আফজাল গুরু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আফজাল গুরু
জন্ম
মোহাম্মদ আফজাল গুরু

২০ নভেম্বর ১৯৬৯
জাগির দোয়াবগাহ, সোপুর, বারামুল্লা জেলা, জম্মু ও কাশ্মীর, ভারত
মৃত্যুফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৩(২০১৩-০২-০৯)
মৃত্যুর কারণফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাMBBS
অপরাধীর অবস্থা৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে সকাল ৮:০০ এএম (আইএসটি) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কর্যকর করা হয়।
আক্রমণের উদ্দেশ্যভারতীয় সংসদে সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র[১]
দণ্ডাদেশের কারণখুন
ষড়যন্ত্র
ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উস্কানি
আগ্নেআস্ত্রের মজুদ
ফৌজদারি দণ্ডমৃত্যুদন্ড

আফজাল গুরু কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা যিনি ভারতের পার্লামেন্টে বোমা হামলায় সন্দেহজনক অভিযুক্ত। [২] ৩০ জুন ১৯৬৯ কাশ্মিরের বারামুলা জেলার সোপোরে নামক এক ছোট্ট শহরে জন্মগ্রহণ করেন আফজাল গুরু। উচ্চ-মাধ্যমিক শেষ করে সেখানকার একটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু কাশ্মিরের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে তিনি মেডিক্যালের পাঠ সম্পন্ন করতে পারেননি। তিনি একটি পাকিস্থানি মাওবাদী সংগঠন জইস-ই-মহম্মদ এর সদস্য ছিলেন। পরে তিনি ১৯৯৩-৯৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একটি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আফজাল গুরু বিভিন্ন সময়ে কাশ্মিরের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পার্লামেন্ট ভবনে হামলার ঘটনার আগে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কোনো অভিযোগ ছিল না।

কেন আফজালের ফাঁসি বিতর্কিত: ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সংসদ ভবনের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ৫ জন সশস্ত্র ব্যক্তি গাড়িবোমা হামলা চালান। তাদের চ্যালেঞ্জ করা হলে গাড়ি থেকে বের হয়ে তারা গুলিবর্ষণ করে আট নিরাপত্তাকর্মী ও এক মালীকে হত্যা করেন। পরে বন্দুকযুদ্ধে হামলাকারীদের ৫ জনই নিহত হন।

ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল দাবি করে, তারা ঘটনার আসল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে পেয়েছেন। এ ঘটনার মূল পলিকল্পনাকারী হিসেবে ১৫ ডিসেম্বর দিল্লি থেকে দিল্লি ইউনিভার্সিটির আরবির শিক্ষক এসএআর গিলানি এবং কাশ্মিরের শ্রীনগর থেকে শওকত গুরু ও তার চাচাতো ভাই আফজাল গুরুকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর গ্রেফতার করা হয় শওকতের স্ত্রী আফসান গুরুকে। গিলানি, শওকত ও আফজালকে একটি দ্রুত বিচার আদালতে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টে খালাস পান গিলানি ও আফসান গুরু। আর ২০০৫ সালের ৫ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের রায়ে আফজাল গুরুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আইবিএন-এ প্রকাশিত সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে দেখা যায়, আফজাল গুরুর বিরুদ্ধে হাজির করা প্রমাণ কেবল পরিস্থিতিগত, তার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার বস্তুগত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রায়ে বলা হয়, ‘ওই হামলার ঘটনায় অনেক প্রাণহানি এবং তাকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ তখনই থামবে যখন আসামীকে ফাঁসি দেওয়া হবে।’

