আহসান মঞ্জিল

স্থানাঙ্ক: ২৩°৪২′৩০.৯৫″ উত্তর ৯০°২৪′২১.৮১″ পূর্ব / ২৩.৭০৮৫৯৭২° উত্তর ৯০.৪০৬০৫৮৩° পূর্ব / 23.7085972; 90.4060583
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিলের সামনের দৃশ্য
নির্মিত১৮৫৯-১৮৭২
স্থাপত্যশৈলীইন্দো-সারাসেনিক পুনর্জাগরণ স্থাপত্য
পরিদর্শন৩০ লক্ষ (২০০৩তে)
আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
আহসান মঞ্জিল
ঢাকা বাংলাদেশে অবস্থান
আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিলের পার্শ্বদৃশ্য

আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি।তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে এর নামকরণ করেন।১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে সমাপ্ত হয়। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এক অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি। এখন এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জামালপুর[২] পরগনার জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রংমহলটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। বাণিজ্য কুঠি হিসাবে এটি দীর্ঘদিন পরিচিত ছিল। এরপরে ১৮৩০-এ বেগমবাজারে বসবাসকারী নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন। এই বাসভবনকে কেন্দ্র করে খাজা আবদুল গনি মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানী নামক একটি ইউরোপীয় নির্মাণ ও প্রকৌশল-প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করান, যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিল। ১৮৫৯ সালে নওয়াব আবদুল গনি প্রাসাদটি নির্মাণ শুরু করেন যা ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’। ওই যুগে নবনির্মিত প্রাসাদ ভবনটি রংমহল ও পুরাতন ভবনটি অন্দরমহল নামে পরিচিত ছিল।[৩]

১৮৮৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রবল ভূমিকম্পে পুরো আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আহসান মঞ্জিল পুনর্নির্মাণের সময় বর্তমান উঁচু গম্বুজটি সংযোজন করা হয়। পুনর্নির্মাণ ও মেরামতের জন্য রাণীগঞ্জ থেকে উন্নতমানের ইট আনা হয়। মেরামতকর্ম পরিচালনা করেন প্রকৌশলী গোবিন্দ চন্দ্র রায়। [৩] সে আমলে ঢাকা শহরে আহসান মঞ্জিলের মতো এতো জাঁকালো ভবন আর ছিল না। এর প্রাসাদোপরি গম্বুজটি শহরের অন্যতম উঁচু চূড়া হওয়ায় তা বহুদূর থেকেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত।

Khwaja Salimullah with his family in front of Ahsan Manzil

১৮৯৭ সালে ১২ই জুন ঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। আহসান মঞ্জিলের দক্ষিণের বারান্দাসহ ইসলামপুর রোড সংলগ্ন নহবত খানাটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে। পরবর্তীকালে নবাব আহসানুল্লাহ তা পুনঃনির্মাণ করেন।[১][৪] ১৯৫২ সালে জমিদারী উচ্ছেদ আইনের আওতায় ঢাকা নওয়াব এস্টেট সরকার অধিগ্রহণ করে। কিন্তু নওয়াবদের আবাসিক ভবন আহসান মঞ্জিল এবং বাগানবাড়িসমূহ অধিগ্রহণের বাইরে থাকে। কালক্রমে অর্থাভাব ও নওয়াব পরিবারের প্রভাব প্রতিপত্তি ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার ফলে আহসান মঞ্জিলের রক্ষণাবেক্ষণ দুরূহ হয়ে পড়ে। ১৯৬০’র দশকে এখানে থাকা মূল্যবান দ্রব্যাদি নওয়াব পরিবারের সদস্যরা নিলামে কিনে নেয়।

স্থাপত্যশৈলী[সম্পাদনা]

