উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পাখি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডোডো, উড়তে না পারাই এর বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ

যে সব পাখি উড়তে পারে না তাদের উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পাখি বলে। আত্মরক্ষার জন্য এরা প্রধানত সাঁতার ও দৌড়ের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৪০ প্রজাতির পাখি রয়েছে যারা উড়তে পারে না।[১] বহু উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পাখিদের অধিকাংশই দ্বীপবাসী। ধারণা করা হয়, দ্বীপে কোন শিকারী প্রাণী না থাকায় এসব পাখির পূর্বপুরুষদের আত্মরক্ষার জন্য উড়বার প্রয়োজন পড়েনি। সে কারণে ক্রমে ক্রমে তাদের উড়ার ক্ষমতা লোপ পায়। বড় উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পাখি, যেমন- উটপাখি, রিয়া পাখি, এমু, কেসোয়ারি প্রভৃতির পূর্বপুরুষের শক্তিশালী পা, শক্ত নখর এবং দ্রুতগতিতে দৌড়াতে পারার ক্ষমতার জন্য আত্মরক্ষার্থে উড়ার প্রয়োজন হয় নি। পৃথিবীর জীবিত উড্ডয়ন অক্ষম পাখিদের মধ্যে ইনঅ্যাক্সেসিবল দ্বীপের ঝিল্লি (দৈর্ঘ্য ১২.৫ সেমি ও ওজন ৩৪.৭ গ্রাম) ক্ষুদ্রতম এবং উটপাখি (দৈর্ঘ্য ২.৭ মি ও ওজন ১৫৬ কেজি) বৃহত্তম। প্রকৃতপক্ষে উটপাখি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ পাখি। তবে এমন কয়েকটি পাখি পৃথিবীতে একসময় দাপিয়ে বেড়াত যেগুলো আকারে উটপাখির থেকে যথেষ্ট বড় ছিল।

যেসব পাখি উড়তে পারে না, তাদের বুকের কীল বা স্টার্নাম এবং ডানার হাড় উড়তে সক্ষম পাখিদের তুলনায় বেশ খাটো হয়।[২] কোন কোন প্রজাতিতে স্টার্নাম থাকে না। কীল উড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পেশীগুলো ধরে রাখে।[১] সেজন্য এসব প্রজাতির কীলের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া এসব পাখির পালকের পরিমাণ উড়তে সক্ষম পাখিদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। এসব পাখিদের ত্বকে পালক সমানভাবে বিস্তৃত থাকে। কিন্তু উড়ুক্কু পাখিতে পালক নির্দিষ্ট এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক বা পট্টি আকারে বিস্তৃত।

গৃহপালিত পাখিদের মধ্যে উড্ডয়ন অক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়। গৃহপালিত মোরগ-মুরগি আর হাঁসের মধ্য উড়বার ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তবে এদের পূর্বপুরুষ যথাক্রমে লাল বনমোরগনীলশির হাঁসের মধ্য উড়তে পারার ক্ষমতা পুরোদমে বিদ্যমান।

উড্ডয়নে অক্ষম পাখির উৎপত্তি[সম্পাদনা]

মোয়া শিকার করছে হাস্ট ঈগল, দু'টি পাখিই বর্তমানে বিলুপ্ত

উড্ডয়নে অক্ষম পাখিদের উৎপত্তি ও এদের পূর্বপুরুষ কে বা কারা তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে এবং এ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রদান করা হয়েছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদটি হল, উড্ডয়নে অক্ষম পাখি উড়ুক্কু পূর্বপুরুষ থেকে সৃষ্টি হয়েছে[৩] এবং উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন স্থলজ জীবনে এরা গৌণভাবে পুনঃঅভিযোজিত হয়েছে। এর ভিত্তি হল, উড্ডয়নে অক্ষম পাখিরা এমন কতগুলো দৈহিক বৈশিষ্ট্য বহন করে, যা উড়ার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। সম্ভবত এদের পূর্বপুরুষ এ বৈশিষ্ট্যগুলো বহন করত, কিন্তু উড়তে সক্ষম ছিল না। পাখির পূর্বপুরুষ ভূমিতে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সম্ভবত উড়ার ক্ষমতা অর্জন করেছিল। শত্রুমুক্ত হওয়ার ফলে অথবা ভূমিতেই শত্রুর মোকাবিলা করতে পারার ক্ষমতার কারণে তাদের উড়বার আর কোন প্রয়োজন হয়নি। ভূমিতে যেখানে খাদ্যের প্রাচুর্য ছিল এবং কোন স্থলজ প্রতিযোগী ছিল না, সেখানে পৈতৃক উড্ডয়নে অক্ষম পাখি উড়া বন্ধ করে। এরা সবসময় ভূমিতে অবস্থান করা শুরু করে এবং কেবল খাদ্য সংগ্রহের জন্য সকল শক্তি ব্যয় করে। তাদের শরীরও পারিপার্শ্বিক অবস্থান অনুযায়ী অভিযোজিত হয়। জীবাশ্মবিজ্ঞানী আলফ্রেড রোমার এ মতবাদটি প্রদান করেন। সাম্প্রতিককালের উড্ডয়নে অক্ষম পাখিদের ভৌগোলিক বিস্তার এ মতবাদ দ্বারা সমর্থিত।

