চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের মূল ভবন।
বৌদ্ধ বিহারের ফটক।

চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থান। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত "অনাথ বাজার বৌদ্ধ বিহার"র সম্প্রসারিত স্থায়ী ভূমি হিসেবে ১৮৯৭ সালে খ্রিষ্টাব্দে এই বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিহার বাংলাদেশের বৌদ্ধদের অন্যতম পূণ্যস্থান হিসাবে বিবেচিত হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

শতাব্দী পুরাতন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির (তৎকালীন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সমিতি) প্রথম সভাপতি শ্রীমৎ উ. গুনামেজু মহাথের এবং সাধারণ সম্পাদক নাজিরকৃষ্ণ চৌধুরী বিহার স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। প্রাথমিকভাবে ভক্ত এবং পূজারীদের আর্থিক সহযোগিতায় ভবনটির একতলা নির্মিত হয়। ১৯০৩ সালে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লাস্থ রংমহল পাহাড়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের জন্য মাটি খননকালে একটা পুরাতন বৌদ্ধ মূর্তি পাওয়া যায়। বিহারের সে সময়ের অধ্যক্ষ অগ্‌ গমহা পণ্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের এর তৎপরতার কারণে মূর্তিটি বঙ্গীয় সরকার এ বিহারে প্রদান করে। বিহারের মূল ভবনটির পাশেই অপর একটি মন্দিরে মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। এটি “বুড়াগোঁসাই মন্দির” নামে পরিচিত।[১][২]

চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষবৃন্দ[সম্পাদনা]

১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই বিহারের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন অগ্‌ গমহা পণ্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের, দ্বিতীয় অধ্যক্ষ শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের, তৃতীয় অধ্যক্ষ অধ্যাপক শীলাচার শাস্ত্রী, চতুর্থ অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন শ্রীমৎ সুবোধিরত্ন মহাথের, পঞ্চম অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতিঃপাল মহাথের এবং ষষ্ঠ অধ্যক্ষ আছেন শ্রীমৎ জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির। ২০০৫ সালে বিহারে প্রবেশের দুই পাশে অধ্যক্ষ শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের এবং অধ্যক্ষ অধ্যাপক শীলাচার শাস্ত্রী মহাস্থবিরের স্মৃতিমন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়াও বিহারের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গৌতম বুদ্ধের আসনের নিচে দুইপাশে পণ্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথের এবং শ্রীমৎ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাথের এর আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে।[৩]

বিহারের যা কিছু উল্লেখযোগ্য[সম্পাদনা]

বিহারের বুড়াগোঁসাই মন্দিরে স্থাপিত গৌতম বুদ্ধের মূর্তি।
বিহারের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গৌতম বুদ্ধের মূর্তি
বিহারের মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গৌতম বুদ্ধের মূর্তি।
বিহার প্রাঙ্গণের বোধিবৃক্ষ।
বিহার প্রাঙ্গণের বোধিবৃক্ষ।

গৌতম বুদ্ধের কেশধাতু[সম্পাদনা]

ত্রিশের দশকে আচার্য শাক্য নামে তিব্বতের এক সন্ন্যাসী চট্টগ্রাম ভ্রমণে আসেন। তিনি তখন কিছুদিনের জন্য বৌদ্ধ বিহারে অবস্থান করেন এবং বিহারের অধ্যক্ষ অগ্‌ গমহা পণ্ডিত-উ-ধম্মবংশ মহাথেরকে বুদ্ধের কেশধাতু প্রদান করেন। অতি দুর্লভ এই কেশধাতুর কিছু অংশ ১৯৫৮ সালে শ্রীলংকায়, ১৯৬৪ সালে জাপানে, ১৯৭৯ সালে থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রদান করা হয়। শ্রীলংকার সরকার ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে বৌদ্ধ সমিতি হতে আবারো কেশধাতু গ্রহণ করে।[২]

অষ্টধাতুর মূর্তি[সম্পাদনা]

থাইল্যান্ড থেকে আনা গৌতম বুদ্ধের দুই প্রধান শিষ্য অগ্রশ্রাবক ধর্মসেনাপতি “সারিপুত্র” এবং ঋষিশ্রেষ্ঠ “মহামোগলায়ন” মহাস্থবিরদ্বয়ের অষ্টধাতুর নির্মিত মূর্তি বুড়াগোঁসাই মন্দিরে স্থাপন করা হয়।[৪]

বোধিমন্ডপ[সম্পাদনা]

শ্রীলংকার সরকারপ্রদত্ত গৌতম বুদ্ধের স্মৃতিধন্য বোধিবৃক্ষের একটি চারা ১৯৮০ সালের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে রোপণ করা হয়। ১৯৯১ সালে বোধিবৃক্ষের নিচে বোধিমন্ডপ নির্মাণ করা হয়।[৪]

চিন্তামনি গ্রন্থাগার[সম্পাদনা]

চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে বিভিন্ন দূর্লভ পাণ্ডুলিপিসমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার আছে। এটির নাম চিন্তামনি গ্রন্থাগার। এখানে তালপাতার পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে। এই সংগ্রহশালায় আছে পালি ভাষা, বর্মী ভাষা, সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রাচীন ধর্মীয় শাস্ত্র। শাস্ত্রীয় সাহিত্য এবং তালপাতায় রচিত শিল্পকর্ম এই গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করেছে।[৩]

অন্যান্য[সম্পাদনা]

বৌদ্ধ বিহারে এছাড়াও আছে বুড্ডিষ্ট হোস্টেল, ধম্মবংশ ইন্সটিটিউট, চিকিৎসা কেন্দ্র ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. চট্টগ্রাম মহানগরীর ইতিহাস ঐতিহ্য, শতদল বড়ুয়া, পৃ ১০৯, ২০০৬, নূর প্রকাশনী, চট্টগ্রাম।
  2. বিশ্বমৈত্রী, বিশেষ সংখ্যা, সম্পাদকঃ সুকুমার বড়ুয়া, পৃ ১৮, ১৮ জুলাই ২০০৭, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি।
  3. চট্টগ্রাম মহানগরীর ইতিহাস ঐতিহ্য, শতদল বড়ুয়া, পৃ ১১৫, ২০০৬, নূর প্রকাশনী, চট্টগ্রাম
  4. চট্টগ্রাম মহানগরীর ইতিহাস ঐতিহ্য, শতদল বড়ুয়া, পৃ ১১৪, ২০০৬, নূর প্রকাশনী, চট্টগ্রাম

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]