কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(কণিকা বন্দোপাধ্যায় থেকে পুনর্নির্দেশিত)
কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রাথমিক তথ্য
জন্মনামঅণিমা মুখোপাধ্যায়
উপনামমোহর
জন্ম(১৯২৪-১০-১২)১২ অক্টোবর ১৯২৪
উদ্ভবসোনামুখী, বাঁকুড়া, অবিভক্ত বাংলা প্রদেশ (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) ভারত[১]
মৃত্যু৫ এপ্রিল ২০০০(2000-04-05) (বয়স ৭৫)
ধরনরবীন্দ্র সঙ্গীত
পেশাসংগীতশিল্পী
কার্যকাল১৯৩৮-২০০০

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্ম:১২ অক্টোবর ১৯২৪ – মৃত্যু: ৫ এপ্রিল ২০০০) একজন স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও শিক্ষিকা। রবীন্দ্রসঙ্গীত জগতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পীদের মধ্যে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। বিশেষত টপ্পা অঙ্গের রবীন্দ্রসংগীতে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক গায়িকা। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া অতুলপ্রসাদের গানেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন; যদিও এই ধারায় তার রেকর্ড সংখ্যা খুব বেশি নয়। জীবনের অধিকাংশ সময় শান্তিনিকেতনে অতিবাহিত করলেও তার জনপ্রিয়তা পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও পরিব্যাপ্ত ছিল। কলকাতা পৌরসংস্থা তার সম্মানে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালরবীন্দ্র সদনের মধ্যবর্তী ময়দানের একাংশে একটি সুরম্য সুবৃহৎ উদ্যান উৎসর্গ করেছেন।

জীবন[সম্পাদনা]

জীবনারম্ভ[সম্পাদনা]

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীতে। পিতা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থাগারের কর্মী ও মা অনিলা দেবী ছিলেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমজননী। তাদের পাঁচ কন্যা ও তিন পুত্রের মধ্যে কণিকা ছিলেন জ্যেষ্ঠ। পিতৃদত্ত নাম অনিমা। ছেলেবেলা কাটে বিষ্ণুপুরের মামাবাড়ির যৌথ পরিবারে। পরে খুব অল্পবয়সে পিতার কর্মস্থল শান্তিনিকেতনে চলে আসেন। ভর্তি হন ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয়ে। তার স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় এই সময় এক কালবৈশাখীর সন্ধ্যায় উত্তরায়ণের বাগানে আম চুরি করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ। সহজাতসঙ্গীত প্রতিভার কারণে তিনি সেই বয়সেই কবির বিশেষ স্নেহভাজন হয়ে পড়েন। তার নিজের কথায়,

১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ তার ‘অণিমা’ নামটি পরিবর্তন করে ‘কণিকা’ রাখেন। অবশ্য ডাকনাম হিসাবে তিনি ব্যবহার করতেন ‘মোহর’। পরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার এই ‘মোহর’ নামটি বিস্তারিত করে বলেছিলেন ‘আকবরী মোহর’। ১৯৩৫ সালেই শিশুশিল্পী হিসাবে প্রথম মঞ্চাবতরণ করেন কণিকা। শান্তিনিকেতনের শারদোৎসবে একটি অনুষ্ঠানে বালক-বালিকাদের দলে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার সেই প্রথম ও শেষ মঞ্চাবতরণ; কারণ সেই অনুষ্ঠানটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের শেষ মঞ্চাভিনয়। [২৪ জুলাই ১৯৪০ বোলপুর টেলিফোন কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি ওগো তুমি পঞ্চদশী গানটি গেয়েছিলেন। গানটি তিনি সরাসরি রবীন্দ্রনাথের কাছেই শেখেন। এই অনুষ্ঠানটি বেতারে সম্প্রচারিত হয়। এটিই কণিকার প্রথম বেতার অনুষ্ঠান। এরপর ১৯৩৭ সালে প্রথম কলকাতার ছায়া সিনেমা হলে আয়োজিত বর্ষামঙ্গল উৎসবে কণিকা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে ছায়া ঘনাইছে বনে বনে গানটি গেয়েছিলেন। কলকাতার মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরূপে সেটিই ছিল তার প্রথম আত্মপ্রকাশ। এই সময়ে অনেকগুলি গান রবীন্দ্রনাথ তাকে স্বয়ং শিখিয়েছিলেন। কণিকা অভিনয় করেছিলেন তাসের দেশ নাটকের দহলানী, ডাকঘর নাটকের সুধা, বিসর্জন নাটকের অপর্ণা ও বশীকরণ নাটকের নিরুপমা চরিত্রে।

