ঠাকুর পরিবার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ঠাকুর পরিবার
গোবিন্দপুর
[পঞ্চানন]  · [শুকদেব]
[জয়দেব]
পাথুরিয়াঘাটা
দর্পনারায়ণ
গোপীমোহন
চন্দ্রকুমার  · প্রসন্নকুমার
জ্ঞানেন্দ্রমোহন
যতীন্দ্রমোহন  · শৌরীন্দ্রমোহন
শৌতীন্দ্রমোহন
জোড়াসাঁকো
নীলমণি ঠাকুর
রামলোচন  · রামমণি  · রামবল্লভ
দ্বারকানাথ  · রমানাথ
দেবেন্দ্রনাথ  · গিরীন্দ্রনাথ  · নগেন্দ্রনাথ
দেবেন্দ্রনাথের বংশ
প্রথম প্রজন্ম
দ্বিজেন্দ্রনাথ  · সত্যেন্দ্রনাথ
হেমেন্দ্রনাথ  · বীরেন্দ্রনাথ
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ  · সোমেন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ  · সৌদামিনী
সুকুমারী  · শরৎকুমারী
স্বর্ণকুমারী  · বর্ণকুমারী
দ্বিতীয় প্রজন্ম
দ্বিজেন্দ্রনাথের সন্তান
দ্বিপেন্দ্রনাথ  · অরুণেন্দ্রনাথ
নীতীন্দ্রনাথ · সুধীন্দ্রনাথ
কৃতেন্দ্রনাথ
সত্যেন্দ্রনাথের সন্তান
সুরেন্দ্রনাথ  · ইন্দিরা
হেমেন্দ্রনাথের সন্তান
হিতেন্দ্রনাথ  · ক্ষিতীন্দ্রনাথ
ঋতেন্দ্রনাথ  · প্রতিভা
প্রজ্ঞা ·অভি  · মণীষা
শোভনা  · সুষমা
সুনৃতা  · সুদক্ষিণা
পূর্ণিমা  
বীরেন্দ্রনাথের সন্তান
বলেন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের সন্তান
রথীন্দ্রনাথ  · শমীন্দ্রনাথ
মাধুরীলতা · রেণুকা
মীরা
গিরীন্দ্রনাথের বংশ
প্রথম প্রজন্ম
গণেন্দ্রনাথ  · গুণেন্দ্রনাথ
দ্বিতীয় প্রজন্ম
গুণেন্দ্রনাথের সন্তান
গগনেন্দ্রনাথ
অবনীন্দ্রনাথ  · সুনয়নী

ঠাকুর পরিবার কলকাতার একটি খ্যাতনামা পরিবার। এই পরিবারের ইতিহাস প্রায় তিনশো বছরের।[১] বাংলার নবজাগরণে এই পরিবারের প্রভাব অত্যন্ত গভীর।[১] এই পরিবারের সদস্যেরা অনেকেই বাণিজ্য, সমাজ সংস্কার, ধর্মসংস্কার আন্দোলন, সাহিত্য, শিল্পকলা ও সংগীতের জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।[১][২]

পারিবারিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

ঠাকুর পরিবারের আদি পদবী কুশারী৷ এঁরা শাণ্ডিল্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ৷ রবীন্দ্রজীবনীকার শ্রীপ্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য-প্রবেশক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ঠাকুর পরিবারের বংশপরিচয় দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন,

পরবর্তীকালে কুশারীরা ছড়িয়ে পড়ে বঙ্গদেশের সর্বত্র - যশোর থেকে ঢাকা, বাঁকুড়া থেকে খুলনা৷ খুলনার পিঠাভোগের কুশারী বংশোভূত ঠাকুররাই কলকাতা শহরে এসে হয়ে উঠল সবচেয়ে প্রভাবশালী ও অবস্থাপন্ন৷[৪]

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

পূর্বে পরিবারটির পদবি ছিল কুশারী, যাদের আদিবাস বর্তমান বাংলাদেশের খুলনার পিঠাভোগ এবং যাদের উত্তরপুরুষ মহেশ্বর কুশারী ও তাঁর ছেলে পঞ্চানন জ্ঞাতিকলহের ফলে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় চলে আসেন। পঞ্চানন ও শুকদেব কুশারী গোবিন্দপুরে বসত গড়ে তোলেন, যা পরবর্তীতে রূপান্তরিত কলকাতা শহরের একটি গ্রাম। তারা জাহাজ ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন। ব্রাহ্মণ হবার কারণে প্রতিবেশীরা তাদের ঠাকুরমশাই বলে ডাকতেন। ব্রিটিশরা দেশের ক্ষমতা অধিগ্রহণের পর “ঠাকুর” তাদের পারিবারিক পদবীতে রূপান্তরিত হয়। ইংরেজদের সুবিধার্থে তা ‘Tagore’ বা ‘ট্যাগোর’ এ রূপান্তরিত হয়।

