কিংডম অব হেভেন (চলচ্চিত্র)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কিংডম অব হেভেন
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত পোস্টার
পরিচালকরিডলি স্কট
প্রযোজকরিডলি স্কট
রচয়িতাউইলিয়াম মোনাহান
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারহ্যারি গ্রেগসন-উইলিয়ামস
চিত্রগ্রাহকজন ম্যাথিসন
সম্পাদকডডি ড্রন
প্রযোজনা
কোম্পানি
পরিবেশকটুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স
মুক্তি
  • ২ মে ২০০৫ (2005-05-02) (লন্ডন প্রিমিয়ার)
  • ৫ মে ২০০৫ (2005-05-05) (জার্মানি)
  • ৬ মে ২০০৫ (2005-05-06) (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য)
স্থিতিকাল১৪৪ মিনিট[২]
১৯৪ মিনিট (পরিচালকের কাট)
দেশ
  • যুক্তরাজ্য[৩]
  • জার্মানি
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভাষা
নির্মাণব্যয়$১৩০ মিলিয়ন[৪]
আয়$২১১,৬৫২,০৫১[৪]

কিংডম অব হেভেন (ইংরেজি: Kingdom of Heaven) হল ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ঐতিহাসিক এ্যাকশন চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন উইলিয়াম মোনাহান এবং পরিচালনা করেছেন রিডলি স্কট। ছবিটির কাহিনী নির্মিত হয়েছে ১২শ শতকের ক্রুসেড যুদ্ধের পটভূমিতে, যখন বালিয়ান নামক ফরাসি এক রাজপুত্র জেরুসালেমের প্রতিরক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন আয়ুবীয় সুলতান সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে, যিনি খ্রিষ্টান ক্রুসেডারদের কাছ থেকে জেরুসালেমকে পুনুরুদ্ধার করতে হাত্তিনের যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তৎকালীন ইবেলিন সম্রাজ্যের সম্রাটের কনিষ্ঠ পুত্র বালিয়ানের জীবনকে ব্যাপকাকারে কাল্পনিক চিত্রায়নের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।

পটভূমি[সম্পাদনা]

১১৮৪ সাল, ফ্রান্সে বেলিয়ন নামের এক কামার  সম্প্রতি তার স্ত্রীর আত্মহত্যার কারণে শোকসন্তপ্ত। তার গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া একজন ক্রুসেডার ব্যারন (গডফ্রে অফ ইবেলিন) তাকে তার বাবা বলে পরিচয় দেয় এবং তাকে তার সাথে পবিত্র ভূমিতে (জেরুসালেম) ফিরে যেতে বলে। কিন্তু বেলিয়ন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু গডফ্রে যাওয়ার সময় বলে যায় সে যদি পরবর্তীতে মত পরিবর্তন করে তাদের সাথে  আসতে চায় তাবে যেন সে মেসিনার পথে আসে। যে পর্যন্ত মানুষ ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলে সেটাই মেসিনা। তারপর যখন অন্য ভাষায় কথা বলে সেটাই পবিত্র ভূমি। যখন ঐ শহরের যাজক (বেলিয়নের সৎ ভাই) তাকে জানায় যে সে তার স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে তার শিরশ্ছেদ করতে বলেছিলো ( তাদের বিশ্বাসে আত্মহত্যা ক্ষমার ঊর্ধ্বে আর শিরশ্ছেদ করলে সে ব্যক্তি পরকালে ক্ষমা পাবে না)। বেলিয়ান সেকথা শুনে ক্রোধে তাকে হত্যা করেন এবং গ্রাম থেকে পালিয়ে যান।

বেলিয়ন তার বাবার সাথে যোগ দেয় পবিত্রভূমিতে গিয়ে তার নিজের আর স্ত্রীর ক্ষমা ও পরকালীন মুক্তির আশায়। বিশপের নির্দেশে সৈন্যদল বেলিয়নকে আটক করতে যায় কিন্তু গডফ্রে তাদের বাধা দেয়। তারা চলে যায় কিন্তু একটু পরেই আবার তারা আক্রমণ করে। গডফ্রে তীর বিদ্ধ হয় এবং তার দলের অনেকেই মারা যায়।