এই প্রাসাদের ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ আছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ। মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে সুন্দর। একইভাবে উপরে ওঠার সিঁড়িগুলোও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দু’টি মনোরম তোরণ আছে যা সবচেয়ে সুন্দর। আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরে দু’টি অংশ আছে। বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে আছে নাচঘর ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। নিচতলার দরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ রয়েছে।[৫]

১ মিটার উঁচু বেদির ওপর স্থাপিত দ্বিতল প্রাসাদ ভবনটির পরিমাপ ১২৫ দশমিক ৪ মিটার এবং ২৮ দশমিক ৭৫ মিটার। নিচতলায় মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ৫ মিটার ও দোতলায় ৫ দশমিক ৮ মিটার। প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একতলার সমান উঁচু করে গাড়ি বারান্দা। দক্ষিণ দিকের গাড়ি বারান্দার ওপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে একটি সুবৃহৎ খোলা সিঁড়ি সম্মুখের বাগান দিয়ে নদীর ধার পর্যন্ত নেমে গেছে। সিঁড়ির সামনে বাগানে একটি ফোয়ারা ছিল, যা বর্তমানে নেই। প্রাসাদের উভয় তলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলানসহযোগে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা ও কক্ষগুলোর মেঝে মার্বেল পাথরে শোভিত। [৩]

আহসান মঞ্জিলের গম্বুজটি নির্মাণের জন্য প্রথমে নিচতলার বর্গাকার কক্ষটির চারকোণায় ইট দিয়ে ভরাট করে গোলাকার রূপ দেওয়া হয়েছে। এর ওপর দোতলায় নির্মিত অনুরূপ গোলাকার কক্ষের ঊর্ধ্বাংশে স্কুইঞ্চের মাধ্যমে ছাদের কাছে কক্ষটিকে অষ্টভূজাকৃতির করা হয়েছে। এই অষ্টকোণ কক্ষটিই ছাদের ওপর গম্বুজের পিপায় পরিণত হয়েছে। পরিশেষে অষ্টবাহুর সূচ্যগ্র মাথাগুলোকে কেন্দ্রের দিকে ক্রমে হেলিয়ে চূড়াতে নিয়ে কুমদ্র কলির আকারের গম্বুজটি তৈরী করা হয়েছে।ভূমি থেকে গম্বুজ শীর্ষের উচ্চতা ২৭ দশমিক ১৩ মিটার। [৩]

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অযত্ন ও অপব্যবহারে আহসান মঞ্জিল ধ্বংসপ্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে। এমতাবস্থায় ১৯৭৪ সালে ঢাকা নওয়াব পরিবারের উত্তরসূরিরা আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ নিলামে বিক্রির পরিকল্পনা করেন। সরকারের ভূমি প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে নিলাম বিক্রির প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু শেখ মুজিব আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্য সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালের ২রা নভেম্বর এটি নিলামে বিক্রির প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

‘আহসান মঞ্জিলের সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন ও জাদুঘরে রুপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরম্ভ হয় ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে।জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও স্থাপত্য নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য আহসান মঞ্জিল ভবনটি সংস্কার করে জাদুঘরে রুপান্তর ও প্রাসাদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভবনটির পারিপার্শ্বিক এলাকার উন্নয়ন করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রকল্পের নির্বাহী সংস্থা ছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরগণপূর্ত অধিদপ্তরের ওপর যৌথ ভাবে ন্যস্ত ছিল। সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক সম্পাদিত হয়। নিদর্শন সংগ্রহ ও প্রদর্শনী উপস্থাপনের মাধ্যমে জাদুঘরে রুপান্তরের কাজ সম্পাদন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ ও তৎসংলগ্ন চত্বর সরকার অধিগ্রহণ করার মাধ্যমে সেখানে জাদুঘর তৈরীর কাজ শুরু হয়। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

জাদুঘরের গ্যালারীসমুহ[সম্পাদনা]

