জিন্নাহর চৌদ্দ দফা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জিন্নাহর চৌদ্দ দফা নামক সাংবিধানিক সংস্কার পরিকল্পনা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ কর্তৃক প্রস্তাবিত হয়। স্বাধীন ভারতে মুসলিমদের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার জন্য এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। জিন্নাহর লক্ষ্য ছিল মুসলিমদের জন্য অধিকতর রাজনৈতিক অধিকার আদায় করা। এ কারণে তিনি এই চৌদ্দ দফা প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে মুসলিমদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুসলিম লীগের নেতাদের আহ্বানে জিন্নাহ দলের নেতৃত্বে ফিরে আসেন এবং দলকে পুনরুজ্জীবিত করেন। ফলে এই দফাগুলো মুসলিমদের দাবিতে পরিণত হয় এবং পরবর্তী সময়গুলোতে মুসলিমদের চিন্তাধারায় প্রভাব ফেলে।

পটভূমি[সম্পাদনা]

১৯২৯ সালের ২৮ মার্চ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে এই রিপোর্ট প্রদান করা হয়। ইতিপূর্বে প্রকাশিত নেহেরু রিপোর্টকে মুসলিম নেতা তৃতীয় আগা খান ও করিম জালাল সমালোচনা করেছিলেন। এতে হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য যুক্ত নির্বাচনী ব্যবস্থার সুপারিশ করায় এর প্রতি তারা আস্থাশীল ছিলেন না।[১]

১৯২৮ সালের মে মাসে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন এবং ছয় মাস পর ভারতে ফিরে আসেন। ১৯২৯ সালের মার্চে তার সভাপতিত্বে দিল্লিতে মুসলিম লীগের অধিবেশন হয়। তার ভাষণে তিনি মুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গি চৌদ্দ দফায় তুলে ধরেন। একারণে এই দফাগুলোকে জিন্নাহর চৌদ্দ দফা বলা হয়।[১][২]

চৌদ্দদফা। টিকা[সম্পাদনা]

  1. ভবিষ্যৎ সংবিধানের রূপ হবে ইসলামিক ফেডারেল পদ্ধতির, যেখানে প্রাদেশিক বিষয়, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে অর্পিত হবে।
  2. সকল প্রদেশের একই প্রকার প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন/প্রাদেশিক সংহতি সুনিশ্চিত করতে হবে।
  3. রাষ্ট্রের সকল আইনসভা ও অন্যান্য নির্বাচিত সভা নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে নির্বাচিত ও মনোনীত হবে এবং সব প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব না কমিয়ে সংখ্যালঘিষ্ঠদের কার্যকরী জনপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে অথবা প্রতিনিধিত্ব সমান করতে হবে।
  4. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় মুসলিম জনপ্রতিনিধিত্ব এক তৃতীয়াংশের অধিকতর হতে পারবে।
  5. সম্প্রদায়গত গোষ্ঠী বা গোত্রগুলোর জনপ্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বর্তমানের মত পৃথকীয়করণ নির্বাচন চালু থাকবে, সুনিশ্চিত করা হবে যে যেকোনো সম্প্রদায় যুক্ত নির্বাচনের স্বার্থে পৃথকীয়করণ নির্বাচন ত্যাগের অধিকার রাখবে।
  6. আঞ্চলিক/প্রাদেশিক পুনর্বিন্যাস করা হলে তা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর প্রভাব ফেলা যাবেনা।
  7. সম্পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা, অর্থাৎ, বিশ্বাস, উপাসনা ও রীতি, প্রচারকার্য, সংগঠন ও শিক্ষা, সব সম্প্রদায়ের জন্য সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করতে হবে।
  8. কোনো আইনসভা বা নির্বাচিত ও মনোনীত জনপ্রতিনিধিসভা এমন কোনো বিল বা প্রস্তাব পাস করতে যাবেনা যাতে সে সভার কোনো সম্প্রদায়ের সদস্যদের তিন চতুর্থাংশের সম্মতি বহির্ভূত।
  9. বোম্বে প্রেসিডেন্সি থেকে সিন্ধু প্রেসিডেন্সি পৃথক করতে হবে।
  10. উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশবালোচিস্তানে অন্যান্য প্রদেশের মত সংস্কার করতে হবে।
  11. অন্যান্য ভারতীয়দের মত রাষ্ট্র ও অন্যান্য আঞ্চলিক/প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতার সাপেক্ষে মুসলিমদের পর্যাপ্ত অংশ দেওয়ার জন্য সংবিধানে বিধান রাখতে হবে।
  12. মুসলিম সংস্কৃতি, শিক্ষা, ভাষা, ধর্ম, ব্যক্তিগত আইন ও মুসলিম দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও আঞ্চলিক/প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদানের সুরক্ষার জন্য সংবিধানে বিধান রাখতে হবে।
  13. কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক, কোনো মন্ত্রিসভা, সরকার ও আইনসভা কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ মুসলিম মন্ত্রী ব্যতীত গঠিত হতে যাবেনা।
  14. কেন্দ্রীয় আইনসভা কর্তৃক সংবিধানের কোনো পরিবর্তন ভারতীয় ফেডারেশনের প্রদেশের ঐকমত্য ব্যতীত করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

হিন্দুদের মধ্যে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর এই দফাগুলো সমালোচিত হয়। জওহরলাল নেহেরু একে "জিন্নাহর হাস্যকর চৌদ্দ দফা" বলে উল্লেখ করেন।এই ঘটনা জিন্নাহকে পরবর্তীতে পাকিস্তান গঠনের পথে ঠেলে দেয় [৩] কংগ্রেস এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে।

পরবর্তী অবস্থা[সম্পাদনা]

চৌদ্দ দফা প্রকাশিত হওয়ার পর জিন্নাহকে গোল টেবিল বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে তিনি মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।[২][৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "History Of India(from National Movement To Present Day) – N. Jayapalan – Google Books"। Books.google.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৯ 
  2. "Jinnah, Pakistan and Islamic Identity: The Search for Saladin – Akbar S. Ahmed – Google Books"। Books.google.co.uk। ১৯২৮-১২-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৯ 
  3. "Encyclopaedia Eminent Thinkers (vol. 13 : The Political Thought Of M.A. Jinnah) – Jai Narain Sharma – Google Books"। Books.google.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৯ 
  4. "Indian History – Google Books"। Books.google.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৯