ই-এশিয়া ২০১১

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ই-এশিয়া ২০১১ এশিয়া মহাদেশীয় একটি আন্তর্জাতিক আইসিটি সম্মেলন যা বাংলাদেশের ঢাকায় ১লা থেকে ৩রা ডিসেম্বর, ২০১১ অবধি অনুষ্ঠিত হয়। এতে শতাধিক দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহণ করে এবং ২শত দেশী-বিদেশী আইসিটি বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে চীন-মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এর আয়োজন করা হয়।[১]

ঢাকার ই-এশিয়া[সম্পাদনা]

এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত, প্রযুক্তিগত সেবা এবং কর্মকাণ্ড তুলে ধরা ও মত বিনিময়ের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন ই-এশিয়া প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে। ২০১১-এ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ৫ম ই-এশিয়া সম্মেলন ও প্রদর্শনী। এর আগে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলঙ্কায় ই-এশিয়া অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, জাপান, থাইল্যান্ডনেদারল্যান্ডের কান্ট্রিপ্যাভিলিয়ন ছিল। এ ছাড়া ছিল ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, নরডিক চেম্বার, অ্যানটিএফ-২ এর প্রজেক্টের স্টল। ই-এশিয়া আয়োজনের জন্য বাজেট ছিল ১৮ কোটি টাকা। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য দেয়া ১৭টি প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯টি পদক জিতে এশিয়ার অগ্রসরমান প্রযুক্তি বিপ্লবে উজ্জ্বলতর হয়েছে বাংলাদেশের নাম। ১লা ডিসেম্বর এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা[২]

আয়োজক[সম্পাদনা]

ই-এশিয়া ২০১১-এর মূল আয়োজক ভারত। তবে বাংলাদেশে এর প্রধান সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের “অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প”, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং ইলেটস। এতে সহযোগিতা করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশ (অ্যামটব), এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশন (অ্যাসোসিও), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।

সেমিনার ও ওয়ার্কশপ[সম্পাদনা]

তিন দিনের এ আয়োজনে সমসাময়িক বিভিন্ন আইসিটি বিষয়ে ৩০টি সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেমিনারগুলো বিভক্ত ছিল বিল্ডিং ক্যাপাসিটি, কানেকটিং পিপল, সার্ভিং সিটিজেন এবং ড্রাইভিং ইকোনমি - এ চারটি বিষয়ে। স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে কীভাবে সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা তৈরি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেমিনারের পাশাপাশি ছিল ছয়টি “কারিগরি সেশন” যথা ’আইসিটি অ্যাজ অ্যা ক্যারিয়ার পাথ ফর উইমেন: অপরচুনিটিস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ’, ‘মেকিং লাইফ প্রোডাক্টিভ ফর পারসন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিস ইউজিং আইসিটি’, ‘বিল্ডিং ন্যাশনাল ই-গভর্নেন্স আর্কিটেকচার ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ’, ‘অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল প্লাটফর্ম’, ‘প্রিপেয়ারিং ফর আইপিভি’ এবং ‘বিল্ডিং ইওর ওন ক্লাউড’। অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলো টেলিভিশন ও ওয়েবে সরাসরি সম্প্র্রচার করা হয়।[৩]

ই-এশিয়া ২০১১ পুরস্কার[সম্পাদনা]

ই-এশিয়ার পঞ্চম এই আয়োজনে প্রথমবারের মতো প্রদান করা হয়েছে ‘ই-এশিয়া ২০১১ পুরস্কার’। পুরস্কারের চূড়ান্ত পর্বের জন্য ৩৭টি উদ্যোগকে ফাইনালিস্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। চারটি বিভাগে মোট ২০৭টি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান থেকে এই মনোনয়ন বাছাই করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। মনোনয়ন পাওয়া উদ্যোগগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের বিচারে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন জুরি চয়েস পুরস্কারে ভূষিত হয় যশোর ডিসি অফিসের জেলা ই-সেবা কেন্দ্র। ই-এশিয়া “সামর্থ্য বর্ধন” (বিল্ডিং ক্যাপাসিটি), “জনমুখী যোগাযোগ” (কানেক্টিং পিপল), “নাগরিক সেবা” (সারভিং সিটিজেন্স) ও “অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি” (ড্রাইভিং ইকনমি) - এই চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৬টি পুরস্কার দেয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নয়টি, ভারত তিনটি, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনামফিলিপাইনের একটি করে প্রকল্প রয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য ই-এশিয়ার ওয়েবসাইটে আবেদন চাওয়া হয়েছিল। শতাধিক প্রকল্প থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ে ৩৩টি প্রকল্প মনোনয়ন পায়। পুরস্কার পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে “সামর্থ্য বর্ধন” ক্যাটাগরিতে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতি, ভারতের রোটারি ডিসট্যান্স এডুকেশন প্রোগ্রাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভলপমেন্ট প্রকল্প, ভারতের গণিত শিক্ষকদের অভিনব ওয়েবসাইট গণিত গুরুজ এবং ইংরেজি শিক্ষার বিবিসি জানালা। অনুষ্ঠানে জনমুখী যোগাযোগ ক্যাটাগরিতে তিনটি পুরস্কার দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে আমার দেশ ই-শপ, জনশক্তি রফতানি ব্যুরোর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও ফিলিপাইনের টেলিসেন্টারের মাধ্যমে নারীশিক্ষা কার্যক্রম। তৃণমূল পর্যায়ে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানের জন্য ‘প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক লেনদেন উদ্ভাবন’ পদক পেয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। আর জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে দেয়া হয়েছে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]