আবুল কাসেম (ভাষা সৈনিক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোহাম্মদ আবুল কাসেম
জন্মজুন ২৮ ১৯২০
মৃত্যু১১ মার্চ ১৯৯১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণরাজনীতিবিদ, লেখক, সমাজসেবক
দাম্পত্য সঙ্গীমমতাজ কাসেম
পুরস্কারবাংলা একাডেমী পুরস্কার
একুশে পদক
স্বাধীনতা পদক

প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আবুল কাসেম (২৮ জুন ১৯২০ - ১১ মার্চ ১৯৯১) একজন প্রথিতযশা বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, লেখক, সমাজসেবক এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।[১][২] তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্থপতি এবং তমদ্দুন মজলিসবাঙলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মোহাম্মদ আবুল কাসেম ১৯২০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৯ সালে "বরমা ত্রাহি-মেনকা উচচ বিদ্যালয়" থেকে তিনটি বিষয়ে লেটার সহ প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৪১ সালে "চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ" থেকে আই এস সি-তে মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৪৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদার্থ বিদ্যায় স্নাতক ও ১৯৪৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি বিখ্যাত গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অধীনে স্নাতকোত্তরের থিসিস করেন।[২][৩]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ভাষা সৈনিক আবুল কাসেমকে প্রদানকৃত একুশে পদকের সনদ।

প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। প্রভাষক হিসাবে তিনিই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় ক্লাস নেন। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রভাষক পদে ছিলেন।[৪]

প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম এদেশের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গণে একজন বিরল ব্যক্তিত্ব ৷ ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের লক্ষে বাংলা ভাষায় উচ্চ শিক্ষা দানের জন্য তিনি বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ৷ তিনি বাংলায় ৪০টি পাঠ্য পুস্তক রচনা করেন এবং বাংলা একাডেমী, আর্ট কলেজ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সিটি কলেজসহ প্রায় অর্ধশতাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সহিত সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন ৷ তিনি প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য থাকাকালীন ১৯৫৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর প্রথম সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ও সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা চালু করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহীত হয়৷[২]

তমদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা সাব-কমিটি এবং পরে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠনের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা সৃষ্টি হয়, তিনি সে আন্দোলনের পথিকৃৎ্ ছিলেন৷ ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন বিকাশ লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাসেম ছিলেন বাংলা ভাষার জাগ্রত বিবেকতুল্য ৷

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

একজন প্রতিভাবান লেখক, প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য এবং শিক্ষা, ইসলাম, সংস্কৃতি ও রাজনীতি বিজ্ঞানের পাঠ্যবই সহ প্রায় ১০০টি বই রচনা করেন। এর মধ্যে ৪০টি পদার্থবিদ্যার পাঠ্যবই এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয় রয়েছে।

তার সুপরিচিত বই কিছু হলো-

বাংলা[সম্পাদনা]

