গুয়েতেমালার সংস্কৃতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গুয়াতেমালার একটি সাংস্কৃতিক উৎসব

গুয়েতেমালার সংস্কৃতি-তে মায়া ও স্পেনীয় প্রভাব পড়েছে। এই দুই সংস্কৃতির প্রভাব দরিদ্র মায়ান গ্রামবাসী ও ধনী স্পেনীয় শহরবাসীর মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বিভাজিত।

মায়ান প্রভাব[সম্পাদনা]

গুয়াতেমালা মায়া সভ্যতার কেন্দ্রস্থল। মায়া সভ্যতা একদা পার্শ্ববর্তী বেলিজ, পশ্চিম হন্ডুরাস, এল সালভাদর, ও দক্ষিণ মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে এ সভ্যতার শুরু হয় বলে মনে করা হয়।

আমেরিকার সভ্যতাগুলির মধ্যে মায়া সভ্যতা ছিল অত্যন্ত অগ্রসর। বাণিজ্য ও কৃষি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াও এই সভ্যতার লোকেরা একটি জটিল লিখন পদ্ধতি (মায়ান চিত্রলিপি) এবং অবিশ্বাস্যরকম নিখুঁত পঞ্জিকা উদ্ভাবন করেছিল। বিভিন্ন প্রত্নস্থলের ধ্বংসাবশেষ, যেমন - মানমন্দির, খাবারের গোলা, বিরাট মাঠ, ইত্যাদি দেখে প্রত্নবিদেরা মনে করেন মায়ারা ছিল একটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও সংস্কৃতিবান জাতি।

কলম্বাস-পূর্ব মায়ান সমাজ একগুচ্ছ রাজবংশ শাসন করতেন। মায়াদের প্রাচীন ধর্মে বেশ কিছু দেবতা আছে, এবং এদের মধ্যে ইউম কাক্স বা ভুট্টা দেবতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তিনি উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের উর্বরতা নিয়ন্ত্রণ করেন।

মায়ারা কিচিলা নামের একটি মদও উদ্ভাবন করেছিল। বর্তমান গুয়াতেমালান জনগণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এটি এখনও নিয়মিত পান করে।

স্পেনীয় প্রভাব[সম্পাদনা]

স্পেনীয় কোঙ্কিস্তাদোরদের আবির্ভাবের পর মিশ্র জাতি লাদিনোদের হাতে গুয়াতেমালার ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু আমেরিকার অন্যান্য দেশের মত স্থানীয়দের সম্পূর্ণ উৎখাত না করে এরা খানিকটা অসহজভাবেই পাশাপাশি বসবাস করা শুরু করে। যদিও স্পেনীয় ভাষা সরকারী ভাষায় পরিণত হয় এবং স্কুলগুলিতে তা শেখা বাধ্যতামূলক, বিভিন্ন মায়ান ভাষা কখনোই হারিয়ে যায় নি, বরং আজও গুয়াতেমালার বিভিন্ন অঞ্চলে এগুলিতে মানুষ কথা বলে থাকে।

বস্ত্র[সম্পাদনা]

মায়া জাতির লোকেরা উজ্জ্বল রঙের ইয়্যাম-ভিত্তিক কাপড় পরে থাকেন, যার মধ্যে আছে ঢিলা বা cape, শার্ট, ব্লাউজ ও অন্যান্য পোশাক। প্রতিটি মায়া গ্রাম নিজস্ব বিন্যাসে কাপড় বুনে থাকে, ফলে পরনের কাপড় দেখেই ব্যক্তিটি কোন এলাকার তা বলে দেয়া যায়।

ধর্ম[সম্পাদনা]

১৯৬০-এর আগে রোমান ক্যাথলিক ধর্ম ও আদিবাসী মায়া ধর্ম মিলিয়ে একটি সংকর ধর্ম দেশের সর্বত্র প্রচলিত ছিল। ১৯৬০-এর পরে শহর অঞ্চলে প্রোটেস্টান্ট ধর্ম মূল ধর্মে পরিণত হয়।

মেরুকরণ ও গৃহযুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৬০ সালে ধনী লাদিনো ও দরিদ্র গ্রামীণ মায়ানদের মধ্যে এক দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। লাদিনোরা সামরিক সেনা ও সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে মায়ানদের ক্ষয়ক্ষতি হয় বেশি। গৃহযুদ্ধের কারণে মধ্যবিত্ত ও মধ্যপন্থীরা হয় দল বেছে নিতে কিংবা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।

প্রায় ৩৬ বছর যুদ্ধ ও ১ লাখেরও বেশি লোক মারা যাবার পর ১৯৯৬ সালে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং দেশটির অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হতে শুরু করে। তবে এখনও দুই পক্ষের মধ্যে চরম শত্রুতা বিদ্যমান, যদিও উভয়েই নিজেদেরকে গুয়াতেমালান বলেই পরিচয় দেয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]