রংমহলের ৩১টি কক্ষের ২৩টিতে প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়েছে। ৯টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে প্রাপ্ত ও মি. ফ্রিৎজকাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের তোষাখানা ও ক্রোকারীজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র ও নওয়াব এস্টেটের পুরোনো অফিস এডওয়ার্ড হাউজ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শনীতে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উক্ত আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরী ও সমসাময়িককালের সাদৃশ্যপূর্ণ নিদর্শনাদি ক্রয় ও সংগ্রহ করে গ্যালারীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে এ যাবৎ সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা মোট ৪০৭৭টি।

গ্যালারী ১: আহসান মঞ্জিল পরিচিতি (১)[সম্পাদনা]

আহসান মঞ্জিলের নিচ তলার পূর্বাংশে অবস্থিত কক্ষটিতে ভবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সংস্কার-পূর্ব ও পরবর্তী আলোকচিত্র ও পেইন্টিং প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়া আছে তারজালি কাজের তৈরী প্রাসাদের একটি মডেল।

গ্যালারী ২: আহসান মঞ্জিল পরিচিতি (২)[সম্পাদনা]

প্রাসাদ ভবনের সাথে জড়িত উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্যাদি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এর আদি স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য, বিবর্তিত রূপ আলোকচিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়াও আছে প্রাসাদে ব্যবহৃত কাটগ্লাসের ঝাড়বাতি ও তৈজসপত্রের নমুনা।

গ্যালারী ৩: প্রাসাদ ডাইনিং রুম[সম্পাদনা]

আহসান মঞ্জিলের ডাইনিং রুম

নওয়াবদের আনুষ্ঠানিক ভোজন কক্ষ। লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ১৯০৪ সালের ফ্রিৎজকাপের তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী কক্ষটি সাজানো হয়েছে। এই কক্ষে প্রদর্শিত চেয়ার, টেবিল, ফ্যান ও লাইট ফিটিংসগুলো মূলানুরূপে তৈরী অথবা সংগৃহীত হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত বড় বড় আলমারী, আয়না, কাঁচ ও চীনামাটির তৈজসপত্রগুলো প্রায় সবই আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত নওয়াবদের ব্যবহৃত মূল নিদর্শন।

গ্যালারী ৪: গোলঘর (নিচতলা)[সম্পাদনা]

আহসান মঞ্জিল প্রাসাদশীর্ষে দৃশ্যমান সুউচ্চ গম্বুজটি এই গোলাকার কক্ষের উপরেই নির্মিত। দক্ষিণ পোর্চের নিচে থেকে বারান্দা পেরিয়ে এই গোলাকার কক্ষ দিয়ে দোতলায় উঠা-নামার জন্য নির্মিত বৃহৎ কাঠের সিঁড়িতে যাওয়া যায়। হাতির মাথার কঙ্কালসহ এ কক্ষে প্রদর্শিত ঢাল- তরবারি, অলংকৃত কাঠের বেড়া ইত্যাদি আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত নওয়াবদের ব্যভৃত মূল নিদর্শন।

গ্যালারী ৫: প্রধান সিঁড়িঘর (নিচতলা)[সম্পাদনা]

নিচতলার সিড়িঘর

বাংলার স্থাপত্যে এরূপ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কাঠের সিঁড়ি সাধারণত দেখা যায় না। ১৯০৪ সালে গৃহীত আলোকচিত্র অনুযায়ী সিঁড়িটি সংস্কার সাধন ও মূলানুরূপ নিদর্শন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত বর্শা- বল্লম, ঢাল-তলোয়ারগুলো আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত। নওয়াবদের আমলে এই সিঁড়িকক্ষে স্বর্ণমণ্ডিত ভিজিটর বুক রাখা হতো।

গ্যালারী ৬: আহসানুল্লাহ মেমোরিয়াল হাসপাতাল[সম্পাদনা]

