আলপনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভাষা আন্দোলন দিবসে বাংলাদেশে আলপনার কাজ

আলপনা বা আলিম্পন্ হল লেপন করে করা কারুকার্য; সাধারণত একটি বা দুটি রঙের সহজ বিমূর্ত (abstract) রেখাচিত্র। বাড়ির চৌকাঠে, আঙিনায়, বিয়ের পিঁড়িতে, হিন্দু পূজা মণ্ডপে ইত্যাদি জায়গায় সাদা আলপনা খুব চল আছে। এটি মূলত ক্ষণস্থায়ী লোকশিল্প। সমাজজীবনে প্রচলিত নানাবিধ অনুষ্ঠান ও গৃহসজ্জার জন্য আলপনা অঙ্কন করা হয়।

প্রকার[সম্পাদনা]

কাঠগুঁড়ো দিয়ে তৈরি আলপনাতে বেলেপাথরের যুগল মূর্তির প্রতিকৃতি

বাংলার আলপনায় চিরাচরিতভাবে ভিজে চালগুঁড়ো সাদা রং হিসাবে ব্যবহার হয়। এছাড়া তেল-সিঁদুর লাল, এবং হলুদবাটা হলদে রঙ হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। সাধারণত চালের গুঁড়োর পিটালীর মধ্যে ছোট এক টুকরো কাপড় কিংবা পাটের টুকরো ভিজিয়ে নিয়ে অনামিকা দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। আলপনার ছবিগুলো পুরু রেখায় তৈরি ও দ্বিমাত্রিক। সাধারণত মেঝের উপরই আলপনা করা হয়। স্মরণাতীত কাল থেকেই বাংলার মহিলারা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদির উদ্দেশ্যেই আলপনার অনুশীলন করে আসছেন। বিষয়বস্তু হিসেবে আলপনায় আঁকা হয় পদ্ম, ধানের গুচ্ছ, বৃত্তায়িত রেখা, সূর্য, মই, লক্ষ্মীর পদচিহ্ন,শ্রীকৃষ্ণের শিশু পদচিহ্ন, মাছ, পান, শঙ্খলতা ইত্যাদি। বর্তমান যুগে মুসলমানেরাও বিবাহ ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলপনা অঙ্কন করে থাকেন।

অনেক পণ্ডিতই ব্রত ও পূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলপনাকে প্রাক-আর্য সময়কার উৎপত্তি বলে চিহ্নিত করেন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মিনার সংলগ্ন সড়কগুলিতে আলপনা করা হয়। প্রচলিত রীতির আওতার মধ্যে থেকেও অনুষ্ঠান, পটভূমি ও শৈল্পিক কারুকার্যে আলপনার রূপভেদ লক্ষ করা যায়। আধুনিক আলপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিমূর্ত, আলংকরিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বড় আলপনা[সম্পাদনা]

ভারতকে হারিয়ে ১০ কি.মি. দৈর্ঘ্য আলপনা দিয়ে নতুন রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও কে স্মরণীয় করতে অভিনব এক পন্থা অবলম্বন করে গাইবান্ধার শিক্ষার্থীরা। সেই পন্থার অংশ হিসাবে পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব গাইবান্ধার (পুসাগ) উদ্যোগে গাইবান্ধা থেকে বাদিয়াখালি টু ফুলছড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে আলপনা আঁকে তাঁরা। ভিডিও- [২]

এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম যেই আলপনাটি আঁকা হয়েছে তার দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ২.৭৩ কিলোমিটার। যে টি ২০১৭ সালে আঁকা হয়েছিল ভারতের কলকাতার নাদিয়া জেলার ফুলিয়ায়।

তবে নাদিয়ার আগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলপনার রেকর্ডটি ছিল বাংলাদেশের দখলে। আর যেটির দৈর্ঘ্য ছিল ১.৫ কিলোমিটার। তাই বলা যায় গাইবান্ধার শিক্ষার্থীদের আঁকা ১০ কিলোমিটার আলপনার মাধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আবার ফিরে পেতে যাচ্ছে তাদের হারানো গৌরব।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • বাংলাপিডিয়া, বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]