জগদ্ধাত্রী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(জগদ্ধাত্রী পূজা থেকে পুনর্নির্দেশিত)
জগদ্ধাত্রী
হাওড়া জেলার গ্রাম আন্দুলের চৌধুরী পাড়ার সর্বজনীনের জগদ্ধাত্রী পূজা
দেবনাগরীजगद्धात्री
অন্তর্ভুক্তিদেবী, মাতৃকা, পার্বতী
মন্ত্রওঁ দূং শ্রীশ্রীমজ্জগদ্ধাত্রীদুর্গায়ৈ নমঃ
গায়ত্রী: মহাদেব্যৈ বিদ্মহে সিংহবাহিন্যৈ ধীমহি। তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।
অস্ত্রশঙ্খ, চক্র, ধনুক, বাণ
বাহনসিংহ
সঙ্গীনীলকণ্ঠ শিব

জগদ্ধাত্রী বা জগদ্ধাত্রী দুর্গা হিন্দু শক্তি দেবী। ইনি দেবী দুর্গার (পার্বতী) অপর রূপ। উপনিষদে তার নাম উমা হৈমবতী। বিভিন্ন তন্ত্রপুরাণ গ্রন্থেও তার উল্লেখ পাওয়া যায়। যদিও জগদ্ধাত্রী আরাধনা বিশেষত বঙ্গদেশেই প্রচলিত।[১] আবার পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরহুগলি জেলার চন্দননগর,গুপ্তিপাড়া নদীয়া জেলার শান্তিপুরের সূত্রাগড় অঞ্চল ,উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ইছাপুরের নবাবগঞ্জ অঞ্চল জগদ্ধাত্রী উৎসবের জন্য জগদ্বিখ্যাত। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় মানসে রাজসিক দেবী দুর্গা (পার্বতী) ও তামসিক কালীর পরেই স্থান সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রীর।

জগদ্ধাত্রী কৃষ্ণনগর ও চন্দননগরের প্রাণাত্মিকা। কিন্তু এই জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কি তা নিয়ে রয়েছে বহু মতান্তর। ইদানীং কালে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি তথা নদীয়ার ব্রাহ্মশাসন গ্রামের জগদ্ধাত্রীপূজার কিছু কাহিনী পাঠক মহলে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উইকিপিডিয়াতেও লেখা আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জগদ্ধাত্রী পূজা সূচনার কথা। মজার কথা হল এই পূজা আদৌ কবে ও কোথায় শুরু হয়েছিল তার ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ কি? কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির মতে এই পূজা মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় (১৭১০ খৃষ্টাব্দ) দ্বারা শুরু হয়েছে। তিনি নাকি তৎকালীন নবাবের কাছে কোন এক কারণে দুর্গা পূজার সময়ে বন্দি হন এবং পরে দুর্গা পূজার পর ছাড়া পেলে স্বপ্নাদেশে পরের মাসের অর্থাৎ কার্তিক শুক্লা নবমীতে এই পূজার প্রচলন করেন। সময়কাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও অনুমানিক সূচনাকাল সর্বপ্রথম কৃষ্ণনগর। এর পর চন্দননগর বা অন্যান্য স্থানে জগদ্ধাত্রীপূজার সূচনা হয়।

জগদ্ধাত্রী সম্পূর্ণ তান্ত্রিক দেবী। বঙ্গ তান্ত্রিক সিদ্ধপুরুষ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশবংশীয় মহাপন্ডিত তন্ত্রজ্ঞ সিদ্ধসাধক কৌলাবধূতাচার্য্য রঘুনাথ তর্কবাগীশ মহাশয় (কাল গ্রহ বিষৎ ষট্ চন্দ্র শাকে) অর্থাৎ ১৬১০ শতাব্দে বা ১৬৮১খৃষ্টাব্দে প্রায় ১৬০ টি তন্ত্র ও প্রায় শতাধীক বেদ বেদান্ত পুরাণাদি গ্রন্থ মন্থন করে রচনা করেন “আগমতত্ব বিলাস” নামক এক অনর্ঘ্য মহাপুস্তক। সেই পুস্তকে স্পষ্টতই জগদ্ধাত্রী দেবীর সম্পূর্ণ মূর্তিবিবরণ, পূজাকাল, পূজা পদ্ধতি, পূজার বীজ মন্ত্র,দীক্ষাবিধি সব সুনিপুণ ভাবে বিস্তৃত উল্লেখ করেছেন রঘুনাথ জি।

ইন্দ্রনারায়ণের দেহরক্ষার ৬–৭ বছর বহু আগে থেকে কৃষ্ণনগরে পূজার সূচনা হয়। চন্দননগরে আদি মা তথা আরো কিছু বারোয়ারী পূজা সহ আদি হালদার পাড়ার বারোয়ারীর পূজার সচিত্র তথ্য প্রকাশিত হয়। ১৯৬১সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় স্পষ্টতই উল্লেখ আছে যে সেই পূজা প্রায় ৪০০ বছর প্রাচীন। সেই হিসাবে বর্তমান কাল ধরে সেই পূজা ৪৬০ বছর প্রাচীন।  তাহলে প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় আদি হালদার পাড়ার পূজাটিও পূর্বে কোন এক সাধক পরিবারের পূজা ছিল। তারাও মানে যে আদিমা তাদের থেকেও প্রাচীন। অর্থাৎ আদিমায়ের প্রাচীনত্ব স্বীকৃত। ১৮২০ সালে Friends of India নামক পত্রিকায় চন্দননগরে  জগদ্ধাত্রী পূজার উল্লেখ আছে। সেই স্থানে আছে রবার্টক্লাইভ চন্দননগরের চাউলপট্টিকে Granary of Bengal বলে উল্লেখ করেছিলেন। এবং সেই সময় আদিমায়ের পূজার কথাও ছিল। ক্লাইভের ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে চন্দননগর অভিযানের কথা সকলেই জানেন। এতদ্দ্বারা প্রমাণ হয় যে কৃষ্ণচন্দ্রের বহুপরে আদিমায়ের পূজা প্রচলিত ছিল। নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজত্বকাল থেকেই বঙ্গদেশে জগদ্ধাত্রী পূজার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

