টেডি বিয়ার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একসময় রুজভেল্টের পৌত্রের কাছে থাকা পুতুল, সম্ভবত ১৯০০-র শুরুতে মিচকমের তৈরি; স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি, ২০১২
স্টিফের 55 PB মডেলের একটি রেপ্লিকা; স্টিফ মিউজিয়াম, গিয়েনজেন, জার্মানি, ২০০৬;

টেডি বিয়ার হলো একরকম মমি-করা খেলনা ভালুকের পুতুল বা সফট টয়। বিশ শতকের প্রথম দশকে যুক্তরাষ্ট্রে মরিস মিচটম এবং জার্মানিতে রিচার্ড স্টিফ পৃথক পৃথকভাবে একইসময়ে এটি উদ্ভাবন করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর "টেডি" রুজভেল্টের নামানুসারে নাম-রাখা এই টেডি বিয়ার ক্রমেই শিশুদের খেলনার প্রতীক হয়ে ওঠে এবং ছোটদের গল্প, গান আর ছবিতেও স্থান করে নেয়।[১] প্রথমদিকে টেডিগুলো বাস্তব ভালুকছানাদের মতো করে বানানোর চেষ্টা ছিল, পরে ধীরে ধীরে তার রূপ, সজ্জা, রঙ এবং উপাদানে অনেক বৈচিত্র্য এসেছে। অ্যান্টিক সংগ্রাহকেরা খুব পুরনো বা দুর্লভ টেডিগুলো বহুমূল্যে সংগ্রহ করে থাকেন; কখনোবা সেসব নিলামেও ওঠে।[২] এখনো ছোটোদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় উপহারগুলোর মধ্যে টেডি বিয়ার অন্যতম; আর বড়রাও ভালোবাসা প্রকাশে বা অভিনন্দন জানাতে একে অপরকে টেডি উপহার দিয়ে থাকেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯০২ সালে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার একটি রাজনৈতিক কার্টুনে প্রথম টেডি বিয়ার নামটি চালু হয়।

টেডি বিয়ার নামটা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের ডাকনাম "টেডি" থেকে (যদিও নামটা তিনি পছন্দ করতেন না)।[৩] ঘটনার সূত্রপাত এভাবে- ১৯০২ সালের নভেম্বরে মিসিসিপির গভর্নর অ্যান্ড্রু এইচ লঙ্গিনোর আমন্ত্রণে সেখানে একদিন ভালুক শিকারে যান রুজভেল্ট। সঙ্গের অন্য শিকারীরা অধিকাংশই ভালুক মারতে পারলেও, রুজভেল্ট তখনো পাননি। এরিমধ্যে হল্ট কলিয়ারের নেতৃত্বে,[৪] রুজভেল্টের কয়েকজন সহচর একটা আমেরিকান কালো ভালুককে অনেকক্ষণ ধাওয়া করে শেষে কোণঠাসা করতে সক্ষম হন। তারপর একটু পিটুনি দিয়ে সেটাকে কাছেই উইলো গাছের সাথে বেঁধে রাখেন যেন রুজভেল্ট এসে ওটা মারতে পারেন। কিন্তু রুজভেল্ট এসে দেখে বলেন, এভাবে বেঁধে-রাখা আহত ভালুককে মারা অখেলোয়াড়সুলভ ও কাপুরুষজনোচিত, তাই তিনি ওটাকে মারবেন না; অবশ্য সহচরদেরকে নির্দেশ দেন ভালুকটাকে মেরে ওর মরণয্ত্রণা লাঘব করে দিতে।[৫] এ ঘটনাটি নিয়ে কার্টুনিস্ট ক্লিফোর্ড বেরিম্যান ১৬ই নভেম্বর ১৯০২ তারিখে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় একটি রাজনৈতিক কার্টুন আঁকেন।[৬] প্রথম-আঁকা কার্টুনটাতে বড় একটা কালো ভালুক দেখানো হলেও পরবর্তী সংস্করণ থেকে ভালুকটাকে আকারে ছোট এবং বেশ কিউট দেখানো হয়।[৭]

খেলনা-কারিগর মরিস মিচকম এই কার্টুনটি দেখে টেডি বিয়ার বানাতে উদ্বুদ্ধ হন এবং ছোট্ট একটা নরম ভালুকছানার পুতুল তৈরি করেন, নাম দেন "টেডি'স বিয়ার" (Teddy's Bear)। আর রুজভেল্টের কাছে একটা পুতুল পাঠিয়ে তার নাম ব্যবহার করার অনুমতিও নিয়ে নেন। খেলনা পুতুলটা দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এবং মিচকমও আইডিয়াল নভেল্টি অ্যান্ড টয় কোম্পানি খুলে বসেন।[৫]

