাছে পার্পল-ম্যাঙ্গোস্টিনের (Garcinia mangostana) কলম দেয়া যায়। এভাবে একই গাছে ডেফল ও ম্যাঙ্গোস্টিন উভয় ফল উৎপাদন করা যায়। শুকনো ডেফল ফলের নির্যাসকে gamboge বলা হয় যা থেকে জলরং বানানো হয়। ডেফল -এর ভেষজ গুণও রয়েছে। ডেফল থেকে xanthone নামক রাসায়নিক পদার্থ সংগ্রহ করা হয় যার মধ্যে এন্টিবায়োটিক এবং এন্টি-ম্যালেরিয়াল গুণ আছে বলে ধারণা করা হয়।[৩] ভেষজ চিকিৎসায় এর অনেক ব্যবহার হয়ে থাকে।

রাসায়নিক উপাদান[সম্পাদনা]

ডেফল ফল থেকে নিম্নোক্ত রাসায়নিক উপাদানসমূহ পাওয়া যায় (Rastogi & Mehrotra, 1993):[১]

  • Xanthochymol
  • isoxanthochymol
  • cambogin
  • volkensiflavone
  • morelloflavone
  • biflavones GB-1 and GB-1a
  • maclurin
  • 1,5-dihydroxyxanthone
  • 1,7-dihydroxyxanthone

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  2. মৃত্যুঞ্জয় রায়, লেখক; দিব্য প্রকাশ ; বাংলার বিচিত্র ফল; ফেব্রুয়ারি, ২০০৭; পৃষ্ঠা-১৪৯-৫০, আইএসবিএন ৯৮৪-৪৮৩-২৬৬-৭
  3. http://ntbg.org/plants/plant_details.php?plantid=11880[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. YELLOW MANGOSTEEN Garcinia zanthochymus- http://www.daleysfruit.com.au/fruit%20pages/yelmangosteen.htm
  5. 'টক-মিষ্টি স্বাদের ডেফল'- মোকারম হোসেন | তারিখ: ২২-০৪-২০১২; http://archive.prothom-alo.com/detail/news/252180 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ জুন ২০১৬ তারিখে