খাদিম হুসেন রাজা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

খাদিম হুসেন রাজা একজন পাকিস্তানি মেজর জেনারেল। ১৯৭১ সালে খাদিম রাজা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৪তম ডিভিশনের দায়িত্বে ছিলেন। তার লেখা এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি: ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১ শীর্ষক বইয়ে পাকিস্তানের লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনাসদস্যদের বাঙালি নারীদের ওপর লেলিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন এবং বাঙালি জাতিগোষ্ঠী পরিবর্তিত হয়ে নতুন জাতিগোষ্ঠী সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বাঙালি নারীদের ওপর সেনাদের নির্যাতন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তার বর্ণনা আছে।[১][২] [৩]

এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি: ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১[সম্পাদনা]

খাদিমের লেখা এ বিষয়গুলো সত্য ঘটনা বলেই সম্ভবত তিনি তার মৃত্যুর পর তা বই আকারে প্রকাশ করতে বলেছিলেন। পাকিস্তানের দৈনিক দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ৮ জুলাই ওই বই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ৭ জুলাই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস বইটি প্রকাশ করে।[১][২][৩]

মেজর জেনারেল খাদিম হুসেন রাজা বইটিতে মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের নির্মম অত্যাচারের শুধু সবিস্তার চাক্ষুষ বিবরণই নয়, সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের কোন জেলায় কোন কোন কর্মকর্তা গণহত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তারও স্বীকারোক্তি রয়েছে।

খাদিম হুসেন রাজা পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডার জেনারেল টিক্কা খান প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ ঘোষণার জন্য’ শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বসমক্ষে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিলেন টিক্কা। বন্ধু মেজর জেনারেল রহিম খানের অত্যাচারের কথাও বর্ণনা করেছেন তিনি। রাজা লিখেছেন, “বন্ধু হলেও রহিম সুযোগ পেলেই আমাকে ভর্ৎসনা করতো। তার বক্তব্য ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা একেবারেই কাপুরুষ। অনেক আগেই তাদের শায়েস্তা করা উচিত ছিল।

জেনারেল নিয়াজি পূর্ব পাকিস্তানের নারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে খান সেনাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ আছে। নির্দেশ অমান্য করায় কোমরবন্ধ থেকে পিস্তল বের করে এক বাঙালি কর্মকর্তাকে গুলি করেছিলেন নিয়াজি। বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, যুদ্ধের শেষ দিকে ঢাকায় ৯০ হাজার পাক সেনাসহ ভারতের ইস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকবের কাছে আত্মসমর্পণের কিছু দিন আগে নিয়াজি লেখকের কাছে তার পূর্ব পাকিস্তানের বান্ধবীদের ফোন নম্বর চেয়েছিলেন।[১][২][৩]

বইটি পাকিস্তানে প্রকাশিত হওয়ার পর অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে ইসলামাবাদ। এ অবস্থায় সরকার বইটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ছাড়া বইটি নিষিদ্ধ করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।[২][৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. নারীদের ওপর সেনা লেলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন নিয়াজি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],প্রথম আলো ডেস্ক, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৫-০৭-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  2. ‘বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিলেন টিক্কা’ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ জুলাই ২০১২ তারিখে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৪-০৭-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  3. পাক সেনার বইয়ে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের স্বীকারোক্তি[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], রক্তিম দাশ, ব্যুরো চিফ, কলকাতা, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। প্রকাশের তারিখ: ১৪-০৭-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।