শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থেকে পুনর্নির্দেশিত)
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
সংসদ সদস্য, লোকসভা
কাজের মেয়াদ
১৭ এপ্রিল ১৯৫২ – ২৩ জুন ১৯৫৩
উত্তরসূরীসাধন গুপ্ত
সংসদীয় এলাকাকলকাতা দক্ষিণ পূর্ব
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৫ আগস্ট ১৯৪৭ – ৬ এপ্রিল ১৯৫০
প্রধানমন্ত্রীজওহরলাল নেহরু
পূর্বসূরীঅবস্থান প্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীনিত্যানন্দ কানুনগো
গণপরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
৯ ডিসেম্বর ১৯৪৬ – ২৪ জানুয়ারী ১৯৫০
সংসদীয় এলাকাপশ্চিমবঙ্গ
ভারতীয় জনসংঘ-এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি
কাজের মেয়াদ
১৯৫১ (1951) – ১৯৫২ (1952)
পূর্বসূরীঅবস্থান প্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীমৌলি চন্দ্র শর্মা
বেঙ্গল প্রদেশ এর অর্থমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১২ ডিসেম্বর ১৯৪১ – ২০ নভেম্বর ১৯৪২
প্রধানমন্ত্রীএ কে ফজলুল হক
বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯২৯ – ১৯৪৭[১]
সংসদীয় এলাকাকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
কাজের মেয়াদ
৮ আগস্ট ১৯৩৪ – ৮ আগস্ট ১৯৩৮ [২]
পূর্বসূরীহাসান সোহরাওয়ার্দী
উত্তরসূরীমুহাম্মদ আজিজুল হক
সভাপতি অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা
কাজের মেয়াদ
১৯৪৩ – ১৯৪৭
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯০১-০৭-০৬)৬ জুলাই ১৯০১
কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
মৃত্যু২৩ জুন ১৯৫৩(1953-06-23) (বয়স ৫১)
জম্মু ও কাশ্মীর, ভারত
রাজনৈতিক দলভারতীয় জনসংঘ
দাম্পত্য সঙ্গীসুধা দেবী
সন্তান
পিতামাতাআশুতোষ মুখোপাধ্যায় (পিতা)
যোগমায়া দেবী (মাতা)
আত্মীয়স্বজনচিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় (ভাতিজা)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীপ্রেসিডেন্সি কলেজ (স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এলএলবি, ডি.লিট.)
লিঙ্কনস ইন (ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল)
জীবিকা
স্বাক্ষর

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (৬ জুলাই ১৯০১ - ২৩ জুন ১৯৫৩) ছিলেন একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ব্যারিস্টার এবং শিক্ষাবিদ। যিনি জওহরলাল নেহেরুর মন্ত্রী সভায় ভারতের প্রথম শিল্প ও সরবরাহ মন্ত্রী (বর্তমানে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে কুখ্যাত "নেহরু-লিয়াকত" চুক্তির বিরোধিতা করে তিনি নেহেরুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সহযোগিতায় ভারতীয় জনতা পার্টির পূর্বসূরি দল ভারতীয় জনসংঘ দল প্রতিষ্ঠা করেন।

পারিবারিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের আদিনিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার জিরাট-বলাগড় গ্রামে৷[৩] তার প্রপিতামহ পারিবারিক কারণে হুগলী জেলারই এক ব্রাহ্মণ অধ্যুষিত গ্রাম দিগসুই থেকে জিরাট-বলাগড় গ্রামে এসে বসতি গড়েন৷ তার পিতামহ গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৮৩৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর জিরাট-বলাগড় গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি ছিলেন মেধাবী৷ তিনি জিরাটের বিত্তশালীদের সাহায্যে কলকাতায় ডাক্তারী পড়তে আসেন এবং পরে জিরাট-বলাগড় গ্রাম ছেড়ে কলকাতার ভবানীপুরে বসতি স্থাপন করেন৷[৪]

শৈশব ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ১৯০১ সালের ৬ই জুলাই কলকাতায় এক উচ্চ সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও মাতা শ্রীমতী যোগমায়া দেবীর কাছ থেকে তিনি কিংবদন্তিতুল্য পাণ্ডিত্য ও ঐকান্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনা উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। তারা তাঁকে ‘পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন’-যাপনে অনুপ্রাণিতও করেন। ১৯২১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান দখল করার পর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ভারতীয় ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ১৯২৪ সালে বি.এল পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ স্থান লাভ করেন। ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকে শ্যামাপ্রসাদ তার ভাইস-চ্যান্সেলর পিতাকে শিক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করেন।