প্রথম রেকর্ড[সম্পাদনা]

১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নীহারবিন্দু সেনের কথায় ও হরিপদ চট্টোপাধ্যায়ের সুরে দুটি আধুনিক গান রেকর্ড করেন কণিকা। গানদুটি ছিল ওরে ওই বন্ধ হল দ্বারগান নিয়ে মোর খেলা। এই রেকর্ডই তার জীবনের প্রথম রেকর্ড। জানা যায়, প্রিয় ছাত্রী জীবনের প্রথম রেকর্ডে তার গানের পরিবর্তে আধুনিক গান গেয়েছে শুনে দুঃখ পান রবীন্দ্রনাথ। ব্যথিত কণিকাও আধুনিক গানের জগতে প্রবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই বছরেই হিন্দুস্তান রেকর্ড কোম্পানি থেকে তার প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এই গ্রামোফোন রেকর্ডের একপিঠে ছিল মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে এবং অন্যপিঠে ছিল না না না ডাকব না, ডাকব না। ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হিন্দুস্তান রেকর্ডের তালিকা পুস্তিকায় লেখা হয় –

এই গান দুটি ছিল ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়েওই মালতীলতা দোলে। পূর্বের রেকর্ড ও এই রেকর্ডের চারখানি গানই রবীন্দ্রনাথের শোনা কণিকার রেকর্ডধৃত গান। জানা যায়, এই গানগুলি শুনে তিনি খুশি হয়েছিলেন।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর সময় কণিকা ছিলেন শান্তিনিকেতনে। এই সময় রবীন্দ্রনাথের নির্দেশ মতো সমুখে শান্তিপারাবার গানটি যে বৃন্দদলে গাওয়া হয়, সেই দলে ছিলেন কণিকা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই গানটি মৃত্যুর কয়েক বছর আগে রচনা করলেও, রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে তার মৃত্যুর পরেই প্রকাশিত ও গীত হয়। এরপর ইন্দিরা দেবী চৌধরানী, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ, অমিতা সেন, রমা কর প্রমুখ খ্যাতনামা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষকের কাছে গান শিখতে থাকেন কণিকা। শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন হেমেন্দ্রলাল রায়, অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভি ভি ওয়াজেলওয়ার, পি এন চিনচোর ও ধ্রুবতারা যোশির কাছে। ভজন শেখেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ ও প্রকাশকালী ঘোষালের কাছে। কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের পিতা হরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নিকট শেখেন অতুলপ্রসাদের গান। এছাড়াও কমল দাশগুপ্তফিরোজা বেগমের কাছে কিছুকাল নজরুলগীতিও শেখেন কণিকা।

কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯৪২ সাল থেকে তিনি হিজ মাস্টার্স ভয়েসের শিল্পী। ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতীরসঙ্গীত ভবনে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন কণিকা। এই বছরেই আকাশবাণীর নিয়মিত শিল্পীরূপে তার যোগদান। পরবর্তীকালে বিশ্বভারতীর এমিরিটাস অধ্যাপকও হন তিনি। ১৯৪৪ সালে কলকাতায় গীতবিতানসঙ্গীত বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নৃত্যনাট্য মায়ার খেলা মঞ্চস্থ হলে কণিকা সেই নাটকে প্রমদার চরিত্রটি করেন। এই অনুষ্ঠানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সূত্রে তিনি পরিচিত হন বাঁকুড়ার বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পরের বছর বৈশাখ মাসে বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি আবদ্ধ পরিণয়-সূত্রে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বীরেনবাবু ছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থাগারের কর্মী, রবীন্দ্র-বিশারদ ও আত্মকথা বাদে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত সকল গ্রন্থের সহলেখক।

