আবদুল আহাদ (সঙ্গীত পরিচালক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল আহাদ
প্রাথমিক তথ্য
জন্ম১৯ জানুয়ারি ১৯১৮
রাজশাহী,বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি বর্তমানেবাংলাদেশ
মৃত্যু১৫ মে ১৯৯৪(1994-05-15) (বয়স ৭৬)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাসুরকার, প্রশিক্ষক, পরিচালক, সংগঠক ও গায়ক
কার্যকাল১৯৩৬ – ১৯৯৪
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৮)

আবদুল আহাদ একাধারে ছিলেন সুরকার, প্রশিক্ষক, পরিচালক, সংগঠক ও গায়ক

জন্ম ও শৈশব[সম্পাদনা]

আবদুল আহাদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯১৮ সালের ১৯শে জানুয়ারি[১] রাজশাহীতে। তার বাবা আবদুস সামাদ, মা হাসিনা খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ। তার আদি পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরে। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনায় নানার বাড়িতে।

শিক্ষা ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৩৬ সালে কলকাতায় অল বেঙ্গল মিউজিক প্রতিযোগিতায় ঠুংরি ও গজলে প্রথম স্থান অধিকার করে আবদুল আহাদ তৎকালীন সঙ্গীতজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে যান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশায় শান্তিনিকেতনে তিনি শিক্ষা নিয়েছিলেন। শান্তিদেব ঘোষশৈলজারঞ্জন মজুমদার ছিলেন তার শিক্ষক।

শান্তিনিকেতনের শিক্ষাজীবনে আবদুল আহাদ সাহিত্যসভা, গানের অনুষ্ঠান ও প্রার্থনাঘরে গান পরিবেশন করতেন। বৈতালিক ও মন্দিরেসঙ্গীত পরিবেশনের দায়িত্বও বেশির ভাগ সময় তার ওপরই বর্তাত। তখন শ্যামা, চণ্ডালিকা ও তাসের দেশ নাটকের মহড়া হতো উত্তরায়ণে। স্বয়ং কবিগুরু উপস্থিত থাকতেন এসবের মহড়ায়। এই সময় কবিগুরুর পরম সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য হয় আবদুল আহাদের।

১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ কবিগুরুর প্রয়াণ-সংবাদ শান্তিনিকেতনে পৌঁছার পর শৈলজারঞ্জন মজুমদার তাঁকে ডেকে নিয়ে সমবেত কণ্ঠে গাওয়ার জন্য একটি গানের স্বরলিপি দেন। বিখ্যাত সেই গানটি ছিল ‘সম্মুখে শান্তি পারাবার’। শান্তিনিকেতনের প্রার্থনাঘরে সেদিন সন্ধ্যায় সবাই মিলে তারা গানটি গেয়েছিলেন।

শান্তিনিকেতনের শিক্ষাজীবন শেষে তিনি বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) চলে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। এবার তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি হিজ মাস্টার্স ভয়েস-এ রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তার নিবিড় তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেন তখনকার প্রখ্যাত সব শিল্পী। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সুধা মুখোপাধ্যায়, সন্তোষ সেনগুপ্ত, সুচিত্রা মিত্র, পঙ্কজকুমার মল্লিক, শান্তিদেব ঘোষ, সত্য চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

আবদুল আহাদের নিজের সুরারোপিত প্রথম আধুনিক গানের রেকর্ড এইচএমভি থেকে বের করেন সন্তোষ সেনগুপ্ত। গান দুটি ছিল, ‘তুমি আমি দুই তীর সুগভীর তটিনীর’ ও ‘সে পথ ধরি আস নাই আস নাই তুমি’।

১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি আবদুল আহাদ ঢাকায় চলে আসেন। এরপর শুরু হয় তার সঙ্গীতিক জীবনের নতুন অধ্যায়। ঢাকায় এসে তিনি যোগ দেন পাকিস্তান রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রে। ঢাকা বেতার কেন্দ্রের তখন শোচনীয় অবস্থা। তাঁকে নিয়ে প্রযোজকের সংখ্যা তখন মাত্র তিনজন। ফলে এখান থেকে সঙ্গীত সম্প্রচারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে তার ওপর। পাকিস্তান হলেও ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ানোর ব্যাপারে তার ছিল উদ্যোগী ভূমিকা। আবদুল আহাদ জীবনের প্রায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতারে প্রযোজক-সুরকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বয়সসীমা শেষ হওয়ার পরও সাতবার তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।[২]

সঙ্গীতে অবদান[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর সঙ্গীতশিল্পীদের একটি বড় অংশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ফলে তখনকার পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) রাজধানী ঢাকা ও তার বেতার কেন্দ্র প্রায় সঙ্গীতশিল্পীশূন্য হয়ে পড়েছিল। তাই জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন হয়ে পড়ে ঢাকা বেতার কেন্দ্রকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর। এই গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আবদুল আহাদ। সেই সময় পূর্ববাংলার পরিবেশ সংস্কৃতি, বিশেষত,সঙ্গীতের বিকাশের জন্য মোটেও অনুকূল ছিল না। এর মধ্যেই ঢাকাকে ঘিরে আবদুল আহাদ এক বিস্ময়কর যুগের প্রবর্তনে সক্ষম হয়েছিলেন।

পুরস্কার ও সম্মননা[সম্পাদনা]

সঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ১৯৬২ সালে ‘তমখা-ই ইমতিয়াজ, ১৯৬৯ সালে ‘সিতারুই-ইমতিয়াজ’ খেতাব লাভ করেন। [৩] বাংলাদেশ সরকারও তাঁকে ১৯৭৮ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[৪][৫][৬] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করে।[৭]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৯৪ সালের ১৫ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৮] 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "অতুলনীয় আহাদ (সম্পাদক সমীপেষু)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৬ 
  2. http://archive.prothom-alo.com/detail/news/63399 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে , স্মরণঃ সঙ্গীতই ছিল যাঁর একমাত্র আরাধ্য, রাশেদুর রহমান | তারিখ: ১৫-০৫-২০১০
  3. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  4. মোবারক হোসেন খান (২০১২)। "আহাদ, আবদুল"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  5. "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭ 
  6. "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭ 
  7. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৯ অক্টোবর ২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  8. "দেশভাগ ভুলিয়ে দিয়েছে এই সঙ্গীত-প্রতিভাকে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-০৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]