কিছু উড্ডয়ন ক্ষমতাহীন পাখির পূর্বপুরুষ প্রাথমিক সিনোজোয়িক মহাযুগে পৃথিবীতে বাস করত। কিছু সংখ্যক বড় ভূমিবাসী নিওগন্যাথাস পাখি ঐ সময়ে নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে পাওয়া যেত। এসব অঞ্চলে বড় সরীসৃপ দ্বারা সদ্য পরিত্যক্ত স্থলভাগ জয় করার জন্য এসব পাখি ও প্রাথমিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণীরাই এ অসম প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে। মাত্র কয়েক প্রজাতির ভূমিবাসী পাখি টিকে থাকে এবং এদের থেকেই আধুনিক উড্ডয়ন-অক্ষম পাখিদের উৎপত্তি।

উড্ডয়নে অক্ষম আধুনিক পাখিসমূহের তালিকা[সম্পাদনা]

রেটাইটস[সম্পাদনা]

উটপাখি

আনসারিফর্মিস[সম্পাদনা]

ক্যাম্পবেল তিলিহাঁস
ফুয়েজিয়ান ঝিরিহাঁস

গ্যালিফর্মিস[সম্পাদনা]

পোডিসিপেডিফর্মিস (ডুবুরি)[সম্পাদনা]

প্যালিক্যানিফর্মিস (প্যালিক্যান, পানকৌড়ি ও তার সহজাত)[সম্পাদনা]

উড্ডয়নঅক্ষম পানকৌড়ি

স্ফিনিসসিফর্মিস (পেঙ্গুইন)[সম্পাদনা]

সম্রাট পেঙ্গুইন

কোরাসিফর্মিস (মাছরাঙা, ধনেশ ও তার সহজাত)[সম্পাদনা]

সাইকোনিফর্মিস (বক, কাস্তেচরা, মানিকজোড় ও তার সহজাত)[সম্পাদনা]

গ্রুইফর্মিস (সারস, ঝিল্লি ও তার সহজাত)[সম্পাদনা]

ওয়েকা
বৃহৎ অক

চ্যারাড্রিফর্মিস (গাঙচিল, গাঙকৈতর, অক)[সম্পাদনা]

ফ্যালকনিফর্মিস (শিকারী পাখি)[সম্পাদনা]

সিটাসিফর্মিস (টিয়া)[সম্পাদনা]

কাকাপো

কলাম্বিফর্মিস (কবুতর, ঘুঘু)[সম্পাদনা]

ক্যাপ্রিমুলজিফর্মিস (রাতচরা)[সম্পাদনা]

স্ট্রিজিফর্মিস (পেঁচা)[সম্পাদনা]

পাসেরিফর্মিস (বৃক্ষচর পাখি)[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Bird Site: Flightless Birds"। ২০০৭-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-২৭ 
  2. Nudds, R. L. and Slove Davidson, J. 2010. A shortening of the manus precedes the attenuation of other wing-bone elements in the evolution of flightlessness in birds, Acta Zoologica 91, 115–122.
  3. "New Zealand Ecology – Moa"TerraNature। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-২৭ 
  4. Hunter, Laurie A (১৯৮৮)। "Status of the Endemic Atitlan Grebe of Guatemala: Is it Extinct?" (পিডিএফ)Condor90 (4): pp. 906–912। জেস্টোর 1368847ডিওআই:10.2307/1368847। ২০০৮-০২-২৯ তারিখে মূল (pdf) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৩ 
  5. Taylor, Barry (১৯৯৮)। Rails: A Guide to the Rails, Crakes, Gallinules and Coots of the World। Yale University Press। আইএসবিএন 0-300-07758-0 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]