নওয়াব আহসানুল্লাহর কন্যা নওয়াবজাদী আখতার বানু বেগম ঢাকার টিকাটুলিতেস্যার আহসানুল্লাহ মেমোরিয়াল হসপিটাল’ নামে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৫ সালের ৯ জুলাই বাংলার তৎকালীন গভর্নর হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। আহসান মঞ্জিল অধিগ্রহণের সময় উক্ত হাসপাতালে ব্যবহৃত বেশকিছু সরঞ্জামাদি ও খাতাপত্র এখানে পাওয়া যায়, যার কিছু এই কক্ষে প্রদর্শন করা হয়েছে।

গ্যালারী ৭: মুসলিম লীগ কক্ষ[সম্পাদনা]

এই বৃহৎ কক্ষটি নওয়াবদের সময় দরবার হল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চায়েত প্রথানুযায়ী নওয়াবগণ এখানে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন। নবাব সলিমুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ ও ‘বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ’ এর সাথে ভবনটি বিশেষভাবে জড়িত। এই প্রেক্ষিতে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এই গ্যালারীতে তুলে ধরা হয়েছে। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাকালীন শাহবাগের সম্মেলনে আগত সর্বভারতীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দের একটি বড় তৈলচিত্র এই গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে। নওয়াবদের সময়কার কিছু তৈজসপত্র ও আনুষঙ্গিক নিদর্শন কয়েকটি শোকেসে প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়া ইটালি থেকে দেওয়া ঢাকার নওয়াবদের উপহার একটি সুন্দর অষ্টকোণ টেবিল এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।

গ্যালারী ৮: বিলিয়ার্ড কক্ষ[সম্পাদনা]

১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী মূলানুরূপ বিলিয়ার্ড টেবিল, লাইট ফিটিংস, সোফা ইত্যাদি তৈরি করে কক্ষটি সাজানো হয়েছে। দেয়ালে প্রদর্শিত নওয়াবদের আমলের বিভিন্ন জীব-জন্তুর শিংগুলো এডওয়ার্ড হাউজ থেকে সংগৃহীত। আউটডোর খেলাধুলার পাশাপাশি ঢাকার নওয়াবরা ইনডোর খেলারও যে বিশেষ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন, প্রাসাদ অভ্যন্তরের এই কক্ষটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

গ্যালারী ৯: সিন্দুক কক্ষ[সম্পাদনা]

ঢাকার নওয়াবের কোষাগার হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষটিকে তাদের প্রাচুর্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সাজানো হয়েছে। বৃহদাকার লোহার সিন্দুকসহ এখানে থাকা সিন্দুক ও কাঠের আলমারীগুলো নওয়াবদের আমলের নিদর্শন।

গ্যালারী ১০: নওয়াব পরিচিতি[সম্পাদনা]

ঢাকার নওয়াব পরিবারের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের পরিচিতি এই গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে। প্রতিকৃতি ও লাইফ সাইজ তৈলচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া এই গ্যালারীতে ঢাকার নওয়াবদের কাশ্মীরবাসী আদিপুরুষ থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত বংশধরের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা দেখিয়ে একটি বংশতালিকা প্রদর্শিত হয়েছে।

গ্যালারী ১০(ক): কোনার সিঁড়িঘর[সম্পাদনা]

এখানে নিচে এবং উপরে দু’টি কক্ষ ছিল। দর্শক চলাচলের সুবিধার্থে তা ভেঙ্গে কংক্রিটের সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। এখানে থাকা বড় বড় আলমারী ও প্রদর্শিত তৈজসপত্রগুলো নওয়াবদের আমলের নিদর্শন।

গ্যালারী ১১: প্রতিকৃতি (১)[সম্পাদনা]

নানা কাজে ঢাকার খাজা পরিবারের লোকেরা সমসাময়িক কালের যেসব খ্যাতনামা ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন তাঁদেরকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরাই এই গ্যালারীর পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। এছাড়া নওয়াবদের সমসাময়িককালে দেশ বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, ভূস্বামী, বুদ্ধিজীবী, সমাজ সংস্কারক, কবি, সাহিত্যিকদের প্রতিকৃতি এখানে রাখা হয়েছে।