মেসিনাতে তাদের সাথে গী দ্য লুসিনিয়ঁ নামক একজন টেম্পলার নাইট যে জেরুসালেমের ভবিষ্যৎ রাজা হবে তার সাথে মতবিরোধপূর্ণ সাক্ষাৎ হয়। গডফ্রে বেলিয়ন কে নাইট বানায় এবং তাকে ব্যারন অফ ইবেলিন নামকরণ করে। তাকে জেরুসালেমের রাজার অধীনে কাজ করার এবং অসহায়দের পাশে থাকতে আদেশ করেন। তীরের ক্ষত গডফ্রের মৃত্যু ঘটায়। জেরুসালেমের পথে সমুদ্রযাত্রায় বেলিয়নের জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়ে এবং তীরে তিনি একা বেঁচে ফেরে। সেখানে এক মুসলিম অশ্বারোহী বেলিয়নের ঘোড়া তার নিজের বলে দাবি করে তার সাথে লড়াই করতে নামে এবং সে মারা পরে। বেলিয়ন সে অশ্বারোহীর সাথে থাকা ভৃত্যকে ক্ষমা করে এবং তাকে জেরুসালেমের পথ দেখাতে বলে। ভৃত্য বেলিয়নকে বলে তার এই ক্ষমার দৃষ্টান্ত  তাকে সারাসেনদের থেকে খ্যাতি ও সম্মান বয়ে আনবে।

বেলিয়ন জেরুসালেমের রাজনৈতিক সংঘের সাথে পরিচিত হয়েছিল : কুষ্ঠরোগী রাজা চতুর্থ বল্ডউইন,  জেরুসালেমের মার্শাল টাইবেরিয়াস, রাজার বোন, রাজকুমারী সিবিলা , যিনি সেই গী দ্য লুসিনিয়ঁর স্ত্রী। সিবিলার আগের স্বামীর থেকে একটি ছেলে আছে । গী টেম্পলার নাইটদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে  নৃশংসতা সমর্থন করে এবং মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করতে চায়। রাজা বল্ডউইন এবং সুলতান সালাহউদ্দীনের মধ্যে যে ভঙ্গুর যুদ্ধ বিরতি আছে তা পুরোপুরি ভাঙতে চায়।

বেলিয়ন তার উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ইবেলিনে যায় , সে তার প্রকৌশল জ্ঞান ব্যবহার করে শুষ্ক ও ধূলোময় জমিগুলিতে সেচের ব্যবস্থা করে। যা ইবেলিনবাসীদের জন্য অনেক আনন্দ বয়ে আনে। সিবিলা তার সাথে দেখা করতে যায় এবং তারা দুজন একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে।

১১৮৫ সালে গী এবং তার সহযোগী রেনাল্ড অফ শতিলঁ  একটি সারাসেন কাফেলা অন্যায় ভাবে আক্রমণ করে।  সালাহউদ্দিন পাল্টা আক্রমণ করে রেনাল্ডের দুর্গ কেরাকে। রাজা বল্ডউইনের অনুরোধে বেলিয়ন গ্রামবাসীদের দারুণ রণকৌশলের মাধ্যমে রক্ষা করে যদিও সালাহউদ্দিনের বাহিনী অত্যধিক সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলো । কিন্তু বেলিয়ন বন্দী হয় এবং তার সাথে দেখা হয় সেই ভৃত্যের যাকে সে  মুক্তি দিয়েছিল এই ভুখন্ডে এসেই।  সে ছিলো আসলে সালাহউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রী  ইমাদ আদ-দীন। ইমাদ আদ-দীন বেলিয়নকে তার আগের করুণার জন্য মুক্তি দিয়েছিল। সালাহউদ্দিন তার সেনাবাহিনী নিয়ে কেরাকে অবরোধের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন এবং বল্ডউইন তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যায় যাতে জেরুসালেমের উপর আক্রমণ না হয়। তারা মুসলমানদের পিছু হটা নিয়ে আলোচনা করে এবং বল্ডউইন রেনাল্ডকে শাস্তি দেওয়ার শপথ করে। সালাহউদ্দিন মেনে নেয়। যদিও এই ঘটনাবলির ধকল তাকে দুর্বল করে দেয় যেহেতু কুষ্ঠ তাকে আগেই অনেকটা কাবু করে ফেলেছে।