পিতার মত তিনিও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (১৯৩৪-১৯৩৮) হন। ১৯৩৭ সালে তদনীন্তন উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনুরোধ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি "বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত" রচনা করে দেওয়ার জন্য। রবীন্দ্রনাথ একটির বদলে দুটি গান রচনা করে দেন - "চলো যাই, চলো যাই" ও "শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান"। "চলো যাই, চলো যাই " গানটি গৃহীত হয় এবং ১৯৩৭ সালের ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে কুচকাওয়াজে ছাত্রদের দ্বারা প্রথম গীত হয়। ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত হিসেবে "শুভ কর্মপথে ধর নির্ভয় গান" গানটি গৃহীত হয়।

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

শুরুতে ড.মুখার্জি ভারত বিভাজনের তীব্র বিরোধী ছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১ সালে তিনি বলেন, মুসলিমরা যদি ভারত বর্ষের বিভাজন চায় তবে ভারতের সকল মুসলিমদের উচিত তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে পাকিস্তান চলে যাওয়া। পরবর্তীকালীন সময়ে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন এর বাড়িতে ভারত বিভাজন ও বাংলা বিভাজন নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ও হিন্দু জেলা প্রতিনিধি দের নিয়ে দুটি আলাদা সভা হবে এবং সবার মতামত নেয়া হবে। একটি সভার ফলাফলও যদি বাংলা ভাগ এর পক্ষে যায়, তবে বাংলা ভাগ হবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এর সভায় বাংলা বিভাজনের বিপক্ষে বেশি ভোট পড়ে। কিন্তু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠদের সভায় বাংলা বিভাজনের পক্ষে ভোট পড়ে। ড.মুখার্জী এখানে বড়সড় ভূমিকা পালন করেন। [৫]

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও স্বামী প্রণবানন্দ[সম্পাদনা]

স্বামী প্রণবানন্দের সাথে তার সখ্যতা ছিল। মহাপ্রয়াণের পূর্বে স্বামী প্রণবানন্দ বাঙালি হিন্দুদের দায়িত্ব তাকে দিয়ে যান।[৬]তার হাতে বাঙালি হিন্দুদের ভার দেবার জন্য ১৯৪০ সালের অক্টোবর মাস কাশীধামে ভারত সেবাশ্রম সংঘ এর দূর্গাপূজার উৎসব- সম্মেলনের কয়েক দিন পূর্বে স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ আচার্য্যদেব তার সঙ্ঘ সন্তানদের বলিলেন--

"শ্যামাপ্রসাদকে নিয়ে এস । 

সঙ্ঘ সন্তানগণ জিজ্ঞাসা করিলেন--

" শ্যামাপ্রসাদ কি এখন কাশীতে এসেছেন?" 

আচার্য্যদেব বলিলেন--

"হ্যাঁ, এসেছে, খুঁজে দেখ ।" 

খোঁজ করিতে করিতে দেখা গেল শ্যামাপ্রসাদ সপরিবারবর্গে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করিতেছেন । সন্যাসীরা গিয়া তাঁহাকে বলিলেন--

" স্বামীজী মহারাজ (স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ)  আপনাকে স্মরণ করেছেন, চলুন একবার আমাদের আশ্রমে । 

শ্যামাপ্রসাদ বলিলেন--

" মহাষ্টমীর দিন প্রাতে আমরা সকলে আশ্রমে গিয়া মায়ের চরণে অঞ্জলি দেব, স্বামীজী মহারাজেরও দর্শন করব, আশীর্বাদ নেব । 

মহাষ্টমীর দিন প্রাতে সপরিবারবর্গে শ্যামাপ্রসাদ আসিলেন । মহা মায়ের চরণে অঞ্জলি নিবেদনপের্ব্বক একাকী আচার্য্যদেবের প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করিলেন । আচার্য্যদেবের সহিত শ্যামাপ্রসাদের কী বিষয়ে আলাপ হ‌ইল, তাহা কেহ জানিল না । শ্যামাপ্রসাদের প্রতি আচার্য্যদেবের এই আকর্ষণ ও মনোযোগের এবং পুনঃ পুনঃ আশীর্বাদ দানের মর্ম তখন ভাবিতে না পারিয়া অনেকে অবাক হইল।আচার্যদেব বলিলেন-