জগদ্ধাত্রী পূজার নিয়মটি একটু স্বতন্ত্র। দুটি প্রথায় এই পূজা হয়ে থাকে। কেউ কেউ সপ্তমী থেকে নবমী অবধি দুর্গাপূজার ধাঁচে জগদ্ধাত্রী পূজা করে থাকেন। আবার কেউ কেউ নবমীর দিনই তিন বার পূজার আয়োজন করে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজা সম্পন্ন করেন। এই পূজার অনেক প্রথাই দুর্গাপূজার অনুরূপ।

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ “জগৎ+ধাত্রী। জগতের (ত্রিভুবনের) ধাত্রী (ধারণকর্ত্রী, পালিকা)।”[২] ব্যাপ্ত অর্থে দুর্গা, কালী সহ অন্যান্য শক্তিদেবীগণও জগদ্ধাত্রী। তবে শাস্ত্রনির্দিষ্ট জগদ্ধাত্রী রূপের নামকরণের পশ্চাতে রয়েছে সূক্ষ্মতর ধর্মীয় দর্শন। স্বামী প্রমেয়ানন্দের মতে,

পৌরাণিক উপাখ্যান[সম্পাদনা]

রাঁচি রামকৃষ্ণ মিশন যক্ষ্মা স্যানাটোরিয়ামের জগদ্ধাত্রী পূজা

কেন উপনিষদ[সম্পাদনা]

কেন উপনিষদে, দেবী ভাগবত পুরাণ ও অন্যান্য পুরান মতে উল্লিখিত একটি উপাখ্যান অনুসারে : একবার দেবাসুর সংগ্রামে দেবগণ অসুরদের পরাস্ত করলেন। কিন্তু তারা বিস্মৃত হলেন যে নিজ শক্তিতে নয়, বরং ব্রহ্মের বলে বলীয়ান হয়েই তাদের এই বিজয়। ফলত তারা হয়ে উঠলেন অহংকার-প্রমত্ত। তখন দেবী লক্ষ্মী এক কুমারী বালিকার বেশ ধারণ করে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। তিনি একটি তৃণখণ্ড দেবতাদের সম্মুখে পরীক্ষার নিমিত্ত রাখলেন। অগ্নিবায়ু তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও সেই তৃণখণ্ডটিকে দগ্ধ বা বিধৌত করতে পারলেন না। তখন দেবগণ ইন্দ্রকে বালিকার পরিচয় জানবার নিমিত্ত প্রেরণ করলেন। ইন্দ্র অহংকার-প্রমত্ত হয়ে বালিকার কাছে আসেননি, এসেছিলেন জিজ্ঞাসু হয়ে। তাই ব্রহ্মরূপী দেবী মহালক্ষী তার সম্মুখ হতে তিরোহিত হলেন। বরং তার সম্মুখের আকাশে দিব্য স্ত্রীমূর্তিতে আবির্ভূত হলেন হৈমবতী রমা । রমা ব্রহ্মের স্বরূপ ব্যাখ্যা করে ইন্দ্রের জ্ঞানপিপাসা নিবৃত্ত করলেন। সেই দেবীকে পুরাণে জগদ্ধাত্রী নামে পরিচিতি লাভ করেন। জগদ্ধাত্রী অর্থাৎ জগৎ কে ধারণ যিনি করেন। [৪]

কাত্যায়নী তন্ত্র[সম্পাদনা]

উপনিষদে উমার রূপবর্ণনা নেই। কেবলমাত্র তাকে হৈমবতী পার্বতী অর্থাৎ স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা বলা হয়েছে। তবে এই হৈমবতী উমাই যে দেবী জগদ্ধাত্রী সে প্রত্যয় জন্মে কাত্যায়ণী তন্ত্রের ৭৬ পটলে (অধ্যায়) উল্লিখিত একটি কাহিনি থেকে। এই কাহিনি অনুসারে : একদা ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু ও চন্দ্র – এই চার দেবতা অহংকার-প্রমত্ত হয়ে নিজেদের ঈশ্বর মনে করতে শুরু করলেন। তারা বিস্মৃত হলেন যে দেবতা হলেও তাদের স্বতন্ত্র কোনও শক্তি নেই – মহাশক্তি পার্বতীর শক্তিতেই তারা বলীয়ান। দেবগণের এই ভ্রান্তি অপনয়নের জন্য দেবী জগদ্ধাত্রী ( পার্বতী) কোটি সূর্যের তেজ ও কোটি চন্দ্রের প্রভাযুক্ত এক দিব্য মূর্তিতে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। এর পরের কাহিনি কেন উপনিষদে বর্ণিত তৃণখণ্ডের কাহিনির অনুরূপ। দেবী প্রত্যেকের সম্মুখে একটি করে তৃণখণ্ড রাখলেন; কিন্তু চার দেবতার কেউই তাকে স্থানচ্যুত বা ভষ্মীভূত করতে অসমর্থ হলেন। দেবগণ নিজেদের ভুল উপলব্ধি করলেন। তখন দেবী তার তেজোরাশি স্তিমিত করে এই অনিন্দ্য মূর্তি ধারণ করলেন। এই মূর্তি ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা, রক্তাম্বরা, সালংকারা, নাগযজ্ঞোপবীতধারিনী ও দেব-ঋষিগণ কর্তৃক অভিবন্দিতা এক মঙ্গলময়ী মহাদেবীর মূর্তি। সমগ্র জগৎকে পরিব্যাপ্ত করে দেবী দেবগণকে এই মূর্তি দেখালেন; দেবগণও তার স্তবে প্রবুদ্ধ হলেন। [৫]

প্রতিমা তত্ত্ব[সম্পাদনা]

কলকাতার কলেজ স্ট্রিট সন্নিহিত বেনিয়াটোলা লেন সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজাকমিটির প্রতিমা, ২০০৮
হাওড়া জেলার মাসিলা গ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজো।

জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। তার হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ; গলায় নাগযজ্ঞোপবীত। বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান। দেবীর গাত্রবর্ণ উদিয়মান সূর্যের ন্যায়।