বেলিয়ন আর সিবিলার পারস্পরিক সম্পর্ক জানতে পেরে বল্ডউইন বেলিয়ানকে বলে সিবিলাকে বিয়ে করতে এবং সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিতে , কিন্তু বেলিয়ন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন কারণ এর জন্য গী এবং তার অনুসারী টেম্পলারদের মেরে ফেলতে হবে। আর সে একজন পরিপূর্ণ নাইট হতে চায় আর তাই সে এরকম অন্যায় হতে দিতে পারে না। কিছুদিন পরে বল্ডউইন মারা যান এবং তার ভাগ্নে, সিবিলার পুত্র,পঞ্চম বল্ডউইন রাজা হয়। সিবিলা তার প্রতিনিধি হিসাবে, সালাহউদ্দিনের সাথে তার ভাইয়ের মত শান্তি বজায় রাখতে চায়। ১১৮৬ সালে, সিবিলা জানতে পারে যে তার পুত্রের ও মামার মতো কুষ্ঠরোগ আছে। তৎকালীন বিশ্বাস ছিলো কুষ্ঠরোগীদের জন্য চিরকালীন অভিশাপ রয়েছে , তাই সিবিলা তার ঘুমন্ত পুত্রের কানের মধ্যে বিষ ঢেলে মেরে ফেলার হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত নেন, তার পরে তিনি তার স্বামী গীর মাথায় মুকুট তুলে দেন এবং গোপনে পুত্রের শোকের জন্য করতে থাকেন।

গী এখন রাজা। সে রেনাল্ডকে মুক্তি দেয়। রেনাল্ডকে বলে তাকে যেন সে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়। রেনাল্ড সালাহউদ্দিন এর বোনকে হত্যা করে গীকে সেই যুদ্ধ এনে দেয় যা গী এতদিন চেয়ে আসছিল । সালাহউদ্দিন দূত পাঠায়,সেই দূতদের মাথা ফেরত পাঠিয়ে গী ১১৮৭ সালে সারাসেনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এবং বেলিয়নকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন,কিন্তু সে কোনমতে বেঁচে যায় । গী তার সৈন্যদল নিয়ে যুদ্ধ করতে যায়। বেলিয়ন তাকে জেরুসালেমের পানির উৎসের কাছা কাছি থাকার পরামর্শ দেয় কারণ পানি না পেলে তারা বেশিদিন যুদ্ধ করতে পারবে না এবং মারা পরবে আর সালাহউদ্দিন ও এটাই চায় কিন্তু গী তা না শুনে সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে যায়।  সারাসেনরা পরবর্তীতে মরুযুদ্ধে ক্লান্ত এবং পানিশূন্য ক্রুসেডারদের ধ্বংস করে ।  সালাহউদ্দিন গীকে বন্দী করে,রেনাল্ডের শিরশ্ছেদ করে এবং জেরুসালেমের পথে যাত্রা করে। জেরুসালেম হেরেছে বলে বিশ্বাস করে টাইবেরিয়াস সাইপ্রাসের দিকে রওনা দিল, তবে বেলিয়ন শহরের লোকদের রক্ষা করার জন্য থেকে যায় এবং শহরের প্রতিটি লড়াই করতে সক্ষম মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য তাদের 'নাইট' করে।  তিন দিন ধরে স্থায়ী শক্তিশালী মুসলমানদের হামলা জেরুসালেমবাসী বেলিয়নের নির্দেশে ও বুদ্ধিমত্তায় মোকাবেলা করে। হতাশ সালাহউদ্দিন বেলিয়নের সাথে আলোচনা করে। বেলিয়ন নিশ্চিত করেন যে সালাহউদ্দিন তাদের আত্মসমর্পণ মেনে নিবে এবং প্রত্যেক খ্রিস্টানকে নিরাপদে যেতে দিবে এবং না মানলে সে শহরটি ধ্বংস করবে। সালাহউদ্দিন জেরুসালেমের বিনিময়ে খ্রিস্টানদের নিরাপদে চলে যেতে দিতে রাজি হন। মুসলমানরা ভাবে যে শহর ধ্বংস হয়ে গেলে হয় যুদ্ধের কোন মানে থাকে না।