বাঙ্গালি জাতির সামনে দাঁড়ানোর একটা লোক ঠিক করে দিয়ে গেলাম।আহা!আমার ভাব শ্যামাপ্রসাদই কিছুটা বুঝেছে।[৭] 

আচার্য্যদেবের (স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ) স্থূল লীলা সম্বরণপূর্ব্বক বিরাট সঙ্ঘদেহব্যূহে  অধিষ্ঠানের প্রায় সাত বৎসর পরে ইংরেজ গভর্ণমেন্ট ভারত খণ্ডনপৃর্ব্বক ভারতসাম্রাজ্য ত্যাগের আয়োজন করিল । ভারতের রাষ্ট্রনেতারা ইংরেজের রাজনৈতিক জুয়াখেলায় মাতিয়া চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর পরিকল্পনাকে (C.R.Formula) স্বীকারপূর্ব্বক ভারতবর্ষকে পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান দুই ভাগ করিতে প্রস্তুত হ‌ইললেন । সমগ্র বাংলা ও পাঞ্জাবকে পাকিস্তানে ঠেলিয়া দিবার  আয়োজন হ‌ইল ।

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও কাজী নজরুল ইসলাম[সম্পাদনা]

ডঃ মুখার্জী ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় অবিভক্ত বাংলার অর্থমন্ত্রী রূপে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ১১ ডিসেম্বর, ১৯৪১ থেকে ২০ নভেম্বর, ১৯৪২ পর্যন্ত কাজ করে যান। এই সময় কাজী নজরুল ইসলাম আর্থিক অনটনের কারণে ফজলুল হক সাহেবের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে ডঃ মুখার্জীর শরণাপন্ন হন এবং সহযোগিতা পান। ডঃ মুখার্জী’র পৈতৃক বাড়ি মধুপুরে সস্ত্রীক থাকার ব্যবস্থা করেছেন স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য। কাজী নজরুল ইসলাম মধুপুর থেকে ১৭ জুলাই, ১৯৪২-এ ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে একটা চিঠি লেখেন।[৮]  

শ্রী চরণেষু, 
…এই coalition ministry-র একমাত্র আপনাকে আমি অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করি ও ভালবাসি, আর কাউকে নয়। আমি জানি আমরাই এই ভারতবর্ষকে পূর্ণ স্বাধীন   করব। সেদিন বাঙালীর আপনাকে ও সুভাষবাবুকেই সকলের আগে মনে পড়বে-আপনারাই হবেন এদেশের পতাকার নায়ক। 
-কাজী নজরুল ইসলাম

শিল্পমন্ত্রী রূপে[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নেহেরুর মন্ত্রিসভায় শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জী শিল্পমন্ত্রী রূপে শপথ গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর হিন্দু মহাসভাকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।

ভারতের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন শিল্প উন্নয়ন নিগম, প্রথম শিল্পনীতি প্রণয়ন, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ স্থাপন, সিন্ধ্রি সার কারখানা-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। খড়গপুরে ভারতের প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি স্থাপনা, কলকাতার প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্থাপনার ভাবনা তারই মস্তিষ্ক প্রসূত।

কাশ্মীর[সম্পাদনা]

১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বেড়ে চলে। হত্যা, লুন্ঠন, নারীর সম্ভ্রমহানি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রতিবাদে ১৪ এপ্রিল, ১৯৫০ নেহেরু মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা (পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা) ও নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির প্রতিবাদে লোকসভায় প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন ডঃ মুখার্জী। অবশেষে নেহেরু মন্ত্রিসভা থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৫০ সালে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মৃত্যু হয়। কংগ্রেসের মধ্যে জাতীয়তাবাদী শক্তির ভর কেন্দ্রে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ১৯৫১ সালের অক্টোবরে অনেক চিন্তন ও মন্থন শেষে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গুরুজী গোলওয়ালকারের সঙ্গে পরামর্শ ক্রমে নতুন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ সালের মে মাসে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ভারতীয় জনসংঘ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তিনটি আসন লাভ করে।

ডঃ মুখার্জী লোকসভায় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে বিরোধী দলের প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্ব দান করেন। লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নিজেকে উদাহরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।

