এনায়েত খান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এনায়েত খান
ইউনির্ভাসেল ছুফি টেম্প্যাল

এনায়েত খান (ইংরেজি: Inayat Khan; উর্দু: عنایت خان‎‎) (জুলাই ৫, ১৮৮২ - ফেব্রুয়ারি ৫, ১৯২৭) ছিলেন পশ্চিমা বিশ্বে ছুফি তরীকার গোড়া পত্তনকারী এবং সার্বজনীন ছুফি দীক্ষা প্রচারে পুরধা ছুফি সাধক। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি ভারতবর্ষ হতে একজন সঙ্গীত শাত্রবিদ হিসাবে এলেও পরবর্তীকালে ছুফি সাধক-পীর হিসাবে ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সার্বজনীন ছুফিবাদ ছিল তার মূল প্রতিপাদ্য।[১][২]

জন্ম[সম্পাদনা]

১৮৮২ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখে ভারতের গুজরাত প্রদেশের ভাদোধারা নামক স্থানে তার জন্ম হয়। তার পিতার নাম মাশেখ রহমান খান এবং মাতা খতিজা বি। এনায়েত খান ছোট বেলা হতেই কাব্য ও সঙ্গীতে আগ্রহী ছিলেন। যা পরবর্তীতে তার ছুফি সাধনায় পর্যবসিত হয়। তার মা ছিলেন অষ্টাদশ শতক মহিশুরের শাসনকর্তা টিপু সুলতান’র বংশধর।[৩]

শিষ্যত্ব গ্রহণ[সম্পাদনা]

ছুফিতত্ত্বে দীক্ষা গ্রহণে মনস্থ করলে তিনি দ্বারস্থ হন ছুফি সাধক মোহাম্মদ আবু হাশিম মাদানীর কাছে,[১] যিনি তাকে চিস্তিয়, নক্সবন্দীয়া, কাদেরীয়া এবং শোহরাওয়ার্দীয়া তরীকার শিক্ষা দান করেন।

প্রাচ্যে আগমন[সম্পাদনা]

স্বীয় পীর/মুর্শিদ মৃত্যুর পূর্বে তাকে আদেশ করেছিলেন, তিনি যেন সঙ্গীতকে কাজে লাগিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে মানুষের মাঝে সম্পর্কের সেতু বন্ধন তৈরী করেন। উক্ত আদেশ বাস্তবায়নে তিনি ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে পৌছেন।[৪]

অবদান[সম্পাদনা]

তিনি ১৯০৩ সালে অধ্যক্ষ এনায়েত খান রহমত খান পাঠান শীর্ষক ৭৫টি গানের এক সংকল প্রকাশ করেন। দিল্লীর নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার শিষ্য হিসাবে প্রাচ্যে সর্বপ্রথম ছুফি তরীকা হিসাবে চিস্তিয়া তরীকার ধারা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে তার প্রতিষ্ঠিত ছুফি তরীকাটি স্যুইস আইনের অধিনে পরিবর্তীত হয়ে নাম ধারণ করে ইন্টান্যাশনাল ছুফি মুভমেন্ট (International Sufi Movement)। একত্ববাদ বা তৌহিদ সংক্রান্ত তার প্রচারণায় প্রেমবাদ, ছন্দময়তা ও সৌন্দর্য বিশেষ স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উপস্থাপিত হয়। এনায়েত খান ১৯১০ হতে ১৯২০ সাল পর্যন্ত আমেরিকা ও ইউরোপের নানা দেশে ভ্রমণ করেন। [৪] পরে তিনি ফ্রান্সে বসবাস আরম্ভ করলে সেখানে তিনি গৃষ্মকালীন শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সার্বজনীন ছুফিতত্ত্বের উপর পাঠদানে রত থাকেন। এভাবে তার প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ছুফি মুভমেন্ট এর কার্যক্রম ছড়ি পড়ে নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, র্জামানী, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, রাশিয়া ও অষ্ট্রলিয়ায়।[৫]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি স্বদেশে স্বেচ্ছায় ফেরত আসেন ১৯২৬ সালে। বার্ধক্য জনিত শারীরিক প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে তিনি পুনরায় ভারতের নানা স্থানে ভ্রমনে ব্যস্ত রইলেন। এরই ধারাবাহিকতা এক সময় তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। স্বল্প সময়ের অসুস্থ্যতায় ১৯২৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি দিল্লীতে[১] তিনি মৃত্যু বরণ করেন। সেখানেই নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ নামক স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "হযরত এনায়েত খানের জীবন ও দর্শন (The Life and Teachings of Hazrat Inayat Khan)" 
  2. "হযরত এনায়েত খানের ছুফি দর্শন: 14 খন্ড (The Sufi Message of Hazrat Inayat Khan: 14 volumes)"। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  3. "জীবনী: হযরত এনায়েত খান (HAZRAT INAYAT KHAN)" 
  4. "এ হিষ্টোরি অব ওয়েষ্টার্ন ছুফিজম, লেখক: প্রফেসর এন্ড্রিউ রাওলিংসন, ল্যাঞ্চেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য (A HISTORY OF WESTERN SUFISM, Author: Andrew Rawlinson, Department of Religious Studies, University of Lancaster, Lancaster LA1 4YG, England)"। ৫ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  5. "এনায়েত খান সমগ্র: এ কমপ্লিট ওয়ার্ক অব পীর ও মুর্শিদ হযরত এনায়েত খান(COMPLETE WORKS OF PIR-O-MURSHID HAZRAT INAYAT KHAN ORIGINAL TEXTS: LECTURES ON SUFISM 1926 I: December 1925 to March 12, 1926)" (পিডিএফ)। মার্চ ৫, ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