গ্যালারী ১২: নওয়াব সলিমুল্লাহ স্মরণে[সম্পাদনা]

নওয়াব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখানোর উদ্দেশ্যে কক্ষটিকে ‘সলিমুল্লাহ স্মরণে’ গ্যালারী হিসেবে সাজানো হয়েছে। সলিমুল্লাহর ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র ও তথ্যাদি দ্বারা এই গ্যালারী সাজানো হয়েছে। এছাড়া নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াবদের ব্যক্তিগত/ অফসিয়ালি ব্যবহার্য দ্রব্যাদি এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে।

গ্যালারী ১৩: প্রতিকৃতি (২)[সম্পাদনা]

এই কক্ষ দিয়ে নওয়াব পরিবারের সদস্যগণ আহসান মঞ্জিলের পূর্বাংশের রঙমহল থেকে গ্যাংওয়ের মাধ্যমে পশ্চিমাংশে যাতায়াত করতেন। গ্যালারী নং-১১ এর অনুরূপ নওয়াবদের সমসাময়িক বিশিষ্ট মনীষীদের প্রতিকৃতি দিয়ে এই কক্ষটি সাজানো হয়েছে। এছাড়া এই গ্যালারীর শো-কেসে প্রদর্শিত হাতির দাঁতের নিদর্শনগুলো আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত নওয়াব পরিবারের ব্যবহৃত মূল নিদর্শন।

গ্যালারী ১৪: হিন্দুস্থানী কক্ষ[সম্পাদনা]

১৯০৪ সালে ফ্রিৎজকাপের তোলা আলোকচিত্রে কক্ষটিকে হিন্দুস্থানী রুম বলা হয়েছে। উক্ত আলোকচিত্রের সাথে মিলিয়ে কক্ষটি সাজানোর অপেক্ষায় আছে।

গ্যালারী ১৫: প্রধান সিঁড়িঘর (দোতলা)[সম্পাদনা]

দোতলার সিড়িঘর

প্রাসাদের নিচতলা থেকে উপর তলায় উঠানামার জন্য তৈরী কাঠের সিঁড়ির উপরাংশের দৃশ্য। ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী সিঁড়িটি সংস্কার করা হয়েছে। সিঁড়ির রেলিঙ-এ ঢালাই লোহার তৈরী আঙ্গুর লতাগুচ্ছ নকশা সংবলিত বালুস্টারগুলি মূলানুরূপে তৈরি। ছাদে দৃশ্যমান কাঠের অলঙ্কৃত সিলিং নওয়াবদের আমলের মূল বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সংস্কার করা হয়ছে।

গ্যালারী ১৬: লাইব্রেরী কক্ষ[সম্পাদনা]

কক্ষটি ছিল নওয়াবদের ব্যক্তিগত প্রাসাদ লাইব্রেরী। ১৯০৪ খিস্টাব্দের আলোকচিত্র অনুযায়ী কক্ষটি সাজানো হবে। নওয়াবদের ব্যবহৃত আইন, বিচার, উপন্যাস ও ক্রীড়া বিষয়ক দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের এক বিশাল সংগ্রহ এখানে রয়েছে।

গ্যালারী ১৭: কার্ড রুম[সম্পাদনা]

ঢাকার নওয়াবদের তাস খেলার কক্ষ। ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের অনুকরণে মূলানুরূপে সাজানো হবে।

গ্যালারী ১৮: নওয়াবদের অবদান, ঢাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