আনন্দধারা বহিছে ভুবনে গানটির রেকর্ড[সম্পাদনা]

আনন্দধারা বহিছে ভুবনে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীত। ১৯৫৬ সালে এই গানটি তিনি প্রথম রেকর্ড করেন। গানটি তিনি শিখেছিলেন সংগীতাচার্য রমেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। রমেশবাবু গানটির মূল সুরটি জানতেন না। তাই স্বরবিতান-সম্মত মিশ্র মালকোষ রাগের বদলে তিনি কণিকাকে গানটি শেখান শুদ্ধ মালকোষ রাগে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে এ হেন সুর বিকৃতি বিশ্বভারতীসঙ্গীত সমিতি শুধু অনুমোদনই করেনি, গানটির জনপ্রিয়তায় প্রভাবিত হয়ে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় গীত সুরটির স্বরলিপি ভি বালসারাকে দিয়ে লিখিয়ে তা স্বরবিতানভুক্ত করে নেয়। আজও অন্যান্য শিল্পীরাও জনপ্রিয়তার বিপরীতে গিয়ে গানটি মূল সুরে গাইবার সাহস বড় একটা দেখান না। পরে আরও দুবার এই সুরেই গানটি রেকর্ড করেন কণিকা স্বয়ং। এই গানটি ছাড়া বাজে করুণ সুরে গানটিও কণিকা স্বরলিপি-বহির্ভূত প্রথায় গেয়েছিলেন। এই বিষয়ে বিশদ তথ্য মিলবে শ্রী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত কার গান কার সুর শীর্ষক নিবন্ধে, প্রকাশিত হয়েছিল দলছুট খুদেপত্রীর জানুয়ারি ২০১১ সংখ্যায়।

বিদেশ সফর[সম্পাদনা]

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেন। ১৯৭৪, ১৯৭৮ ও ১৯৮৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকানাডা; ১৯৭৬, ১৯৮০ ও ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ড এবং ১৯৮০ সালেই জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। কিন্তু তার আত্মকথা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তার যে বিদেশ-ভ্রমণের কথা সেটি বাংলাদেশ। তার কথায়,

বাংলাদেশে কণিকা যান ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৪, ১৯৮৬ ও ১৯৯৪ সালে। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তার সাক্ষাতে একটি চিত্র আঁকা আছে তার আত্মকথায়,

পরবর্তীকালে তার প্রিয় ছাত্রী ও বিশিষ্ট বাংলাদেশী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার তত্ত্বাবধানে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে শেষবার সেই দেশ ভ্রমণ করেন কণিকা। কবি সুফিয়া কামাল তার সম্মানে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন সেবার। সেই কবিতার শেষ পংক্তিগুলি শুনে তার মনে হয় “দেশান্তরে নয়, যেন নিজেরই দেশে, নিজভূমে, নিজের মানুষদের ভালবাসাতেই পূর্ণ হয়ে উঠছি আমি” –

আপ্তজন[সম্পাদনা]

অপর এক প্রবাদপ্রতিম রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র ছিলেন তার কৈশোরের বন্ধু। দেবব্রত বিশ্বাস, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, নীলিমা সেন প্রমুখ শিল্পীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।সঙ্গীত জগতের পাশাপাশি সাহিত্য জগতেও তার বন্ধু ও গুণমুগ্ধ ছিলেন অনেকে। সৈয়দ মুজতবা আলী, অবধূত, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, মহাশ্বেতা দেবী, সমরেশ বসু, নিমাই ভট্টাচার্য, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ প্রমুখের সঙ্গেও ছিল তার স্নেহ ভালবাসার সম্পর্ক। তার নিজের জেলার মানুষ রামকিঙ্কর বেইজ তাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মায়া সেন, কমলা বসু, অরবিন্দ বিশ্বাস, গোরা সর্বাধিকারী, বনানী ঘোষ, সোহিনী মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের পাপিয়া সারোয়ার, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদি মহম্মদ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