ধ্যানমন্ত্র[সম্পাদনা]

জগদ্ধাত্রীর ধ্যানমন্ত্রে দেবীর যে রূপকল্পনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:

ওঁ দূং সিংহস্কন্ধসমারূঢ়াং নানালঙ্কারভূষিতাম্।
চতুর্ভুজাং মহাদেবীং নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্॥
শঙ্খশার্ঙ্গসমাযুক্তাং-বামপাণিদ্বয়ান্বিতাং।
চক্রঞ্চ পঞ্চবানাঞ্শ্চ ধারয়েতঞ্চ দক্ষিণে॥
রক্তবস্ত্রপরিধানাং বালার্কসদৃশদ্যুতিম্।
নারদাদ্যৈর্মুনিগণৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীম্॥
ত্রিবলীবলয়োপেত-নাভিনালমৃণালিনীম্।
ঈষৎসহাস্যবদনাং কাঞ্চনাভাং বরপ্রদাম্॥
নবযৌবনসম্পন্নাং পীনোন্নতপয়োধরাম্।
করুণামৃতবর্ষিণ্যা পশ্যন্তীং সাধকং দৃশা॥
রত্নদ্বীপে মণিদ্বীপে সিংহাসনসমন্বিতে।
প্রফুল্লকমলারূঢ়াং ধ্যায়েত্তাং ভবগেহিনীম্।
বিচিন্তয়েৎ জগতাং ধাত্রীং ধর্ম্মাকামার্থ মোক্ষদাম্।।
ওঁ দূং শ্রীমদ্জগদ্ধাত্রীদুর্গায়ৈ নমঃ॥

অর্থ: দেবী সিংহস্কন্ধে আরূঢ়া, নানা অলঙ্কারে অলংকৃতা, চতুর্ভুজা, মহাদেবী, সর্পকে যজ্ঞোপবীত রূপে পরিধান করে আছেন। বাম হাত দুটিতে তাঁর শঙ্খ এবং ধনুক, দক্ষিণ হাত দুটিতে চক্র এবং বাণ। পরিধানে রক্তবস্ত্র, তাঁর বর্ণ প্রাতঃ সূর্যের ন্যায় লাল। তিনি জগতের শ্রেষ্ঠসুন্দরী, নারদ প্রভৃতি মুনিগণ তাঁর সেবা করেন। তাঁর উদর নাভিপদ্মের মৃণালের মতো লোমাবলী বলায়াকার ত্রিবলীর সঙ্গে যুক্ত। তিনি মৃদুহাস্যবদনা, দেহের বর্ণে সুবর্ণের আভায় বরদায়িনী। তিনি নবযৌবনসম্পন্না, পীন ও উন্নত পয়োধরা। তিনি করুণা এবং অমৃতবর্ষী দৃষ্টিতে সাধককে দেখেন। রত্নময় দ্বীপে মহাদ্বিপে যে সিংহাসন রয়েছে তার উপর প্রফুল্ল কমলে তিনি উপবিষ্টা। যিনি এই ভবগৃহের স্বামিনী, ভবের ঘরনি সেই জগদ্ধাত্রী দুর্গাকেই ধ্যান করি। [৬]

নাগযজ্ঞোপবীতিনী জগদ্ধাত্রী; নাগরূপ যজ্ঞোপবীত মহাযোগিনী ব্রহ্মময়ী জগদ্ধাত্রীর প্রতীক

জগদ্ধাত্রী দেবীর প্রতিমার তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বামী নির্মলানন্দ বলেছেন, “অর্ক বা সূর্যই বিশ্বের পোষণকর্তা। পৃথিব্যাদি আবর্তনশীল গ্রহ-উপগ্রহদিগকে সূর্যই নিজের দিকে আকর্ষণ করে রেখেছেন। দেবী জগদ্ধাত্রীর মধ্যেও ধারণী ও পোষণী শক্তির পরিচয় বিদ্যমান। তাই তাঁকে বলা হয়েছে বালার্কসদৃশীতনু। একই কারণে জগৎপালক বিষ্ণুর শঙ্খ-চক্র-শার্ঙ্গধনু-আদি আয়ুধ দেবীর শ্রীকরে। দেবীর রক্তবস্ত্র ও রক্তবর্ণের মধ্যে, দেবীর সিংহাসনস্থ রক্তকমলে সেই রজোগুণেরই ছড়াছড়ি। রজোদীপ্ত বলেই জগদ্ধাত্রী মহাশক্তিময়ী। তাঁর অস্ত্রশস্ত্র, তাঁর বাহন – সকলই তাঁর শক্তিমত্তার ভাবটি আমাদের অন্তরে উদ্দীপ্ত করে দেয়। তবে দেবীর এই বীর্য সংহারের নয়। পরন্তু সমগ্র বিশ্বকে মহাসর্বনাশ থেকে রক্ষাপূর্বক তাকে আত্মসত্তায় – ঋতে ও সত্যে সুস্থির করে রাখবার জন্য। নাগ বা সর্প যোগের পরিচায়ক। উপবীত ব্রাহ্মণ্যশক্তির প্রতীক। দেবী জগদ্ধাত্রী ব্রহ্মময়ী; তিনি পরমা যোগিনী। মহাযোগবলেই ব্রহ্মময়ী ধরে আছেন এই নিখিল বিশ্বসংসারকে। এই জগদ্ধারণই জগদ্ধাত্রীর পরম তপস্যা – তাঁর নিত্য লীলা, তাঁর নিত্য খেলা। জননীরূপে তিনিই বিশ্বপ্রসূতি, আবার ধাত্রীরূপে তিনিই বিশ্বধাত্রী।”[৭]