নওয়াবগণ কর্তৃক ঢাকায় পানীয় জল সরবরাহ বিষয়ক নিদর্শন ও তথ্যাদি দিয়ে গ্যালারীটি সাজানো হয়েছে। নওয়াবদের ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্বে ঢাকায় ফিল্টার করা পানীয় জল ব্যবহারের কোনো সুযোগ ছিল না। জনকল্যাণমনা নওয়াব আবদুল গনি আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা শহরে ফিল্টার পানির কল স্থাপন করেন। পানীয় জলের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রকারের যেসব নিদর্শন আহসান মঞ্জিলে এবং এডওয়ার্ড হাউজে পাওয়া গেছে সে সব নিদর্শন দিয়ে গ্যালারীটি সাজানো হয়েছে। ঢাকা ওয়াটার ওয়ার্কস-এর কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্র এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।

গ্যালারী ১৯: স্টেট বেডরুম[সম্পাদনা]

বিশিষ্ট ও রাজকীয় অতিথিদের বিশ্রামের জন্য এ প্রাসাদে স্টেট বেডরুম নির্দিষ্ট থাকতো। এরূপ একটি মাত্র কক্ষের আলোকচিত্র পাওয়া গেছে এবং তার নমুনা প্রদর্শনের জন্য ছবির দৃশ্যানুযায়ী এই কক্ষটি সাজানো হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত আসবাবপত্রগুলো মূলানুরূপে নতুনভাবে তৈরী।

গ্যালারী ২০: নওয়াবদের অবদান, ঢাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

এই কক্ষটিতে নওয়াবগণ কর্তৃক ঢাকায় প্রথম বিদ্যুৎ ব্যবস্থা প্রবর্তন বিষয়ক নিদর্শন, তথ্য ও চিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। ১৯০১ সালের পূর্বে ঢাকায় কোন বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা ছিল না। সন্ধ্যা নামলে সারা ঢাকা শহর ভূতুড়ে অন্ধকারে ছেয়ে ফেলতো। নগরবাসীর দুর্দশা লাঘব, ঢাকার সৌন্দর্যবৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের জন্য নওয়াব আহসানুল্লাহ ১৯০১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা ব্যয় করে ঢাকায় প্রথম বিজলি বাতির ব্যবস্থা করেন। দেশে দেশে জনকল্যাণমূলক কাজে নওয়াবদের অর্থদানের একটি বিস্তারিত তালিকাও এই কক্ষে প্রদর্শিত হচ্ছে।

গ্যালারী ২১: প্রাসাদ ড্রয়িং রুম[সম্পাদনা]

প্রাসাদ ড্রয়িং রুমটি ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলে আগত নওয়াবের বিশেষ অতিথিবৃন্দকে এখানে অভ্যর্থনা জানানো হতো। দোতলায় এই কক্ষটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এর মেঝেটি কাঠের পাটাতনে তৈরী এবং ছাদে কাঠের তৈরী কারুকার্যম্য ভল্টেড সিলিং। সিলিং-এর সাথে লাগানো বৃহৎ বাটির ন্যায় কাটগ্লাসের ঝাড়বাতিগুলো নওয়াবদের সময়কার। তবে অন্যান্য আসবাবপত্র, ঝাড়বাতি ও লাইট ফিটিংসগুলো ছবির সাথে মিলিয়ে তৈরী করা হয়েছে। তৈজসপত্র ও ফুলদানীসহ এখানে প্রদর্শিত নিদর্শনের অধিকাংশই আহসান মঞ্জিল ও এডওয়ার্ড হাউজে প্রাপ্ত নওয়াবদের সময়কালের নিদর্শন।

গ্যালারী ২২: গোলঘর (দোতলা)[সম্পাদনা]

প্রাসাদের শীর্ষে দৃশ্যমান সুউচ্চ গম্বুজটি এই কক্ষের উপরেই নির্মিত। এ কক্ষটিকে কেন্দ্র করে পুরো রঙমহলকে দুটি সুষম অংশে বিভক্ত করা যায়। এখানে প্রদর্শিত অস্ত্রশস্ত্রগুলো আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত। দোতলার এই কক্ষটির সম্মুখস্থ বারান্দা থেকেই প্রাসাদের দক্ষিণদিকের বৃহৎ খোলা সিঁড়িটি ধাপে ধাপে বুড়িগঙ্গার পাড়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য সংবলিত মনোরম ও বিস্তৃত অঙ্গনে গিয়ে মিশেছে।