শহরে বেলিয়ন যুদ্ধে অপমানিত হওয়া গী দ্য লুসিনিয়ঁর মুখোমুখি হয়, গী তাকে একটি তলোয়ার যুদ্ধে আহবান করে বেলিয়ন গীকে হারায় কিন্তু প্রাণে মারে না , সে তাকে বলে "নাইট হয়ে ওঠো" যেন সে কখনোই তা ছিলো না। জেরুসালেমের নাগরিকরা যখন শহর ছেড়ে যাচ্ছিলো, বেলিয়ন সেখানে সিবিলাকে দেখতে পেলো, সিবিলা তখনো কিছু অঞ্চলের রানী ছিলো কিন্তু সে রানী হিসেবে তার দাবি ত্যাগ করেছে। সিবিলাকে নিয়ে বেলিয়ন ফ্রান্সে ফিরে গেলো। কিছুদিন পর এক ইংরেজ নাইটরা জেরুসালেম পুনরুদ্ধার করার জন্য বেলিয়নকে তাদের সাথে নেওয়ার জন্য  তার শহর দিয়ে যাচ্ছিলো। কারণ এখন সে  জেরুসালেম রক্ষার জন্য বিখ্যাত।কিন্তু তাকে বেলিয়নের কথা জিজ্ঞেস করলে সে  ক্রুসেডারকে বলে সে একজন কামার মাত্র। ইংল্যান্ডের রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেও সে তার উত্তরে অনড় থাকে। তারা চলে যায়। বেলিয়ন সিবিলাকে নিয়ে তার স্ত্রীর কবরের পাশ দিয়ে অজানার দিকে চলে যায়।

একটি উপসংহার দেখানো হয় যে ''

প্রায় এক হাজার বছর পরেও পবিত্র ভূমিতে শান্তি এখনও অধর''া।

অভিনয়[সম্পাদনা]

  • অরলান্ডো ব্রুম - বালিয়ান (বালিয়ান অব ইবেলিন) চরিত্রে
  • ইভা গ্রীন - সিবেলা (সিবেলা অব জেরুসালেম) চরিত্রে
  • জেরেমি আয়রনস্
  • ডেভিড থিওলিস
  • ব্রেন্ডেন গ্লিসন
  • মারডন সোকাস
  • লিয়াম নিসন - গডফ্রে অব ইবেলিন চরিত্রে (বালিয়ানের পিতা, তার প্রকৃত নাম বারিসান অব ইবেলিন)
  • এনওয়ার্ড নর্টন
  • ঘাসান মাসুদ - সালাদিন চরিত্রে
  • খালেদ আল নববী
  • আলেকজান্ডার সিদ্দিগ
  • ইউলরিচ থমসেন
  • ইয়ান গ্লেন
  • ভেনিবর টপিক
  • কেভিন ম্যাককিড
  • যোউকো আহোলা
  • মাইকেল শিন
  • নিকোল কোস্টার ওয়ালডু

ঐতিহাসিক নির্ভরযোগ্যতা[সম্পাদনা]

নির্মাণ[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রায়ণ[সম্পাদনা]

আবহসঙ্গীত[সম্পাদনা]

প্রাপ্তি[সম্পাদনা]

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

বক্স অফিস[সম্পাদনা]

১৩০ মিলিয়ন বাজেটের এই ছবিটি যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা থেকে ৪৭ মিলিয়ন ডলার এবং ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে ২১১ মিলিয়ন ডলার আয় করে।

এ্যাকোলেডস[সম্পাদনা]

এক্সটেনডেড ডায়রেক্টরস কাট[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Company Information"। movies.nytimes.com। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ৩০, ২০১০ 
  2. "KINGDOM OF HEAVEN (15)"British Board of Film Classification। ২০০৫-০৪-২০। ২০১৫-০৭-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-২৮ 
  3. http://www.film.com/movies/kingdom-of-heaven/6137745
  4. http://www.boxofficemojo.com/movies/?id=kingdomofheaven.htm