ব্যক্তিজীবনে কণিকা ছিলেন অত্যন্ত লাজুক; সংকোচ ছিল তার নিত্যসঙ্গী। অপরিচিত স্থানে গান গাইতে যেতে বেশ ভয় পেতেন তিনি। শোনা যায়, সত্যজিৎ রায় তার কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবির গানে নেপথ্যশিল্পী হিসাবে তার নাম ভেবেছিলেন; কিন্তু কলকাতায় এনে অপরিচিত পরিবেশে তাকে দিয়ে রেকর্ড করানোর ঝক্কির কথা মাথায় রেখে সে পরিকল্পনা বাতিল করেন। যদিও সত্যজিৎ ও তার স্ত্রী বিজয়া রায় উভয়েই ছিলেন কণিকার গুণমুগ্ধ ও পরম বন্ধু । সত্যজিতের শেষ ছবি আগন্তুক-এ ব্যবহৃত সাঁওতাল নৃত্যের দৃশ্যটি কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবস্থাপনায় তোলা হয়। আবার তার কিছু অদ্ভুত স্বভাবের কথাও জানা যায় স্বরচিত আত্মকথা থেকে। যেমন – কোনও অঞ্চল থেকে গান গাওয়ার ডাক পেলে সেই অঞ্চলের নামটি তিনি দেখতেন। নাম পছন্দ না হলে আমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন না। এই কারণেই একবার ডানকুনিতে অনুষ্ঠান করতে যেতে অস্বীকার করেন তিনি।

শেষজীবন[সম্পাদনা]

১৯৮৪ সালেসঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসর নেন কণিকা। ১৯৯৩ সালে বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ ‘মোহর’ নামে তার জীবনভিত্তিক একটি তথ্যচিত্র তোলেন। এর প্রযোজক ছিল ফিল্ম মেকার্স কনসর্টিয়াম। তার শেষজীবন কাটে শান্তিনিকেতনে। অসুস্থতার কারণে শেষদিকে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতাতেই তার জীবনাবসান হয়। রবীন্দ্রসদন চত্বরে শায়িত তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলার সকল ক্ষেত্রের দিকপালগণ। পরে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

রেকর্ড[সম্পাদনা]

রেকর্ডে রবীন্দ্রসংগীত[সম্পাদনা]

১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম (এইচ ৬৪৮) ও ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় (এইচ ৭৫৪) রেকর্ড বের হয় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সময়ে রেকর্ডে শিরোনাম থাকত না। ১৯৪২ সালে প্রকাশিত রেকর্ড থেকে ১৯৬১ সাল অবধি প্রকাশিত তার ২৬টি একক ও সহশিল্পীসহ গীত রেকর্ড এইরকমই শিরোনামহীন।