একই সময়ে জার্মানিতে রিচার্ড স্টিফের করা নকশানুযায়ী খেলনা-তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান স্টিফ ফার্ম একটি স্টাফ তথা মমি-করা ভালুকছানার পুতুল তৈরি করে। ১৯০৩ সালের মার্চে লিপজিগের খেলনা মেলায় তারা সেটার প্রদর্শনী করে এবং সেটা দেখে তখন নিউইয়র্কস্থ জর্জ বর্জফেল্ট এন্ড কোম্পানির প্রতিনিধি হারম্যান বার্গ[৮] যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ৩০০০ ভালুক অর্ডার করেন।[৯] যদিও স্টিফের রেকর্ডবুক অনুসারে ভালুকগুলো তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর কোনো দলিলপ্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং সেই "55 PB" মডেলের কোনো ভালুকও আর কখনো দেখা যায়নি; তাই লোকমুখে ছড়ায় যে পুতুলগুলো জাহাজডুবি হয়েছিলো। তবে গানথার ফিয়েফারের মতে, ঐ মডেলের পুতুলগুলো আজকের দিন পর্যন্ত থাকার মতো অতো টেকসই ছিল না-এমন সম্ভাবনা প্রবল।[১০] যাইহোক, স্টিফ এবং মিচকম একই সময়ে প্রথম টেডিবিয়ার তৈরি করলেও আটলান্টিকের এপার-ওপার যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে কেউই অপরজনের সৃষ্টির কথা জানতে পারেননি।[৬]

প্রথমদিকের টেডি বিয়ারগুলো বানানো হতো সত্যিকার ভালুকের মতো করে, থাকতো ফোলাফোলা নাক আর কুতকুতে চোখ। আধুনিক টেডি বিয়ারগুলোর হয় বড় বড় চোখ, চওড়া কপাল আর ছোট্ট নাক- শিশুসুলভ রূপে চেহারা আরো কিউট লাগে। এছাড়া, এখন মেরুভালুক, গ্রিজলি ভালুক বা পান্ডার মতো করেও টেডি বিয়ার[১১] তৈরি করা হচ্ছে।

শুরুতে মোহেয়ার নামক উজ্জ্বল হলদে-বাদামী পশমে টেডি বিয়ারগুলো আবৃত থাকতো। আর বর্তমানে কৃত্রিম তন্তু, ভেলোর, তুলা অথবা ডেনিম, ক্যানভাস বা সাটিনের কাপড় দিয়েও টেডি তৈরি হচ্ছে।


গ্যালারি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. David Cannadine, A point of view - The Grownups with teddy bears, 1 February 2013, (accessed 2013-02-01)
  2. "A STEIFF HARLEQUIN TEDDY BEAR, jointed, half red and half blue mohair, one blue and black and one brown and black glass eye, black stitching, yellow felt pads and FF button, circa 1925 --13½in. (34cm.) high (small bald spot below right ear, some fading mainly to the blue, blue eye cracked, patch to right pad and some general wear) Christie's"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-১২Estimate £50,000–£80,000 
  3. Matuz, Roger (২০০৪)। The Handy Presidents Answer Book। Canton, MI: Visible Ink Press। 
  4. "Holt Collier" (পিডিএফ)। ২০১৩-০৯-২৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-২৬ 
  5. "Teddy Bears"। Library Of Congress। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১০ 
  6. Clay, Marianne (২০০২)। "The History of the Teddy Bear"Teddy Bear & Friends। Madavor Media, LLC। ২০১১-০৭-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১০ 
  7. "Theodore Roosevelt Association. The story of The Teddy Bear"। Theodoreroosevelt.org। ২০১৩-০২-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-২৬ 
  8. "Bring on the Berg"Alex Ross: The Rest Is Noise 
  9. Teddy bear celebrates 100th birthday BBC, 2002-12-03
  10. The great teddy bear shipwreck mystery, BBC News, Francis Cronin, 26 July 2011
  11. GSR (February 04, 2021)। "টেডি বিয়ার ফটো"গৌরব সিং। এপ্রিল ১৭, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ April 16, 2021  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)