ইসলাম
* ইসলাম কি দিয়েছে ও কি দিতে পারে ১৯৫২
* বুঝে নামাজ পড় ১৯৬৮
* ইসলামের রাষ্ট্রিয় আদর্শ ১৯৮০
* ইসলামী মেনিফেস্টো ১৯৫২
* একমাত্র পথ ১৯৪৯
* ঘোষণা ১৯৫২
ইসলাম ও বিজ্ঞান
* আধুনিক চিন্তাধারা ১৯৬৮
* বিজ্ঞান বস্তুবাদ ও আল্লাহর অস্তিত্ব ১৯৬৮
* বিবর্তনবাদ সৃষ্টিতত্ত্ব ও আল্লাহর অস্তিত্ব ১৯৬৯
* বিজ্ঞান সমাজ ধর্ম ১৯৮২
অর্থনীতি
* কোরানিক অর্থনীতি ১৯৭১
* পাকিস্তানের অর্থনীতি ১৯৬৫
আন্তর্জাতিক রাজনীতি
*তৃতীয় ব্লক আন্দোলন ১৯৫২
ইতিহাস
*পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা: বাংলা না উর্দু? ১৯৪৭
*ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ১৯৫২
*আমাদের অতীত ১৯৫৭
বাংলা কলেজ সম্পর্কীয়
* বাংলা কলেজের চাকরির নিয়মাবলী ১৯৬৮
* বাংলা কলেজ প্রসঙ্গে ১৯৬৮ (২য় সংস্করণ)
* বাংলা কলেজ কি, কেন, এবং কিরুপ ১৯৬২
* ঈর্ষা বনাম সাধনা ১৯৬৫
* বাংলা কলেজের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ ১৯৬৪
অন্যান্য
* শাসনতান্ত্রিক মুলনীতি ১৯৬৮
* বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে শ্রেণীসংগ্রাম ১৯৫২
* মুক্তি কোন পথে ১৯৫২
* ইসলামী রাষ্ট্রনীতি ১৯৬৭
* আমাদের ভাষার রুপ ১৯৬২
* বাংলা প্রচলনের কয়েকটি সমস্যা ১৯৬৭
* অফিস-আদালত ও শিক্ষার বাহনরুপে বাংলা প্রচলনের সমস্যা
* সহজ বাংলা ১৯৭৪
* একুশ দফার রুপায়ন ১৯৫৩
* কৃষক ভাইয়ের জমি চাই অজানা
* শ্রমিক ভাইয়ের জমি চাই অজানা
* দুইটি প্রশ্ন ১৯৫৫
* ভুলের পুনরাবৃত্তি ১৯৫৩
* রাষ্টবিজ্ঞান ১৯৬৪
* সংগঠন ১৯৫২
* আধুনিক কারবার পদ্ধতি ১৯৬৬
* ছাত্র আন্দোলন ১৯৫১
* প্রবন্ধ মঞ্জুষা ১৯৮৯
পাঠ্যপুস্তক
* উচ্চমাধ্যমিক পদার্থিকা, ১ম খন্ড ১৯৬৪
* উচ্চমাধ্যমিক পদার্থিকা, ২য় খন্ড ১৯৬৪
* উচ্চমাধ্যমিক ল্যাবরেটরী পদার্থিকা ১৯৬৪
* উচ্চমাধ্যমিক রসায়ন, ১ম খন্ড (অজৈব) ১৯৬৫
* উচ্চমাধ্যমিক রসায়ন, ২য় খন্ড (জৈব) ১৯৬৫
* উচ্চমাধ্যমিক ল্যাবরেটরী রসায়ন ১৯৬৪
* উচ্চমাধ্যমিক এলজেব্রা ১৯৬৪
* উচ্চমাধ্যমিক ক্যালকুলাস ১৯৬৬
* উচ্চমাধ্যমিক জ্যামিতি ১৯৬৪
* উচ্চমাধ্যমিক ডিনামিক্স ১৯৬৮
* উচ্চমাধ্যমিক ত্রিকোনমিতি ১৯৬৪
* উচ্চমাধ্যমিক স্টেটিস্ক ১৯৬৭
* বিজ্ঞান প্রকাশ (৭ম ও ৮ম শ্রেণীর) ১৯৪৯
* বিজ্ঞান প্রকাশ (৯ম ও ১০ম শ্রেণীর) ১৯৪৯
* মাধ্যমিক ত্রিকোনমিতি ১৯৬৪
* ডিগ্রি পদার্থিকা ১৯৭১
* সহজ পদার্থিকা, ১ম খন্ড ১৯৭৪
* সহজ পদার্থিকা, ২য় খন্ড ১৯৭৪
* সহজ রসায়ন, ১ম খন্ড ১৯৬২
* সহজ রসায়ন, ২য় খন্ড ১৯৬২
* ল্যাবরেটরী রসায়ন (৯ম ও ১০ম শ্রেণীর) ১৯৭৫
* ল্যাবরেটরী পদার্থবিজ্ঞান (৯ম ও ১০ম শ্রেণীর) ১৯৭৫
* ল্যাবরেটরী জীববিজ্ঞান (৯ম ও ১০ম শ্রেণীর) ১৯৭৫

ইংরেজি[সম্পাদনা]

ইসলাম ও বিজ্ঞান
* Islam Science & Modern Thoughts ১৯৭৫
* Universal Ideology in the Light of Modern Thought অজানা
পাঠ্যপুস্তক
* Degree Physics ১৯৭০
* General Properties of Matter ১৯৫৫
* New Physics (1st part) ১৯৫৫, ষষ্ঠ সংস্করণ ১৯৬৬
* New Physics (2nd part) ১৯৫৬, ষষ্ঠ সংস্করণ ১৯৬৬
* Inter Physics Tutor part 1 ১৯৫৫
* Inter Physics Tutor part 2 ১৯৫৫
* Laboratory Physics ৩য় সংস্করণ ১৯৭০

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

জাতীয় স্বীকৃতি হিসাবে তিনি বাংলা কলেজ ছাত্র মজলিস সমিতি পুরস্কার ও রাইর্টাস গিল্ড পুরস্কার (১৯৬৪), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক (১৯৮৭), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৩), ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার ও চট্টগ্রাম সমিতি পদক (১৯৮৮) এবং জাতীয় সংবর্ধনা স্বর্ণপদক (১৯৮৯) লাভ করেন ৷

মৃত্যু[সম্পাদনা]

আবুল কাসেম ১৯৯১ সালের ১১ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Principal Abul Kashem's Death Anniversary Today"। The Bangladesh Observer। ১১ মার্চ ২০০৫। 
  2. Ahmad, Quazi Azizuddin (১৯৯১)। Principal Abul Kashem Sharok Grantho: A commemorative book on Principal Abul Kashem। Chittagong: Principal Abul Kashem Shreti Parishod। 
  3. Mahmud, Akif bin, Principal Abul Kashem: Matrivashake gire je full bekoseto. The Weekly Bangla Patrika, Friday 24 March 2006
  4. "Death anniversary of Principal Abul Kashem today."। The New Nation। ১১ মার্চ ২০০৫।