গ্যালারী ২৩: বলরুম (নাচঘর)[সম্পাদনা]

১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্র অনুযায়ী মূলানুরূপে এ গ্যালারীটি সাজানো হয়েছে। উনিশ শতকে ঢাকা শহরে এত বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ নাচঘরের দৃষ্টান্ত আর ছিল না। ঢাকার নওয়াবগণ ছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় প্রকার সংস্কৃতির সমঝদার। নওয়াব আবদুল গনি নাচ, জ্ঞান ও কবিতা চর্চার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তার পুত্র নওয়াব আহসানুল্লাহ নিজেই একজন উঁচুদরের সঙ্গীতজ্ঞ, বাদক ও কবি ছিলেন। নওয়াবদের মানসিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই কক্ষে একত্রে পাশাপাশি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় প্রকার নাচ-গানের একশটি কাল্পনিক দৃশ্য বৃহদাকার তৈলচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এখানে প্রদর্শিত সিংহাসন ও ক্রিস্টাল চেয়ার- টেবিলগুলো নওয়াবদের আমলের মূল নিদর্শন। তবে অন্যান্য আসবাবপত্র ও আয়নাগুলো ছবিতে দৃশ্যমান আসবাবপত্রের অনুকরণে তৈরী।

সংক্ষেপে আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস[সম্পাদনা]