পঞ্চাননের দুই ছেলে। জয়রাম ও রামসন্তোষ। কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর ইংরেজদের অধীনে আসার পর ১৭০৭ সালে প্রথম এখানে জরিপের কাজ হয়। জরিপের কাজে দু’জন আমিনের প্রয়োজন ছিল, পঞ্চাননের অনুরোধে তৎকালীন কালেক্টর শেল্ডন জয়রাম ও রামসন্তোষকে ওই কাজে নিয়োগ করেন। এর পর ১৭১৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতার দক্ষিণে ৩৮টি গ্রাম কেনে। জয়রাম ও রামসন্তোষ সেখানেও জরিপের দায়িত্ব পান। ঠাকুর গোষ্ঠী এ ভাবেই বিত্তশালী হয়ে ওঠে। ১৭৪১-৪২ সালে বর্গি আক্রমণ রুখতে কলকাতায় যে মারহাট্টা খাল খনন করা হয়, পঞ্চানন-তনয় জয়রাম ঠাকুর ছিলেন তার অন্যতম পরিদর্শক, এমন মতও প্রচলিত।

জয়রামের চার পুত্র— আনন্দীরাম, নীলমণি, দর্পনারায়ণ, গোবিন্দরাম। এক কন্যা, সিদ্ধেশ্বরী। প্রথম পুত্র আনন্দীরাম নাকি অতিরিক্ত মদ্যপান করে কুলগুরুকে অপমান করেছিলেন, তাই জয়রাম তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করে তাড়িয়ে দেন। জয়রামের দ্বিতীয় পুত্র নীলমণি ঠাকুর ক্লাইভের আমলে ওড়িশায় কালেক্টরের অধীনে সেরেস্তাদার ছিলেন। নীলমণির পরের ভাই দর্পনারায়ণ ছিলেন ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান, এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য সূত্রেও তিনি প্রভূত বিত্তের অধিকারী হয়েছিলেন। [৮]

দর্পনারায়ণ ঠাকুর (১৭৩১-১৭৯১), পরিবারের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। তিনি টাকা-ঋণ দিয়ে মুনাফা লাভ করেন এবং উপার্জনের সাথে সমানতালে খরচ করেন। দর্পনারায়ণের সাথে তার ভাই নীলমণি ঠাকুর এর বিতণ্ডা হলে নীলমণি পরিবার নিয়ে মেছুয়াবাজারে চলে যান, যা পরবর্তীতে জোড়াসাঁকো নামে পরিচিত পায়। ধারাবাহিকতায় পরিবারের আরো কিছু শাখা পাথুরিয়াঘাট, কাইলাহাটা ও চরবাগানে চলে আসে। এই এলাকাগুলো ছিল নবগঠিত মহানগরীর অঞ্চল, বিশেষ করে যখন ব্রিটিশরা গোবিন্দপুরকে নতুন ফোর্ট উইলিয়াম হিসেবে গড়ে তোলে।

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Deb, Chitra, pp 64-65.
  2. "The Tagores and Society"। Rabindra Baharati University। ২০১২-০৭-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২৪ 
  3. রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য-প্রবেশক (প্রথম খণ্ড), প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলিকাতা, ১৯৮৫, পৃ. ৩
  4. "https://banglalive.com/jorasanko-thakurbari-muslim-connection/ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে"
  5. On the edges of time (New ed.) (December 1978), Tagore, Rathindranath, Greenwood Press. p. 2, আইএসবিএন ৯৭৮-০৩১৩২০৭৬০০
  6. Timeless Genius, Mukherjee, Mani Shankar, Pravasi Bharatiya(May 2010), p. 89, 90
  7. Rabindranath Tagore : Poet And Dramatist(1948), Thompson, Edward, Oxford University Press. p. 13
  8. "ঠাকুর গোষ্ঠী" 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • Deb, Chitra, জোড়াসাঁকো এবং ঠাকুর পরিবার, in Calcutta, the Living City, Vol I, edited by Sukanta Chaudhuri, pp 64–67, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৩৬৯৬-১
  • সেনগুপ্ত, নীতীশ, "বাংলাভাষী মানুষের ইতিহাস", 2001/2002, UBS পাবলিশার্স ডিস্ট্রিবিউটর প্রাইভেট লিমিটেড।, আইএসবিএন ৮১-৭৪৭৬-৩৫৫-৪
  • সেনগুপ্ত, সুবোধ চন্দ্র এবং বসু, অঞ্জলি (সম্পাদক), (1976/1998), সংসদ বাঙালি চরিতবিধান (জীবনীমূলক অভিধান) প্রথম খণ্ড, বাংলায়, সাহিত্য সংসদ আইএসবিএন ৮১-৮৫৬২৬-৬৫-০
  • দেবী চৌধুরানী, ইন্দিরা, স্মৃতিসম্পুট প্রথম খণ্ড (1997/2000), বাংলায়, রবীন্দ্র ভবন, বিশ্বভারতী।
  • ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ এবং চন্দ, রানী, জোড়াসাঁকোর ধরে (জোড়াসাঁকোর পাশে), বাংলায়, (1944/2003), বিশ্বভারতী প্রকাশনা বিভাগ।
  • শাস্ত্রী, শিবনাথ, রামতনু লাহিড়ী বাংলায় তৎকালিন বঙ্গ সমাজ, (1903/2001), নিউ এজ পাবলিশার্স প্রা. লিমিটেড
  • ড.এস. রাধাকৃষ্ণন "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ সেটেনারি ভলিউম 1861–1961" সাহিত্য একাডেমী আইএসবিএন ৮১-৭২০১-৩৩২-৯
  • মুখার্জি, মণি শঙ্কর "সময়হীন জিনিয়াস" প্রবাসী ভারতীয় এপ্রিল-মে 2010 পৃ 89-90

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]