জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা
পূর্ণেন্দু পত্রী অঙ্কিত জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থের প্রচ্ছদ
লেখকজীবনানন্দ দাশ
প্রচ্ছদ শিল্পীপূর্ণেন্দু পত্রী
দেশভারত
ভাষাবাংলা
বিষয়নির্বাচিত কবিতা সংকলন
প্রকাশকভারবি,
প্রকাশনার তারিখ
১৯৫৪
মিডিয়া ধরনকাগজ
পৃষ্ঠাসংখ্যা১৬০
আইএসবিএন৮১৮৬১৩৪৩০১

জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ সংকলিত স্বরচিত কবিতার একটি সংকলন। কবির মৃত্যুর কয়েকমাস পূর্বে ১৯৫৪ সালের মে মাসে এই গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার অর্জন করে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে।

জীবনানন্দ দাশের জীবদ্দশায় প্রকাশিত এই সংকলন গ্রন্থের জন্য কবিতা নির্বাচন করেছিলেন কবি বিরাম মুখোপাধ্যায় বইটির বর্তমান প্রকাশক ভারবি। কবি পূর্ণেন্দু পত্রী ভারবি সংস্করণের প্রচ্ছদশিল্পী। পরবর্তী কালে এই গ্রন্থের পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।

জীবনানন্দ দাশ এই গ্রন্থটির ভূমিকায় লিখেছিলেন,

ভালো কবিতা যাচাই করবার বিশেষ শক্তি সংকলকের থাকলেও আদি নির্বাচন অনেক সময়ই কবির মৃত্যুর পরে খাঁটি সংকলনে গিয়া দাঁড়াবার সুযোগ পায়। কিন্তু কোনো-কোনো সংকলনে প্রথম থেকেই যথেষ্ট নির্ভুল চেতনার প্রয়োগ দেখা যায়। পাঠকের সঙ্গে বিশেষভাবে যোগ-স্থাপনের দিক দিয়ে এ-ধরনের প্রাথমিক সংকলনের মূল্য আমাদের দেশেও লেখক পাঠক ও প্রকাশকদের কাছে ক্রমেই বেশি স্বীকৃত হচ্ছে হয়তো। যিনি কবিতা লেখা ছেড়ে দেননি তাঁর কবিতার এ-রকম সংগ্রহ থেকে পাঠক ও সমালোচক এ-কাব্যের যথেষ্ট সংগত পরিচয় পেতে পারেন ; যদিও শেষ পরিচয়লাভ সমসাময়িকদের পক্ষে নানা কারণেই দুঃসাধ্য। [১]

কবিতাসূচি[সম্পাদনা]

এই গ্রন্থে কবির জীবদ্দশায় প্রকাশিত ঝরাপালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির এবং কবির মৃত্যুর পরবর্তীকালে প্রকাশিত রূপসী বাংলা এবং বেলা অবেলা কালবেলা কাব্যগ্রন্থদ্বয়ে সংকলিত সর্বমোট বাহাত্তরটি ; এবং অগ্রন্থিত কিংবা অপ্রকাশিত কবিতানিচয় থেকে বাকি আঠারোটি কবিতা গৃহীত হয়। । অগ্রন্থিত কবিতাগুলোর মধ্যে 'আবহমান', 'ভিখিরী' এবং 'তোমাকে' ‌এই তিনটি কবিতা বনলতা সেন পর্যায়ের ; এবং ‘মনোকণিকা’, ‘সুবিনয় মুস্তফী’ এবং ‘অনুপম ত্রিবেদী’ এই তিনটি মহাপৃথিবী পর্যায়ের। সাতটি তারার তিমির পর্বের অপ্রকাশিত চারটি কবিতাগুলো হলো ‘অনন্দা’, ‘স্থান থেকে’, ‘দিনরাত’, এবং ‘পৃথিবীতে এই’। পূর্বে প্রকাশিত এবং শ্রেষ্ঠ কবিতায় প্রথম গ্রন্থিত কবিতাগুলো হলো : ‘তবু’, ‘পৃথিবীতে’, ‘এই সব দিনরাত্রি’, ‘লোকেন বেসের জর্নাল’, ‘১৯৪৬-৪৭’, ‘মানুষের মৃত্যু হলে’, ‘আছে’ এবং ‘যাত্রী’।

বিভিন্ন সংস্করণের প্রকাশেতিহাস[সম্পাদনা]

নাভানা প্রকাশন কর্তৃক শ্রেষ্ঠ কবিতা-র প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ খৃস্টাব্দের মে মাসে (বৈশাখ ১৩৬১ বাং)। কবি বিরাম মুখোপাধ্যায় (১৯১৫ - ১৯৯৮) কবিতাগুলো নির্বাচন করেন। প্রকাশিত পাঁচটি গ্রন্থ থেকে বাহাত্তর এবং অন্যান্য অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত রচনাবলী থেকে আঠারোটি কবিতা গৃহীত হয়। ১৩৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল পাঁচ টাকা। প্রচ্ছদ শিল্পী ছিলেন শ্রী ইন্দ্র দুগা (১৯১৮ - ১৯৮৯)। প্রচ্ছদ দেখে জীবনানন্দ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন।