  • ১৭২০- বর্তমান আহসান মঞ্জিল এলাকায় মোগল জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহর বাগানবাড়ি ছিল।
  • ১৭৪০- ফরাসী বণিকগণ শেখ ইনায়েতউল্লাহর পুত্র শেখ মতিউল্লাহর নিকট থেকে এখানে বাণিজ্য কুঠি তৈরী করে।
  • ১৭৫৭- পলাশীর যুদ্ধের পর উক্ত ফরাসী কুঠিটি ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং পরে তা ফেরত দেওয়া হয়।
  • ১৮৩০- খাজা আলীমুল্লাহ ফরাসীদের নিকট থেকে কুঠিবাড়িটি ক্রয়পূর্বক নিজের বাসভবনোপযোগী করে সংস্কার করেন।
  • ১৮৫৯- নওয়াব আবদুল গনি ফরাসী কুঠির পূর্ব পার্শ্বে নতুন প্রাসাদ নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৮৬২ সালে শেষ হয় এবং তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামে নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’।
  • ৭ এপ্রিল, ১৮৮৮- প্রবল টর্নেডোর আঘাতে আহসান মঞ্জিলের বযাপক ক্ষতি হয়। নওয়াব আহসানুল্লাহ সংস্কার ও উন্নয়ন করেন। এ সময় রংমহলের উপরে সুদৃশ্য গম্বুজটি সযোজন করা হয়।
  • ১২ জুন, ১৮৯৭- ভয়াবহ ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং নওয়াব আহসানুল্লাহ মেরামত করেন।
  • ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৪- ভাইসরয় লর্ড কার্জন বঙ্গ বিভাগের পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে পূর্ববঙ্গ সফরে এসে আহসান মঞ্জিলে নবাব সলিমুল্লাহর অতিথি হিসেবে অবস্থান করেন।
  • ৩ মার্চ, ১৯২০- কেন্দ্রীয় খেলাফত কমিটির নেতা মওলানা শওকত আলীমাওলানা আব্দুল কালাম আজাদের উপস্থিতিতে নবাব হাবিবুল্লাহ আহসান মঞ্জিল প্রাঙ্গণে এক বিরাট সভা করেন।
  • ১৪ মার্চ, ১৯৫২- জমিদারী উচ্ছেদ আইনের আওতায় সরকার ঢাকা নওয়াব এস্টেট অধিগ্রহণ করে। তবে আহসান মঞ্জিলসহ নওয়াব বাগানবাড়িগুলো অধিগ্রহণের বাইরে থাকে।
  • ১৯৬০- সংস্কারাভাবে আহসান মঞ্জিল জরাজীর্ণ হয় এবং এখানে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র নওয়াব পরিবারের সদস্যরা নিলামে কিনতে থাকে।
  • ১৯৭৪- নওয়াব পরিবারের উত্তরাধিকারীগণ সংরক্ষণে অপারগ হয়ে আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
  • ২ নভেম্বর, ১৯৭৪- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রির প্রস্তাব বাতিল করে দেন এবং সংস্কার পূর্বক এখানে জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন।
  • ৩ নভেম্বর, ১৯৮৫- সরকার সামরিক বিধি জারির মাধ্যমে আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ ও তৎসংলগ্ন ৫.৬৫ একর সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে যার মধ্যে ৪.৯৬ একর জাদুঘরকে দেওয়া হয়।
  • ৩ মার্চ, ১৯৮৬- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আহসান মঞ্জিল বাস্তবায়নের সার্বিক দায়িত্ব বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরকে দেয়। তবে ভবনাদি সংস্কারের কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তর করবে বলে জানানো হয়।
  • ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২- প্রথম পর্যায়ের উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ শেষে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর দর্শকদের জন্য খুলে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া
  • ১৯৯৪- প্রথম পর্যায়ের সংস্কারের পর বিদ্যমান অবকাঠামোগত ত্রুটি বিচ্যুতিমুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে।
  • ১৯৯৮- কমিটির সুপারিশমতো ত্রুটিমুক্ত করার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কার উন্নয়ন কাজে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে সম্পৃক্ত করা হয়।
  • ২০০৫-২০০৬- দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কার কাজ শুরু হয় এবং আংশিক কাজ বাকি রেখে ২০০৬ সালে তা শেষ হয়।
  • ২০০৮- অসমাপ্ত কাজ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজস্ব খাত থেকে সমাপ্ত করার এবং সংস্কারকৃত কক্ষগুলোতে গ্যালারী চালুর সিদ্ধান্ত।
  • ১৩ নভেম্বর, ২০১০- সংস্কারকৃত গ্যালারী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আবুল কালাম আজাদ।

টিকেট মূল্য[সম্পাদনা]

আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে দর্শনার্থীদের নির্দিষ্ট মুল্যের টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হয়। ভ্রমণ গাইড ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে অনুসারে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রবেশ টিকেট মূল্য ১০ টাকা, প্রাপ্ত বয়স্কদের জনপ্রতি টিকেট মূল্য চল্লিশ টাকা। বিদেশী পর্যটকদের প্রবেশ টিকেট মূল্য ৫০০ টাকা,সার্কভুক্ত দর্শনার্থীদের জন্য ৩০০ টাকা। প্রতিবন্ধীদের আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে টিকেট কাটতে হয় না।

গ্যালারি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মুসলিম বাংলার অপ্রকাশিত ইতিহাস: ঢাকার নওয়াব পরিবারের ইতিহাস - মোঃ আলমগীর, খোশরোজ কিতাবমহল, ১৫ বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০। ফেব্রুয়ারি ২০১৪। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৮৪৫-০২-৮]
  2. প্রথম আলো, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯; পড়াশোনা, পাতা-১৬, আহসান মঞ্জিল।
  3. প্রথম আলো, ৯ মে, ২০১৮; পড়াশোনা, পাতা-১২, জানার আছে অনেক কিছু: আহসান মঞ্জিল।
  4. ফজলুর রহমান, "শতাব্দীর দর্পণ", ২০০০, পৃষ্ঠা ৩১।
  5. শিশু বিশ্বকোষ

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]