আফজাল গুরুর ফাঁসি : ৯ই ফেব্রুয়ারি,২০১৩ সালের এই দিনে কাশ্মীরের প্রখ্যাত আলেম,ও ইসলামী ব্যক্তিত্ত আফজাল গুরুকে এক প্রহসনের বিচার মঞ্চস্থ করে ফাঁসি দেয় ইন্ডিয়ান সরকার।২০০১ সালের ডিসেম্বরে ইন্ডিয়ার পার্লামেন্ট ভবনে হামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়।খোদ পুলিশের চার্জশিটেও আফজালকে ওই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়নি।সুপ্রিম কোর্টের বিচারেও স্বীকার করা হয়, অভিযোগের প্রমাণ সুস্পষ্ট নয়।এরপরে ভারতের পার্লামেন্ট আক্রমণে যুক্ত হওয়ার কারণে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে দিল্লির তিহার কারাগারে নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকার পর ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।তার লাশও তার পরিবারকে দেওয়া হয়নি, তাদের এ ব্যাপারে কিছু জানানো শুধু জানানো হয়েছিল। কারাগারেই তার লাশ সমাহিত করা হয়।

ফাঁসিতে যাওয়ার আগে তিনি জল্লাদের উদ্দেশ্যে একটি ছোট্ট মিনতি করেন আর তা হলো, 'প্রচণ্ড ব্যথা পেতে পারি' এমন কিছু নিশ্চয়ই তুমি করবে না। জল্লাদ চোখের পানি সামলে নিশ্চিত করেন, 'না এমন কোনো কাজই করা হবে না।' জল্লাদ এ সময় আফজাল গুরুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছিলেন না। জল্লাদের চোখ বারবার পানিতে ভরে যাচ্ছিলো। তার বেশ কষ্ট হয়েছে নিজেকে সামলাতে।তিহার কারাগারের প্রায় সব কারারক্ষীরাই তার জন্য কেঁদেছে।

ফাঁসির কথা শুনে তিনি খুব শান্ত ও নির্বিকার ছিলেন।ফাঁসির খবর পাওয়ার পর বা ফাঁসি আসন্ন জেনেও কেউ যে এমন শান্ত ও নির্বিকার থাকতে পারেন আগে কখনোই এমন দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়নি কারা কর্মকর্তাদের।এক কারা কর্মকর্তা বলেন, আফজাল গুরুর প্রচণ্ড আধ্যাত্মিক শক্তি ছিল বলেই তিনি এমন সাহস দেখাতে পেরেছেন। তিনি ছিলেন খুবই জ্ঞানী এবং ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের ওপর তার অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য ছিল।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

আফজাল গুরু একসময় ফলের ব্যবসা করতেন।[৩]

ভারতের পার্লামেন্টে আক্রমণ[সম্পাদনা]

২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাঁচজন স্বশস্ত্র বন্দুকধারী ভারতের পার্লামেন্টে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে নয়জনকে হত্যা করে। নিহতের ছয় জন নিরাপত্তাকর্মী এবং পার্লামেন্টের বাগানের এক মালি নিহত নিহত হন। একই সঙ্গে মারা যান হামলাকারি পাঁচ জঙ্গী। ওই হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে আফজাল গুরুকে দোষী সাব্যস্ত করে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।[৪]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

৯/২/২০১৩ তারিখ স্থানীয় সময় সকাল আটটায় তিহার জেলে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয় এবং একই দিনে তিহার জেলের তিন নম্বর সেলের কাছে তাকে দাফন করা হয়। গত আট বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এখানেই বন্দী ছিলেন।

বিক্ষোভ প্রদর্শন[সম্পাদনা]

আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকর করার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের রাজধানী মোজাফফরাবাদে শনিবার ৯ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে কয়েকশ লোক।[৩] এছাড়া আফজালের ফাঁসির খবর প্রকাশিত হওয়ার পর যাতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে, এ জন্য সীমান্তবর্তী রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে।[২]

আফজাল গুরুকে নিয়ে বই[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Afzal Guru hanged: Curfew imposed in Kashmir valley, NH closed to avert trouble Last Rerieved 9 February 2013
  2. ভারতে আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকর[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],অনলাইন ডেস্ক, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ০৯-০২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  3. আফজাল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদে আজাদ কাশ্মিরে বিক্ষোভ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, দৈনিক সংগ্রাম। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১০-০২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  4. ভারতে আফজাল গুরুর মৃত্যুদন্ড কার্যকর, বিবিসি বাংলা। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ০৯-০২-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]