১৯৪২ সালে এইচ এম ভি থেকে তার প্রকাশিত রেকর্ডে ধৃত হয় ওগো তুমি পঞ্চদশীএসো শ্যামলসুন্দর গানদুটি। এই বছর থেকেই এইচ এম ভি-র নিয়মিত শিল্পী হন কণিকা। প্রায় ৫৫ বছর এইচ এম ভি থেকে তার রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা উপলক্ষে দেবব্রত বিশ্বাস, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, সুচিত্রা মিত্র ও সুপ্রীতি ঘোষের সঙ্গে তার গানও প্রকাশিত হয়; তিনি গেয়েছিলেন তোর আপনজনে ছাড়বে তোরেদেশ দেশ নন্দিত করি। ১৯৬২ সালে তার গাওয়া দুটি রেকর্ডও নামবিহীন। এই বছরই প্রকাশিত হয় প্রথম শিরোনামসহ লং প্লেয়িং রেকর্ড জেমস ফ্রম টেগোর (ইএএলপি ১২৬৭)। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৫৯টি রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এগুলির মধ্যে ছিল – সিজনাল সংস অফ টেগোর, বর্ষামঙ্গল, বসন্ত, যায় দিন শ্রাবণ দিন যায়, ভানুসিংহের পদাবলী, পথ ও পথিক (হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে), পূজা, প্রেম ও প্রকৃতি, প্রেমের মিলন দিনে, ও মোর দরদিয়া, কণ্ঠে নিলেম গান, আজি এ আনন্দসন্ধ্যা (সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে), নব নব রূপে, বাণী তব ধায়, একটি রক্তিম মরীচিকা, একলা চলো রে, বাজে করুণ সুরে, গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন ইত্যাদি। এগুলির কয়েকটি তার একক এবং কয়েকটি বহুশিল্পীর অ্যালবাম যাতে তার গানও অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮০ পর এইচ এম ভি থেকে তার ৪০টি ক্যাসেটও প্রকাশিত হয়। অদ্যাবধি তার বেশ কয়েকটি কমপ্যাক্ট ডিস্কও প্রকাশিত হয়েছে – কণ্ঠে নিলেম গান (১৯৯৪), বিদায়বেলার মালাখানি (১৯৯৮), পূজা ও প্রেম (১৯৯৯), গোল্ডেন আওয়ার (২০০০), এ পরবাসে রবে কে (২০০০, রাগা মিউজিক থেকে), আছ অন্তরে চিরদিন (২০০২), অধরা মাধুরী (২০০৭) ইত্যাদি। ২০০৭ সালে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এইচ এম ভি রেকর্ডের প্রথম এমপিথ্রি রেকর্ড কবিপ্রণাম:গানের সুরের আসনখানি (হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে) প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম একক এমপিথ্রি সংকলন সঞ্চয়ন : রবীন্দ্রসংকলন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

এইচ এম ভি ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা থেকেও তার গান প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে তার সংগীতানুষ্ঠানের লাইভ রেকর্ডিং প্রকাশিত হয়েছে সি বি এস থেকে – তবু মনে রেখোআমার না বলা বাণী। আবার শ্রুতি থেকে তার স্মৃতিকথা ও গানের সংকলন তারই কণ্ঠে ধৃত রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছে – আশ্রমকন্যা। এছাড়াও ই বি আই থেকে কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের হিন্দি অনুবাদও গেয়ে প্রকাশ করেছেন কণিকা।

রেকর্ডে রবীন্দ্রনাটক[সম্পাদনা]

গান ছাড়াও বিভিন্ন রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যের রেকর্ডেও অংশ নেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। এগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখনীয় ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে প্রকাশিত শ্যামা নৃত্যনাট্যে নামভূমিকায় তার গান। এই রেকর্ডটি বিশেষ প্রশংসা ও জনপ্রিয়তার অধিকারী হয়। এছাড়া মায়ার খেলা-এ প্রমদা, চিত্রাঙ্গদা-এ চিত্রাঙ্গদা (সুরূপা) ও তাসের দেশ-এ হরতনী চরিত্রেও গীতাভিনয় করেন তিনি।

চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীত[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রের জন্য খুব বেশি গান গাননি কণিকা। তবু তথাপি (১৯৫০), নিমন্ত্রণ (১৯৭২) ও বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা (১৯৭২) ছবি তিনটিতে গান গেয়েছিলেন তিনি। শেষোক্ত ছবিতে তিনি তার বিখ্যাত আনন্দধারা বহিছে ভুবনে গানটি গেয়েছিলেন। এই তিনটি ছবির গানই রেকর্ডে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আহ্বান ছবিতে হে সখা, বারতা পেয়েছি মনে মনে গানটি গেয়েছিলেন। এ-গান অবশ্য রেকর্ডে প্রকাশ পায়নি।