দেবীর নানাবিধ অলঙ্কার ঐশ্বর্যের প্রতীক যা একত্রে অষ্টপ্রকার বিভূতি এবং প্রভুত্বকে প্রকাশ করে। ত্রিগুনাত্বিকা মা আমাদের অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ড পালিকা ও চালিকা। দেবীর হাতে যে চক্র বর্তমান তা এই ব্রহ্মান্দের প্রতীক যা সর্বক্ষণ ঘূর্ণায়মান, কিন্তু তা সম্ভব শুধুমাত্র দেবীর অঙ্গুলিহেলনে। দেবীর মায়াতেই এই বিশ্বসংসার সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ে হচ্ছে কিন্তু তিনি পরমব্রহ্ম তাই এসবের উর্ধে (ঠিক যেভাবে চক্র তার আঙ্গুল স্পর্শ করে না)। তার ওপর হাতে শঙ্খ, যা শব্দের প্রতীক, শব্দই নাদ, নাদই ব্রহ্ম। তিনি বাক রুপেও নিজেকে ভক্ত প্রানে প্রকাশ করেন। দেবীর হাতের ধনুক হোল অসিম চৈতন্য শক্তির প্রতীক যা আদ্যা জননীর প্রকাশ আবার সেই চেতনা যখুন ক্রিয়াশীল হয়ে মানুষের লক্ষ প্রাপ্তি, সমাজ কল্যান ইত্যাদি কাজে উদ্ভূত হয়, তাই তির বা বাণ। এই ছিলা টিও জগত জননী বেঁধে দেন সাধু জনের অন্তরে।

আমাদের খুব প্রিয় মহিষাসুর মর্দিনী আকাশবাণীতে প্রচারিত হওয়ার সুরুতে "সিংহস্থা শশিশেখরা...." এই ধ্যান মন্ত্র শুনলে দেখা যাবে যে এটিও দুর্গার জগদ্ধাত্রী রুপের বর্ণনা। যদিও এখানে দেবীকে মরকত বর্ণা বলা হয়েছে। তবে বিশ্বসার তন্ত্র মতে দেবীর উভয়ে ধ্যান মন্ত্রেই পূজা বিধি এক। বিভিন্ন পৌরাণিক সুত্রে দেবী দুর্গাকে দূর্বা-শ্যামা বলা হয়েছে। দেবী ভাগবতের ভুবনেশ্বরীর সাথে তন্ত্র মতে দুর্গার সাদৃশ্য দেখা যায়ে। বিরল হলেও তন্ত্রোক্ত কিছু পূজার শুরুতে কামিনী দেবীর আহ্বান করার প্রথা দেখা যায়ে, ধ্যান মন্ত্রে তিনিও জগদ্ধাত্রী দুর্গা রুপেই প্রতিভাত। আগম প্রসিদ্ধ মূর্তি রুপা সর্বসিদ্ধিদাত্রি মহাশক্তি সাধনার মুল প্রাপ্তি।

করীন্দ্রাসুর[সম্পাদনা]

দেবীবাহন সিংহের পদতলে করীন্দ্রাসুর

ধ্যান বা স্তবমন্ত্রে উল্লেখ না থাকলেও জগদ্ধাত্রী প্রতিমায় বাহন সিংহের পদতলে একটি হস্তীমুণ্ড থেকে। দেবীর ধ্যানে 'দ্বীপ'-এর উল্লেখ পাওয়া যায়ে, তবে 'দ্বিপ'()হাতি)-এর নয়ে, কিন্তু বহু পুরনো পুঁথিতে কিন্তু 'ি' এবং 'ী' কে স্থান বিনিময় করতে দেখা যায়ে, তাই হয়ত এই হাতি দেবীর পদতলে স্থান পেয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, জগদ্ধাত্রী দেবী করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ মহাহস্তীরূপী অসুরকে বধ করেছিলেন। এই কারণে দেবী জগদ্ধাত্রী করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী নামে পরিচিত। রামকৃষ্ণ পরমহংসের ভাষায়, “মন করীকে যে বশ করতে পারে তারই হৃদয়ে জগদ্ধাত্রী উদয় হন।... সিংহবাহিনীর সিংহ তাই হাতীকে জব্দ করে রেখেছে।” স্বামী নির্মলানন্দের মতে, “যে-কোনো সাধনায় মনকে সংযত করে বশে আনা সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। আমাদের মন মত্ত করী, মন-করীকে বশ করতে পারলে সাধনায় সিদ্ধিলাভ অবশ্যম্ভাবী।... মত্ত মন-করীকে বশ করে সাধক-হৃদয়ে জগদ্ধাত্রীর প্রতিষ্ঠায়ই জগদ্ধাত্রী-সাধনার সার্থকতা, পূজার পরিসমাপ্তি।”[৮] করীন্দ্রাসুর এর বর্ণনা ওই নামে না থাকলেও চণ্ডীতে উল্লেখ আছে মহিষাসুর এক মহাহস্তি রুপে দেবীকে আক্রমণ করে এবং দেবী তার মুণ্ড চ্ছেদ করেন, তখন সে এক পুরুশ রুপে অবতীর্ণ হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, মহালক্ষ্মী দেবী তাকে তির বিদ্ধ করেন। অস্ত্র হিসেবে তির ধনুক দেবির এই মূর্তিতে বর্তমান।।

জগদ্ধাত্রী পূজা[সম্পাদনা]

মধ্য কলকাতার একটি পূজামণ্ডপে জগদ্ধাত্রীর মহাষ্টমীপূজা

দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার ঠিক একমাস পর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে। কাত্যায়নীতন্ত্র–এ কার্তিকী শুক্লা নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আবির্ভূত হওয়ার কথা আছে। দুর্গাকল্প–এ আছে:

কার্তিকে শুক্লপক্ষেঽহনি ভৌমবারে জগৎপ্রসূঃ।
সর্বদেবহিতার্থায় দুর্বৃত্তশমনায় চ।।
আবিরাসীৎ জগচ্ছান্ত্যৈ যুগাদৌ পরমেশ্বরী।।[৯]

-দেবগণের হিত, দুর্বত্তের প্রশমন এবং জগতের শান্তিবিধানের জন্য যুগের প্রারম্ভে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের মঙ্গলবারে পরমেশ্বরী (জগদ্ধাত্রী) আবির্ভূতা হলেন।

কালবিবেক গ্রন্থে পূজার বিধান প্রসঙ্গে শূলপাণি লিখছেন:

কার্তিকোঽমলপক্ষস্য ত্রেতাদৌ নবমেঽহনি।
পূজয়েত্তাং জগদ্ধাত্রীং সিংহপৃষ্ঠে নিষেদূষীম্।।