ভারত বুক এজেন্সি, সংক্ষেপে ভারবি, ২৬ কলেজ স্ট্রীট, কলকাতা ৭৩, ১৯৬৬-এর নভেম্বর মাসে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে। এটিই এই সংস্করণটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। মোট ১০+১৫০=১৬০ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির মূল্য ছিল ছয় টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন কবি-শিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রী। এতে কবিতার সংখ্যা ছিল ৯০টি। দ্বিতীয় ভারবি সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। এতে ১৫টি কবিতা যোগ করা হয়। বলাবাহুল্য নতুন কবিতাগুলো জীবনানন্দ নির্বাচিত নয়। এই ১৫টি কবিতার শিরোনামঃ তুমি আলো, তোমায় আমি দেখেছিলাম, তোমায় আমি, সবার ওপর, ইতিবৃত্ত, এখন ওরা, সময় মুছিয়া ফেলে, কেন মিছে নক্ষত্রেরা, রবীন্দ্রনাথ, অনেক মৃত বিপ্লবী স্মরণে, আলোকপত্র, কার্তিক-অঘ্রায়ণ ১৯৪৬, আশাভরসা, উপলব্ধি, আলোপৃথিবী।

শ্রেষ্ঠ কবিতার-র পূর্বে প্রকাশিত কবিতাগুলোতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার পরিলক্ষিত হয়। তবে প্রধানত সাধু বা শিষ্ট শব্দের বদলে চলিত রীতি বা কথ্য শব্দে রূপান্তরের খাতিরেই এই পরিবর্তন। যেমনঃ চুমা হয়েছে চুমো, লব হয়েছে নেবো ইত্যাদি। কখনো বাচন ভঙ্গি বদলে গেছে।

বাংলাদেশ সংস্করণ[সম্পাদনা]

জীবনানন্দ গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দ এবং কবি আবিদ আজাদের যৌথ সম্পাদনায় বাংলাদেশ থেকে জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা নতুন ভাবে সংকলিত হয়েছে। ঢাকার শিল্পতরু প্রকাশনী থেকে এই গ্রন্থটি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ৪র্থ সংস্করেণর আইএসবিএন ৯৮৪-৪৫৫-২৯৩-১ । জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর বহু অগ্রন্থিত-অপ্রকাশিত কবিতা প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এটি মূল গ্রন্থের একটি বর্ধিত সংস্করণ। বর্ধিত সংস্করণে জীবনানন্দ দাশের অগ্রন্থিত ৩১টি কবিতা "নতুন কবিতা" নামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া ধূসর পাণ্ডুলিপি, মহাপৃথিবীরূপসী বাংলা গ্রন্থত্রয়ের পরিবর্ধিত সংস্করণ থেকে ৭টি কবিতা "সংযোজিত কবিতা" নামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সবর্মোট কবিতার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০২টি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্রন্থটির ২য় সংস্করণে সম্পাদকদ্বয় আরো ১২টি কবিতা সংযোজন করেন "আরো একগুচ্ছ" নামে। [২]

স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

১৯৫৫ সালে কবির মৃত্যুর পরবর্তী বৎসর ভারত সরকার কর্তৃক এই গ্রন্থখানি শ্রেষ্ঠ বাংলা গ্রন্থ বিবেচিত হয় এবং জীবনানন্দ দাশকে এই গ্রন্থের জন্য মরণোত্তর সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জীবনানন্দই এই পুরস্কারের প্রথম প্রাপক। [৩]

গ্রন্থসূত্র[সম্পাদনা]

  • জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, জীবনানন্দ দাশ, ভারবি, কলকাতা, ১৯৮৪।
  • জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, সম্পাদক আবদুল মান্নান সৈয়দ ও আবিদ আজাদ, প্রকাশক-শিল্পতরু প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৮৬।
  • বৈদগ্ধ পত্রিকা (জীবনানন্দ সংখ্যা), অক্টোবর, ১৯৯৯।
  • সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড (পরিমার্জিত তৃতীয় সংস্করণ), অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৪।
  • সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সংকলন ও সম্পাদনা: শিশিরকুমার দাশ, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৩।
  • বঙ্গসাহিত্যাভিধান, প্রথম খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, ফার্মা কেএলএম প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯০।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, জীবনানন্দ দাশ, ভারবি, কবির ভূমিকা
  2. জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, সম্পাদক আবদুল মান্নান সৈয়দ ও আবিদ আজাদ, প্রকাশক-শিল্পতরু প্রকাশনী, ঢাকা, ৪র্থ সংস্করণ ২০১১। - সম্পাদকের কথা থেকে সংগৃহীত তথ্য।
  3. "সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার তালিকা"। ১৬ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০০৯