অন্যান্য ধারার গান[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও অন্যান্য ধারার বিভিন্ন গান কণিকা রেকর্ড করেন বিভিন্ন সময়ে। তার মধ্যে রয়েছে ভজন, কীর্তন, অতুলপ্রসাদী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, নজরুলগীতি ইত্যাদি। তার একটি তালিকা নিচে প্রদত্ত হল :

গান সাল বর্গ গীতিকার সুরকার রেকর্ড নং/নাম
ওরে ওই বন্ধ হল দ্বার ১৯৩৮ আধুনিক গান নীহারবিন্দু সেন হরিপদ চট্টোপাধ্যায় এইচ ৫৮৪
গান নিয়ে মোর খেলা ১৯৩৮ আধুনিক গান নীহারবিন্দু সেন হরিপদ চট্টোপাধ্যায় এইচ ৫৮৪
প্রভু, যায় ক্যায়সে ১৯৫২ হিন্দি ভজন প্রচলিত প্রচলিত এন ৮০০৪৬
মেরা পিয়া মুঝে দিখলাও রে ১৯৫২ হিন্দি ভজন প্রচলিত প্রচলিত এন ৮০০৪৬
কালিন্দী পুলিন বনে ১৯৫২ কীর্তন প্রচলিত প্রচলিত এন ৮২৫২৬
বৃন্দাবনবিলাসিনী রাই আমাদের ১৯৫২ কীর্তন প্রচলিত প্রচলিত এন ৮২৫২৬
পত্র লিখি কাজল মেঘে ১৯৫২ আধুনিক গান শ্যামল গুপ্ত মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
সুরের পথে ঘুরে বেড়ায় ১৯৫২ আধুনিক গান শ্যামল গুপ্ত মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
ওগো নিঠুর দরদী সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭ অতুলপ্রসাদী অতুলপ্রসাদ সেন অতুলপ্রসাদ সেন এন ৮২৮০০
রইল কথা তোমারি নাথ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭ অতুলপ্রসাদী অতুলপ্রসাদ সেন অতুলপ্রসাদ সেন এন ৮২৮০০
গোবিন্দ কভুঁ মিলে পিয়া ১৯৫৭ মীরা ভজন মীরাবাই প্রচলিত
প্যারে দরশন দিজো আয়ে ১৯৫৭ মীরা ভজন মীরাবাই প্রচলিত
যখন তুমি গাওয়াও গান ১৯৫৮ অতুলপ্রসাদী অতুলপ্রসাদ সেন অতুলপ্রসাদ সেন এন ৮২৮০০
মোরা নাচি ফুলে ফুলে ১৯৫৮ অতুলপ্রসাদী অতুলপ্রসাদ সেন অতুলপ্রসাদ সেন এন ৮২৮০০
মোরি চুনরি মেঁ পড় গয়ো দাগ ১৯৫৯ হিন্দি ভজন কবীর দাস লক্ষ্মণ হাজরা
জিন প্রেম কিয়ো ১৯৫৯ ভজন গুরু গোবিন্দ সিং লক্ষ্মণ হাজরা
পাগলা মনটারে তুই বাঁধ ১৯৬৩ অতুলপ্রসাদী অতুলপ্রসাদ সেন অতুলপ্রসাদ সেন এন ৮৩০৩১
মিছে তুই ভাবিস মন ১৯৬৩ অতুলপ্রসাদী অতুলপ্রসাদ সেন অতুলপ্রসাদ সেন এন ৮৩০৩১
তোমার মহাবিশ্বে কিছু ১৯৬৪ নজরুলগীতি কাজী নজরুল ইসলাম কাজী নজরুল ইসলাম
হে বিধাতা, হে বিধাতা ১৯৬৪ নজরুলগীতি কাজী নজরুল ইসলাম কাজী নজরুল ইসলাম
কেন আনো ফুলডোর ১৯৬৫ নজরুলগীতি কাজী নজরুল ইসলাম কাজী নজরুল ইসলাম এন ৮৩১০৯
কেউ ভোলে না কেউ ভোলে ১৯৬৫ নজরুলগীতি কাজী নজরুল ইসলাম কাজী নজরুল ইসলাম এন ৮৩১০৯
হে অন্তর্যামী ত্রাহি ১৯৭৬ ব্রহ্মসংগীত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর
যদি ডাকার মতো পারিতাম ডাকতে ১৯৭৮ ব্রহ্মসংগীত কাঙাল হরিনাথ প্রচলিত