-ত্রেতাযুগের প্রারম্ভে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে সিংহপৃষ্ঠে সমাসীনা দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজা করিবে।

জগদ্ধাত্রী পূজা তান্ত্রিক পূজা। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী – এই তিন দিন জগদ্ধাত্রীর পূজা হয়ে থাকে। তবে অনেকে নবমীর দিন তিন বার পূজা করে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পূজা সম্পন্ন করেন। কোথাও কোথাও প্রথম বা দ্বিতীয় পূজার পর কুমারী পূজারও আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার ন্যায় জগদ্ধাত্রী পূজাতেও বিসর্জনকৃত্য বিজয়াকৃত্য নামে পরিচিত। এমনকি পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণাম মন্ত্রসহ পূজার অনেক মন্ত্রও দুর্গাপূজার অনুরূপ।

সংস্কৃত ভাষায় ‘জগদ্ধাত্রী স্তোত্রং[সম্পাদনা]

ওঁ দূং আধারভূতে চাধেয়ে ধৃতিরূপে ধুরন্ধরে ।

ধ্রুবে ধ্রুবপদে ধীরে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥১॥

শিবাকারে শক্তিরূপে শক্তিস্থে শক্তিবিগ্রহে ।

শাক্তাচারপ্রিয়ে দেবি জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥২॥

জয়দে জগদানন্দে জগদেকপ্রপূজিতে ।

জয় সর্বগতে দুর্গে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥৩॥

সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মরূপে চ প্রাণাপানাদিরূপিণি ।

ভাবাভাবস্বরূপে চ জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥৪॥

কালাদিরূপে কালেশে কালকালবিভেদিনি ।

সর্বস্বরূপে সর্বজ্ঞে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥৫॥

মহাবিঘ্নে মহোৎসাহে মহামায়ে বরপ্রদে ।

প্রপঞ্চসারে সাধ্বীশে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥৬॥

অগম্যে জগতামাদ্যে মাহেশ্বরি বরাঙ্গনে ।

অশেষরূপে রূপস্থে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥৭॥

তীর্থযজ্ঞতপোদানযোগসারে জগন্ময়ি ।

ত্বমেব সর্বং সর্বস্থে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥৮॥

দয়ারূপে দয়াদৃষ্টে দয়ার্দ্রে দুঃখমোচনি ।

সর্বাপত্তারিকে দুর্গে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥৯॥

অগম্যধামধামস্থে মহাযোগীশহৃৎপুরে ।

অমেয়ভাবকূটস্থে জগদ্ধাত্রি নমোঽস্তু তে ॥১০॥

যঃ পঠেৎ স্তোত্রমেতত্তু পূজান্তে সাধক উত্তমঃ।

সর্ব্ব পাপৎ বিনির্মুক্তঃ পূজা ফলং অবামুয়াৎ ॥১১॥

॥ইতি শ্রীজগদ্ধাত্রীকল্পে জগদ্ধাত্রী স্তোত্রং সমাপ্তম্॥

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বারোইয়ারি প্রতিমাখানি প্রায় বিশ হাত উঁচু – ঘোড়ায় চড়া হাইল্যান্ডের গোরা, বিবি, পরী ও নানাবিধ চিড়িয়া, শোলার ফল ও পদ্ম দিয়ে সাজানো; মধ্যে মা ভগবতী জগদ্ধাত্রী-মূর্তি – সিঙ্গির গায়ে রূপুলি গিলটি ও হাতী সবুজ মখমল দিয়ে মোড়া। ঠাকরুণের বিবিয়ানা মুখ, রং ও গড়ন আদল ইহুদী ও আরমানী কেতা, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ও ইন্দ্র দাঁড়িয়ে জোড়হাত ক’রে স্তব কচ্চেন। প্রতিমের উপরে ছোট ছোট বিলাতী পরীরা ভেঁপু বাজাচ্চে – হাতে বাদশাই নিশেন ও মাঝে খোড়াসিঙ্গিওয়ালা কুইনের ইউনিফরম ও ফ্রেষ্ট!... বেলা আটটার সময় যাত্রা ভাঙলো, একজন বাবু মাতাল, পাত্র টেনে বিলক্ষণ পেকে যাত্রা শুনছিলেন, যাত্রা ভেঙে যাওয়াতে গলায় কাপড় দিয়ে প্রতিমে প্রণাম কত্তে গেলেন, (প্রতিমে হিন্দুশাস্ত্রসম্মত জগদ্ধাত্রী-মূর্তি)। কিন্তু প্রতিমার সিঙ্গি হাতীকে কাম্‌ড়াচ্চে দেখে, বাবু মহাত্মার বড়ই রাগ হলো, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাবু করুণার সুরে – ‌

তারিণী গো মা কেন হাতীর উপর এত আড়ি।
মানুষ মেলে টের্‌টা পেতে তোমায় বেতে হতো হরিণবাড়ী।
সুর্কি কুটে সারা হোতো, তোমার মুকুট যেত গড়াগড়ি।।
পুলিসের বিচারে শেষে সঁপতো তোমায় গ্র্যান্‌বুড়ি।
সিঙ্গি মামা টের্‌টা পেতেন ছুট্‌তে হতো উকীলবাড়ী।।

গান গেয়ে, প্রণাম ক’রে চলে গেলেন। [১০]

কালীপ্রসন্ন সিংহ
হুতোমপ্যাঁচার নক্সা (১৮৬৪)

জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট উৎসব হলেও, দুর্গা বা কালীপূজার তুলনায় এই পূজার প্রচলন অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে ঘটে। অষ্টাদশ শতকে নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় তার রাজধানী কৃষ্ণনগরে এই পূজার প্রচলন করার পর এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। [১১] যদিও দেবী জগদ্ধাত্রী যে বাঙালি সমাজে একান্ত অপরিচিত ছিলেন না, তার প্রমাণও পাওয়া যায়। শূলপাণি খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে কালবিবেক গ্রন্থে কার্তিক মাসে জগদ্ধাত্রী পূজার উল্লেখ করেন। পূর্ববঙ্গের বরিশালে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে নির্মিত জগদ্ধাত্রীর একটি প্রস্তরমূর্তি পাওয়া যায়। বর্তমানে এই মূর্তিটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ সংগ্রহশালার প্রত্নবিভাগে রক্ষিত। [১২] কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালের আগে নির্মিত নদিয়ার শান্তিপুরের জলেশ্বর শিবমন্দির ও কোতোয়ালি থানার রাঘবেশ্বর শিবমন্দিরের ভাস্কর্যে জগদ্ধাত্রীর মূর্তি লক্ষিত হয়। তবে বাংলার জনসমাজে কৃষ্ণচন্দ্রে পূর্বে জগদ্ধাত্রী পূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি। কেবল কিছু ব্রাহ্মণগৃহে দুর্গাপূজার পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হত। [১২]

কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পূজা[সম্পাদনা]

কৃষ্ণনগর রাজবাটীর জগদ্ধাত্রী পূজা

নদিয়া জেলার সদর কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়। কিংবদন্তি অনুসারে নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজঙ্গ রাজার নিকট থেকে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন। নজরানা দিতে অপারগ হলে তিনি রাজাকে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে (মতান্তরে মুঙ্গেরে) নিয়ে যান। মুক্তির পর নদীপথে কৃষ্ণনগরে প্রত্যাবর্তনের সময় ঘাটে বিজয়াদশমীর বিসর্জনের বাজনা শুনে তিনি বুঝতে পারেন সেই বছর দুর্গাপূজার কাল উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপূজার আয়োজন করতে না পেরে রাজা অত্যন্ত দুঃখিত হন। সেই রাতে দুর্গা জগদ্ধাত্রীর রূপে রাজাকে পরবর্তী শুক্লানবমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী দুর্গার পূজা করার আদেশ দেন।অন্য এক মতে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা ১৭৬৬ সালে।[১৩] কেউ কেউ আবার কৃষ্ণচন্দ্রের প্রপৌত্র গিরিশচন্দ্রকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবর্তক মনে করেন।[১২] কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দরজা জগদ্ধাত্রী পূজার সময় আজও খোলা থাকে। পূজা পুরনো প্রথা মেনে হয় শুধুমাত্র নবমী তিথিতে।

১৭৭২ সালে রাজবাড়ির দেখাদেখি কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়ায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রজারা জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু করেন। বুড়িমার পূজা নামে পরিচিত এই পূজা শুরু হয়েছিল ঘটে ও পটে। প্রথম দিকে স্থানীয় গোয়ালারা দুধ বিক্রি করে এই পূজার আয়োজন করতেন। ১৭৯০ সাল নাগাদ গোবিন্দ ঘোষ ঘটপটের পরিবর্তে প্রতিমায় জগদ্ধাত্রী পূজার সূচনা করেন। এখানকার প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল প্রায় সাড়ে সাতশো ভরি সোনায় গয়নায় দেবীপ্রতিমার অলংকারসজ্জা। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দাদের মতে এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রতা; তার নিকট সকল মনোষ্কামনাই পূর্ণ হয়।[১৩]

এছাড়া কৃষ্ণনগরের উল্লেখযোগ্য বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পূজাগুলি হল প্রীতিসম্মেলনী, বালকেশ্বরী, মালোপাড়া, হাতারপাড়া, উকিলপাড়া, ষষ্ঠীতলা, বউবাজার, নেদেরপাড়া, বাঘাডাঙা, পাত্রমার্কেট, কৃষ্ণনগর স্টেশন চত্বর, বেজিখালি, চকেরপাড়া, বাগদিপাড়া, মাঝেরপাড়া, ঘূর্ণি, হরিজনপল্লি, তাঁতিপাড়া, কালীনগর ইত্যাদি।[১৩] বর্তমানে কৃষ্ণনগরে বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পূজা হয় দুই শতেরও বেশি। [১২]

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা[সম্পাদনা]

পালপাড়া সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা, চন্দননগর

চন্দননগরের চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজার প্রবর্তক তর্কালঙ্কার শ্রীমান শুভেন্দু মাঝি । জানা যায়, জাতিস্মর শুভেন্দু তাঁর তৃতীয় পূর্বজন্মে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সাথে ছিলেন সরকারের দেওয়ান। প্রায় আড়াইশো বছর আগে, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পূজা দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচুপাটিতে জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন করেন। লক্ষ্মীগঞ্জ প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরেই এই পূজার সূচনা। এই পূজা চন্দননগরে আদি পূজা নামে পরিচিত। যদিও এখন চৌধুরীদের উত্তরপুরুষের নামে পূজার সংকল্প হয়, মাঝি বাবু বা তার অবদানের কথা সকলে ভুলে গেছেন !এখানকার প্রতিমার বৈশিষ্ট্য হল সনাতনরীতির প্রতিমায় সাদা সিংহ এবং বিপরীতমুখী অবস্থানে হাতি। শোনা যায়, বিসর্জনের সময় আদি প্রতিমা জলে পড়লেই শুশুক বা সাপের দেখা পাওয়া যায়। স্থানীয় বিশ্বাসে এই দেবী অত্যন্ত জাগ্রতা। লক্ষ্মীগঞ্জ কাপড়েপট্টির জগদ্ধাত্রী পূজা চন্দননগরে দ্বিতীয় প্রাচীনতম পূজা। ১৭৬৮ সালে চাউলপট্টির চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় কাপড় ব্যবসায়ী শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায় (মতান্তরে শশধর) রীতিমতো চাঁদা তুলে এই পূজা প্রবর্তন করেন। এই অঞ্চলের অপর দুটি পূজা হল লক্ষ্মীগঞ্জ চৌমাথা (স্থাপিত ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দ) ও লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের (স্থাপিত ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ) পূজা। উত্তর চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টি, কাপড়েপট্টি, চৌমাথা ও বাজার – এই চার পূজাতেই সিংহের রং সাদা। উত্তর চন্দননগরের অন্যান্য বড়ো জগদ্ধাত্রী পূজাগুলি হল চন্দননগর বাগবাজার (স্থাপিত ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দ), খলিসানী কলপুকুরধার, বউবাজার শীতলাতলা, খলিসানী বউবাজার, বাগবাজার চৌমাথা, বিদ্যালঙ্কার, পালপাড়া, বিবিরহাট উত্তরাঞ্চল, বিবিরহাট চড়কতলা তেমাথা, হরিদ্রাডাঙা, হেলাপুকুরধার, নাড়ুয়া, কাঁটাপুকুর, কাঁটাপুকুর চৌমাথা, বোড়ো কালীতলা, বোড়ো পঞ্চাননতলা, বোড়ো চাঁপাতলা, বোড়ো দিঘির ধার, বোড়ো তালডাঙা ইত্যাদি।[১৩]

