কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভারতের আসাম প্রদেশে নগাঁওগোলাঘাট জেলায় অবস্থিত কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের গোড়াপত্তন হয় বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ১৯০৪ সালে। পৃথিবীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এশীয় একশৃঙ্গ গণ্ডারের আবাসস্থল কাজিরাঙ্গা ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটি।[১] এছাড়াও উদ্যানটি বাঘ, এশীয় হাতি ও অসংখ্য প্রজাতির বিপন্ন পশু ও পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ভারতের অন্যসব জাতীয় উদ্যানের তুলনায় কাজিরাঙ্গায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সফলতা পাওয়া গেছে।

প্রারম্ভিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বর্তমান কাজিরাঙ্গা এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম, বিপদজনক ও সাধারণ মানুষের কাছে অজানা ছিল। বন্য জীবজন্তু, ম্যালেরিয়া, হঠাৎ বন্যা ও যখন তখন ব্রহ্মপুত্র নদের দিক পরিবর্তনের কারণে এলাকাটি একেবারেই অগম্য ছিল। সপ্তদশ শতকের নথিপত্রে কাজিরাঙ্গা নামক বনের উল্লেখ পাওয়া যায়। সপ্তদশ শতকে অহম রাজ প্রতাপ সিংহ এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় এখানকার মাছের স্বাদে মুগ্ধ হয়ে জানতে চান এমন সুস্বাদু মাছ কোথ্থেকে এসেছে। তিনি উত্তর পান-কাজিরাঙ্গা থেকে। এলাকাটার নাম কাজিরাঙ্গা কি করে হল সে ব্যাপারে অসংখ্য লোকগাঁথা ও কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। তবে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন, কাজিরাঙ্গার নামের সাথে কার্বি নামক একজন নারী যুক্ত। একসময় তিনি এলাকাটি শাসন করতেন।[২]

মেরি ভিক্টোরিয়া লেইটার কার্জন, ব্যারনেস কার্জন অব কেডলস্টোন, তিনি এই অঞ্চলে গণ্ডার সংরক্ষণের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।

সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা[সম্পাদনা]

সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে কাজিরাঙ্গার ইতিহাস শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। ১৯০৪ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের মার্কিন স্ত্রী মেরি কার্জন কাজিরাঙ্গা ভ্রমণে আসেন। কাজিরাঙ্গা তখনও একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু তার ভ্রমণকালে মেরি কার্জন গুটিকতক খুরের ছাপ ছাড়া একটিও গণ্ডার দেখতে পান নি। কথিত আছে যে, তৎকালীন বিখ্যাত অ্যানিমেল ট্র্যাকার বলরাম হাজারিকা লেডি কার্জনকে কাজিরাঙ্গা ঘুরিয়ে দেখান এবং এলাকাটি একটি সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার জন্য তাকে উদ্বুদ্ধ করেন।[৩] কাজিরাঙ্গায় গণ্ডারদের হতাশাজনক অবস্থায় দেখে প্রজাতিটি রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে তিনি তার স্বামীকে অনুরোধ করেন।[৩] লর্ড কার্জন অনতিবিলম্বে গণ্ডার সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেন। ১৯০৫ সালের ১ জুন কাজিরাঙ্গা অঞ্চলকে "কাজিরাঙ্গা প্রস্তাবিত সংরক্ষিত বনাঞ্চল"-এর ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মোট আয়তন ছিল ২৩২ বর্গ কিলোমিটার (৯০ বর্গ মাইল)।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bhaumik, Subir (১৭ এপ্রিল ২০০৭)। "Assam rhino poaching 'spirals'"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-২৩ 
  2. "Kaziranga National Park-History and Conservation"। Kaziranga National Park Authorities। ২০০৭-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-২৩ 
  3. Bhaumik, Subir (২০০৫-০২-১৮)। "Kaziranga's centenary celebrations"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-২৫  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "bbc" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  4. Talukdar, Sushanta (২০০৫-০১-০৫)। "Waiting for Curzon's kin to celebrate Kaziranga"The Hindu। ২০০৯-১১-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-২৩