জনসংঘ ঐ সময় বিধানসভা ভোটে বাংলা প্রদেশে ৮টি আসন ও রাজস্থানে ৮টি আসন লাভ করে। রাজস্থানে জমিদার প্রথা বিলোপ আইনের প্রশ্নে বিধায়করা দ্বিধাবিভক্ত ছিল। ডঃ মুখার্জী রাজস্থান পরিষদীয় দলের জরুরি বৈঠক ডেকে নির্বাচনী ইস্তেহারের প্রতিশ্রুতি পালনের দায়বদ্ধতার কথা বলেন। ওই সভায় আটজন বিধায়কের মধ্যে মাত্র দু’জন ভৈরব সিং শেখা‍ওয়াত ও জগৎ সিং জালান উপস্থিত ছিলেন। ডঃ মুখার্জী তৎক্ষণাৎ বাকি ছ’জন বিধায়ককে বহিষ্কার করেন। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার স্বীকার করে তিনি নিজের দলকে মাত্র দুই সদদ্যের দলে পরিণত করেন।

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা চালু রাখলে অদূর ভবিষ্যতে সমস্যা বাড়তে পারে তা তিনি বারবার লোকসভার ভিতরে ও বাইরে ব্যক্ত করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সংবিধানের ৩৭০ ধারায় লেখা হয়। ‘Temporary, Transitional and Special Provision of Article 370’। সংবিধান প্রণেতা সাময়িক, পরিবর্তনমুখী ও বিশেষ কথাগুলির মধ্যে দিয়ে দূরদৃষ্টি প্রতিভাত হয়।

ভারতের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সংবিধানের বিশেষ অনুচ্ছেদ ৩৭০ ধারা বিলোপ ও পারমিটরাজ বাতিলের দাবিতে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কাশ্মীর অভিযান করেন। ১৯৫৩ সালের ১১ই মে পাঞ্জাবের উধমপুরে শেষ সভা করে কাশ্মীরে প্রবেশের পথে গ্রেফতারি বরণ করেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ নং ধারা নিয়ে নেহরু মন্ত্রিসভার(কংগ্রেস) সাথে মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণপন্থী প্রজা পরিষদ গঠন করে “এক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে আরেকটা প্রজাতন্ত্র থাকতে পারে না” এই দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৫৩ সালের ১১ই মে[৯] শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেপ্তার করে জেলবন্দি করা হলে তিনি বন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৫৩-র ২৩ জুন রহস্যময় ভাবে কাশ্মীরে বন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।কিছু মতে ধারণা করা হয় তাকে কংগ্রেস সরকার হত্যা করেছে যেটি এখনও বিতর্কিত রয়ে গেছে [১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Mishra 2004, পৃ. 96।
  2. "Our Vice-Chancellors"। University of Calcutta। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  3. আশুতোষের ছাত্রজীবন (অষ্টম সংস্করণ), অতুলচন্দ্র ঘটক প্রণীত , চক্রবর্ত্তী-চ্যাটার্জ্জি এন্ড কোং লিমিটেড, কলিকাতা, ১৯৫৪ সাল, পৃ. ১
  4. আশুতোষের ছাত্রজীবন (অষ্টম সংস্করণ), অতুলচন্দ্র ঘটক প্রণীত , চক্রবর্ত্তী-চ্যাটার্জ্জি এন্ড কোং লিমিটেড, কলিকাতা, ১৯৫৪ সাল, পৃ. ১
  5. Legislative Council Proceedings [BLCP], 1941, Vol. LIX, No. 6, p 216. Shree Nokul Chandra Mallick [Prominent litterateur In West Bengal]
  6. "125 years Birth Anniversary of Swami Pranvanandaji Maharaj Bharat Sevashram Sangha" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৮ 
  7. amaderbharat.com (২০২১-০১-০৪)। "আমি সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চাইনে, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী দুষ্টের দমন চাই: স্বামী প্রণবানন্দ"AmaderBharat.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৮ 
  8. "শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি জীবনী : স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী - স্বামী বেদানন্দ । Swami Pranabanandaji Maharaj and Shyamaprasad Mukherjee"Point Bangla। ২০২১-০৭-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৬ 
  9. http://books.google.co.in/books?id=Ye3VUMLhaz8C&pg=PA49&dq=Syama+prasad+mukherjee+arrested+in+kashmir+by+nehru&hl=en&ei=lTlwTov0BsjorQeJzfXnBg&sa=X&oi=book_result&ct=result&resnum=5&ved=0CD4Q6AEwBA#v=onepage&q=arrested%20kashmir&f=false
  10. https://www.anandabazar.com/editorial/essays/importance-of-syama-prasad-mukherjee-in-bengals-politics/cid/1276952