দক্ষিণ চন্দননগরের বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পূজাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য মানকুণ্ডু সার্বজনীন, দশভুজাতলা, মানকুণ্ডু নতুনপাড়া, নিয়োগী বাগান, সার্কাস মাঠ, তেমাথা, অম্বিকা অ্যাথলেটিক ক্লাব, মরান রোড, গোন্দলপাড়া মনসাতলা, সাতঘাটা, গোন্দলপাড়া চারমন্দিরতলা, বেশোহাটা, লিচুতলা হাজিনগর, হাটখোলা দৈবকপাড়া, মনসাতলা, ভুবনেশ্বরীতলা, নোনাটোলা, বড়বাজার, পাদ্রিপাড়া, লালবাগান, ড্যুপ্লেক্সপট্টি, শ্রমিকপল্লি, সুভাষ জাগরণ সংঘ তেমাথা, অরবিন্দ সংঘ, বারাসত দক্ষিণ, বারাসত গেট। দক্ষিণ চন্দননগরের হালদারপাড়ার আদিপুজো অশ্বত্থতলার বুড়িমার পূজা নামে পরিচিত। এই পূজা লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টি ও কাপড়েপট্টির পূজার সমসাময়িক বলে মনে করা হয়।[১৩]

চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির অনুমোদিত তিনশের অধিক পূজা হয় ।

চন্দননগরের আলোকসজ্জা , দেবীমূর্তি ও শোভাযাত্রা বিশ্বখ্যাত।

প্রতি বছর লটারির মাধ্যমে শোভাযাত্রার জন্য 75-80টি পূজা কমিটিকে বেছে নেওয়া হয়।

শান্তিপুরে জগদ্ধাত্রী পুজো

এই কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ছিলেন গিরীশচন্দ্র রায়। তিনি নদীয়ার শান্তিপুরের কাছে ১০৮ঘর ব্রাহ্ম পরিবারকে থাকতে দিয়ে একটি গ্রামপত্তন করেন যার নাম “ব্রহ্মশাসন”। তার পর থেকে শুরু হয় শান্তিপুরে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন। কথিত আছে শান্তিপুরের সূত্রাগড় এর পীরের হাট এলাকায় প্রথম জগদ্ধাত্রী পূজার প্রচলন করা হয়েছিল কৃষ্ণনগরের রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে, সেই কারণে এখনো সেখানে প্রতিটি পূজায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নামে সংকল্প করাহয় I বর্তমানে সূত্রাগড় এলাকায় প্রায় পনেরোটি উল্লেখযোগ্য বারোয়ারি জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে I

জয়রামবাটীর জগদ্ধাত্রী পূজা[সম্পাদনা]

বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী গ্রামে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সহধর্মিণী সারদা দেবীর জন্মভিটা র জগদ্ধাত্রী পূজা বিশেষ প্রসিদ্ধ। পূজা উপলক্ষে জয়রামবাটীতে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়। সারদা দেবীর পৈতৃক বাড়িতে এই পূজার আয়োজন করে রামকৃষ্ণ মিশন। ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে (১২৮৪ বঙ্গাব্দ)[১৪] সারদা দেবীর পিতৃগৃহে প্রথম জগদ্ধাত্রী পূজার আয়োজন করেছিলেন তার জননী শ্যামাসুন্দরী দেবী। কিংবদন্তি অনুসারে, প্রতি বছর শ্যামাসুন্দরী দেবী প্রতিবেশী নব মুখুয্যের বাড়ির কালীপূজা উপলক্ষে নৈবেদ্যের চাল পাঠাতেন। ওইবছর কোনো বিবাদের কারণে নব মুখুজ্যে চাল নিতে অস্বীকার করেন। নৈবেদ্যদানে অসমর্থ হয়ে শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত মর্মাহত হন। সেই রাতেই তিনি দেবী জগদ্ধাত্রীকে স্বপ্নে দেখেন এবং তার স্বপ্নাদেশে ওই চালে জগদ্ধাত্রী পূজার আয়োজন করেন। প্রথম বছর বিসর্জনের দিন বৃহস্পতিবার ছিল। তাই সারদা দেবী লক্ষ্মীবারে বিসর্জনে আপত্তি করেছিলেন। পরদিন সংক্রান্তি ও তার পরদিন মাস পয়লা থাকায় ওই দুই দিনও বিসর্জন দেওয়া যায়নি। বিসর্জন হয় চতুর্থ দিনে। আরও কথিত আছে যে, পরের বছর সারদা দেবী জগদ্ধাত্রী পূজা বন্ধ করে দিতে চাইলে দেবী জগদ্ধাত্রী তাকে স্বপ্নাদেশে পূজা বন্ধ করা থেকে নিরস্ত করেন। এরপর প্রথম চার বছর পূজা হয়েছিল শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে; দ্বিতীয় চার বছর সারদা দেবীর নামে এবং তৃতীয় চার বছর তার কাকা নীলমাধব মুখোপাধ্যায়ের নামে। বারো বছর পর সারদা দেবী পুনরায় পূজা বন্ধ করবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শোনা যায়, এই বারও জগদ্ধাত্রীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি নিরস্ত হন।[১৫]