সম্মাননা[সম্পাদনা]

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনে পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও পুরস্কার। ১৯৭৩ সালে জাহ্নবী যমুনা বিগলিত করুণা ছবিতে আনন্দধারা বহিছে ভুবনে গানটি গেয়ে পান বি এফ জে এ পুরস্কার। ১৯৭৮ সালে পান গোল্ডেন ডিস্ক ই এম আই গ্রুপ।সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার পান ১৯৭৯ সালে। ১৯৮৬ সালে হন পদ্মশ্রী। ১৯৯৬ সালে পান এশিয়ান পেন্টস শিরোমণি পুরস্কার। ১৯৯৭ সালে বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তম দ্বারা সম্মানিত করা হয় তাকে। ১৯৯৮ সালে পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র তাকে সম্মান জানান। ১৯৯৯ সালে পান আলাউদ্দিন পুরস্কার। এছাড়া মৃত্যুর পরে কলকাতার বিখ্যাত সিটিজেন্স পার্কটিকে তার নামে উৎসর্গিত করা হয়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল লাগোয়া এই সুরম্য বিশাল উদ্যানটির বর্তমান নাম মোহরকুঞ্জ।

রচিত গ্রন্থাবলি[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ে স্বামী বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একযোগে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় – রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভূমিকা (এম সি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রকাশিত), রবীন্দ্রসঙ্গীতের নানা দিক (মিত্রালয় প্রকাশিত), রবীন্দ্রসঙ্গীতের কাব্য ও সুর (শঙ্খ প্রকাশনী ও বর্তমানে করুণা প্রকাশনী প্রকাশিত)। এছাড়া আত্মকথা আনন্দধারা প্রকাশ করেছেন আজকাল পত্রিকার প্রকাশন বিভাগ। ১৯৯৮ সালে সুতানুটী পটকথা থেকে সুমিতা সামন্তের সম্পাদনায় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মোহর নামে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়।

কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বিদগ্ধজনের মত[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর[সম্পাদনা]

শৈলজারঞ্জন মজুমদার[সম্পাদনা]

জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • আনন্দধারা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৮
  • প্রবন্ধ শেষ গানেরই রেশ, শুচিস্মিতা মজুমদার, পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা (সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রবীন্দ্র-স্মরণ সংখ্যা, 'ক্রোড়পত্র : শান্তিদেব ঘোষ ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়' অংশ), জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় সংখ্যা ১৪০৭ বঙ্গাব্দ
  • কার গান কার সুর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, দলছুট, জানুয়ারি,২০১১

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. "বলেছিল আর কলকাতায় যাব না" 
  2. আনন্দধারা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, পৃ.১৯
  3. আনন্দধারা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, পৃ.৪২ থেকে উদ্ধৃত
  4. আনন্দধারা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, পৃ.৬৩
  5. আনন্দধারা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, পৃ.৬৪
  6. আনন্দধারা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, পৃ.৬৫ থেকে উদ্ধৃত সুফিয়া কামালের কবিতা
  7. আনন্দধারা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আজকাল পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা: মূল পাণ্ডুলিপির আলোকচিত্র থেকে উদ্ধৃত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা
  8. পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা (সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রবীন্দ্র-স্মরণ সংখ্যা, 'ক্রোড়পত্র : শান্তিদেব ঘোষ ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়' অংশ), জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় সংখ্যা ১৪০৭ বঙ্গাব্দ, পৃ.১৪০ থেকে উদ্ধৃত

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]