কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তিবিদ্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তিন স্তরের কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তিবিদ্যা

কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তিবিদ্যা (ইংরেজি: Quantum cryptography) কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান-ভিত্তিক তথ্যগুপ্তিবিদ্যা

প্রাথমিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

আইবিএম-এর টি জে ওয়াটসন রিসার্চ ল্যাবরেটরির কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রকল্পের অন্যতম জনক চার্লস বেনেট ও তাঁর সহকর্মী জন স্মোলিন ও জিল ব্রাসার ১৯৮৯ সালে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের নীতিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে একটি নতুন তথ্যগুপ্তি ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা যায়, এ নিয়ে পরীক্ষা চালান। পরীক্ষাটি ছিল এরকম - কতগুলি প্রোটনকে একটি ৩০ সেমি লম্বা চ্যানেলের মধ্য দিয়ে একটি আলোক-আবদ্ধকারী বাক্সের দিকে চালানো হয়। ফোটনগুলির পোলারায়ন, অর্থাৎ এদের আন্দোলনের দিক, কতগুলি ১ ও ০ মানবিশিষ্ট কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট হিসেবে গণ্য করা হয়। এই কিউবিটের সারিকে কোন বার্তার তথ্যগুপ্তির "চাবি" হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এবং এই চাবির সাহায্যে কোন বার্তাকে সংকেতায়িত বা সংকেতমুক্ত করা সম্ভব। এই বিশেষ কোয়ান্টাম চাবির বৈশিষ্ট্য হল এতে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতির প্রয়োগ ঘটেছে। কেউ যদি এই প্রোটন ধারা দিয়ে গঠিত এই কোয়ান্টাম চাবি উদ্ঘাটন করতে যায়, তবে সে প্রোটনগুলির বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনবে, যা বার্তার প্রেরক ও গ্রাহকের কাছে দৃষ্টিগোচর হবে। এ কারণে নীতিগতভাবে এই কৌশলের মাধ্যমে এমন তথ্যগুপ্তকারী চাবি তৈরি করা সম্ভব যা বাইরের কারও পক্ষে উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়।

কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তায়ন কীভাবে কাজ করে[সম্পাদনা]

প্রথমে প্রেরক একটি লেসার রশ্মি দুইটি মোডের যেকোন একটিতে পোলারায়িত একটি একক ফোটন প্রাপকের কাছে পাঠায়। একটি মোডে ফোটনগুলি উল্লম্ব বা অনুভূমিকভাবে পোলারায়িত হয় (আয়তাকার মোড)। অন্যটিতে এগুলি উল্লম্বের সাথে ৪৫ ডিগ্রী কোণে ডানে বা বামে পোলারায়িত হয় (কর্ণ মোড)।

এরপর প্রেরক, যাকে কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তিবিদ্যার ভাষায় সাধারণত অ্যালিস নামে ডাকা হয়, অনির্দিষ্টভাবে আয়ত বা কর্ণ মোডের যেকোন একটি ব্যবহার করে প্রাপক বা ববের কাছে কতগুলি বিট পাঠায়। বব-ও অনির্দিষ্টভাবে যেকোন একটি মোড ব্যবহার করে বিটগুলি পরিমাপের চেষ্টা করে। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি অনুসারে বব কেবল একটি মোডে বিট পরিমাপ করতে পারে, দুইটি নয়। বব আর অ্যালিসের মোড মিলে গেলেই কেবল বব সঠিক চাবিটি পেতে পারে। সমস্ত ফোটন পরিমাপের পর বব অ্যালিসকে জানায় সে বিটগুলির প্রতিটি পরিমাপ করতে কী কী মোড ব্যবহার করেছে, আর অ্যালিস ববকে জানায় সে কী মোডে প্রতিটি বিট পাঠিয়েছে; কিন্তু বিটগুলির মান তারা একে অপরের সাথে শেয়ার করে না। এভাবে অ্যালিসের সাথে মোড মিলিয়ে বব বিটগুলির সঠিক মান নির্ণয়ে সক্ষম হয়, এবং এই চাবিটি বার্তাকে গোপনকারী কোন অ্যালগোরিদমের ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যদি ইভ নামের কোন ব্যক্তি আড়ি পাততে চেষ্টা করে, সে হাইজেনবার্গের নীতির কারণে কখনোই একই সাথে দুইটি মোড ব্যবহার করতে পারবে না। যদি ইভ ভুল মোডে পরিমাপ করে এবং ববের কাছে বিটগুলি পাঠায়, তবে সেগুলিতে অবধারিতভাবে ভুল থাকবে, এবং অ্যালিস ও বব বিট ও ভুল পরীক্ষা করে তার উপস্থিতি ধরতে পারবে।

ব্যবহারিক বাণিজ্যিকীকরণ[সম্পাদনা]

কোয়ান্টাম তথ্যগুপ্তির বাণিজ্যিকিকরণের সবচেয়ে বড় বাধা ভৌগোলিক দূরত্বের সমস্যা। ফোটন লেসার ও অপটিকাল ফাইবার ব্যবহার করে বেশি দূরে চাবি পাঠানো দুরূহ। তাছাড়া কিউবিট বিবর্ধক বা অ্যামপ্লিফায়ারও ব্যবহার করা যায় না, কেননা তাতে চাবির ফোটনের পোলারায়ন প্রকৃতি পাল্টে যায়। ২০০৩ সালে জেনেভা-ভিত্তিক আইডি কন্তিক ও নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক ম্যাজিক টেকনলজিস ১০ কিমির গুনিতক দূরত্বে কোয়ান্টাম চাবি পাঠানোর প্রযুক্তি বাজারে ছাড়ে। ২০০৪ সালে টোকিওর এনইসি কোম্পানি ১৫০ কিমি দূরত্ব পর্যন্ত কোয়ান্টাম চাবি পাঠাতে সক্ষম হয়।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]