জীবদ্দশায় প্রতি বছরই জগদ্ধাত্রী পূজায় উপস্থিত থাকতেন সারদা দেবী। পূজা পরিচালনার জন্য তিনি সাড়ে দশ বিঘার কিছু বেশি জমি দেবোত্তর সম্পত্তিরূপে দিয়ে যান। ১৯১৯ সালে সারদা দেবী এই পূজায় শেষবার উপস্থিত ছিলেন। পরের বছর তিনি প্রয়াত হন।[১৬]

প্রথম পূজার ঐতিহ্য অনুযায়ী আজও শুক্লা নবমীতে মূল পূজার পরও দুই দিন প্রতিমা রেখে দিয়ে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। দুর্গাপূজার মতোই পূজার সঙ্কল্প হয় সারদা দেবীর নামে। জগদ্ধাত্রীর প্রতিমার পাশে জয়া-বিজয়া ও নারদ মুনির প্রতিমা থাকে। নবমীতে ষোড়শোপচারে পূজা, তিন বার চণ্ডীপাঠ ও মাতৃমন্দিরে দরিদ্রনারায়ণ সেবা হয়। দশমীর দিন দশোপচারে পূজা হয়। এই দিন সন্ধ্যারতির পর যাত্রাগানের আসর বসে। একাদশীর দিনও দশোপচারে পূজা ও বিসর্জনকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই দিন ধুনুচি নৃত্য, কর্পূরারতি, কনকাঞ্জলি প্রদান প্রভৃতিও অনুষ্ঠিত হয়। ধুনুচি নাচের পর বাদ্যঘণ্টা ও শোভাযাত্রা সহকারে মায়ের দিঘিতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনে আশ্রমবাসী, অতিথি এবং গ্রামবাসী সকলে অংশ নেন। পূজা উপলক্ষে আশ্রমপ্রাঙ্গনে মেলাও বসে।[১৬]

বাঁকুড়া জেলার প্রথম সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো

বাঁকুড়া জেলার সর্বপ্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করে ত্রিনয়নী জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি । ২০১৭ সালে প্রথম পুজো শুরু করলেও ২০১৯ এ তাদের প্রথম কমিটি গঠন হয় । পুজোটি বাঁকুড়া শহরের প্রতাপবাগান এলকার নিকট হয়ে থাকে । দেবী জগদ্ধাত্রী এখানে বড়মা নামে পরিচিতা । কার্তিক মাসের (কখনও বা অগ্রহায়ণ) শুক্লা নবমী তিথীতে ষোড়শোপচারে ত্রিকালীন পূজা এবং দশমীর দিন দশোপচারে পূজা হয় । একাদশীর দিন ধুনুচি নাচ , বাদ্যঘণ্টা ও শোভাযাত্রা সহকারে মায়ের প্রতিমা পদ্মপুকুরে নিরঞ্জন হয়। এই পুজো কমিটির মূল আকর্ষণ হলো একটি নির্দিষ্ট পাড়াতে পুজো হলেও বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের এই পুজোর সাথে যুক্ত । তাদের কথায় "পাড়া যার যার বড়মা সবার" । পুজোর সাথে সাথে এই কমিটি বিভিন্ন সামাজিক কাজও করে থাকে । ২০২০ সালের জগদ্ধাত্রী পুজোতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিনয়নী জগদ্ধাত্রী পূজা র প্রধান অতিথী হিসেবে মণ্ডপে উপস্থিত ছিলেন । ত্রিনয়নী জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি ধীরে ধীরে বাঁকুড়া বাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ।

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Hindu Gods and Goddesses, Swami Harshananda, Sri Ramakrishna Math, Chennai, p. 123
  2. বাঙ্গালা ভাষার অভিধান, জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস সংকলিত ও সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা
  3. প্রবন্ধ জগদ্ধাত্রী-তত্ত্ব : পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৭৭-৭৮
  4. কেন উপনিষদ, তৃতীয়-চতুর্থ খণ্ড
  5. প্রবন্ধ জগদ্ধাত্রী-তত্ত্ব : পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৭৬-৭৭-এ উল্লিখিত শাস্ত্রউদ্ধৃতিগুলি দ্রষ্টব্য
  6. প্রবন্ধ জগদ্ধাত্রী-তত্ত্ব : পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৭৯
  7. দেবদেবী ও তাঁদের বাহন, স্বামী নির্মলানন্দ, প্রণব মঠ, কলকাতা, পৃষ্ঠা ৩০৩-০৫
  8. প্রবন্ধ জগদ্ধাত্রী-তত্ত্ব : পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৮০
  9. শব্দকল্পদ্রুম ২য় খণ্ড, পরিশিষ্ট, পৃষ্ঠা ১৮২-৮৪
  10. হুতোমপ্যাঁচার নক্সা: বসুমতী কর্পোরেশন লিমিটেড (কলকাতা) সংস্করণ, পৃ. ২৫-২৬ ও ২৯
  11. পৌরাণিকা : বিশ্বকোষ হিন্দুধর্ম, প্রথম খণ্ড, অমলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ফার্মা কেএলএম প্রাঃ লিঃ, পৃষ্ঠা ৫৬২
  12. হারাধন চৌধুরীর প্রতিবেদন দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে অতুলনীয়া কেন?, বর্তমান (রবিবার), ২ নভেম্বর, ২০০৮
  13. চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় কী দেখবেন, অরুণ মুখোপাধ্যায়, সাপ্তাহিক বর্তমান, ২৪ অক্টোবর, ২০০৯
  14. সারদা দেবীর জীবনীকার স্বামী গম্ভীরানন্দ পূজা প্রবর্তনের সময়কাল সম্পর্কে লিখেছেন, “এই জগদ্ধাত্রী পূজার কাল সম্বন্ধে নিঃসংশয় নহি। কেহ কেহ বলেন, ইহা ১২৮৪ বঙ্গাব্দের ঘটনা।” (শ্রীমা সারদা দেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৫০ (পাদটীকা))
  15. শ্রীমা সারদা দেবী, স্বামী গম্ভীরানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ২০০৪, পৃ. ৫০
  16. শ্রীশ্রীমা সারদা ও জগদ্ধাত্রী পুজো, স্বামী বলভদ্রানন্দ, সাপ্তাহিক বর্তমান, ২৪ অক্টোবর ২০০৯

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]