সূরা তাওবাহ্‌

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আত-তাওবাহ্‌ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আত-তাওবাহ্‌
التوبة
শ্রেণীমাদানী
নামের অর্থঅনুশোচনা
অন্য নামআল-বারাহ্ (শাস্তি থেকে অব্যাহতি)
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম
আয়াতের সংখ্যা১২৯
পারার ক্রম১০ থেকে ১১
মঞ্জিল নং১৯ থেকে ২১
রুকুর সংখ্যা১৬
সিজদাহ্‌র সংখ্যানেই
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা আনফাল
পরবর্তী সূরা →সূরা ইউনুস
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

সূরা আত-তাওবাহ্‌, (আরবি: سورة التوبة, "অনুশোচনা"), যা সূরা বার'আহ বা বার'আত (প্রত্যাখ্যান) নামেও পরিচিত[১] মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের নবম সূরা। এই সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ১২৯ টি।[২] আরবি তওবা অর্থ ক্ষমা। একে সূরা তওবা বলা হয়, কারণ এতে মুসলমানদের তওবা কবুল হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। সূরাটির অন্য নাম হলো বারা'আত - একে বারা'আত বলা হয় কারণ, এতে কাফেরদের তথা অবিশ্বাসীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও তাদের ব্যাপারে দায়িত্ব-মুক্তির উল্লেখ আছে।

বিসমিল্লাহ-হীনতা[সম্পাদনা]

এই সূরার বৈশিষ্ট্য হলো এর শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা হয় না। কারণ কোরআনের বিভিন্ন অংশ ২৩ বছরের দীর্ঘ পরিসরে অবতীর্ণ হয়েছিল। কখনও একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাও ভেঙে ভেঙে অবতীর্ণ হতো। জিব্রাইল তা কোথায় বসাতে হবে, তা বলে দিতেন। যখন বিসমিল্লাহ অবতীর্ণ হতো তখন বোঝা যেত, আগের সূরার অবতরণ শেষ হয়েছে। কিন্তু সূরা তওবা অবতরণে কোনো বিসমিল্লাহ অবতীর্ণ হয়নি এবং নবী মুহাম্মাদও তা লিখে যেতে নির্দেশ দেননি। এই অবস্থায় মুহাম্মাদ মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তিতে খলিফা ওসমান গনী বিসমিল্লাহ দেখতে না পেয়ে একে অন্য সূরার অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। অনেকে একে সূরা আনফালের অংশ মনে করেন। তাই আয়াত-সংখ্যার দিক দিয়ে বেশি হওয়াসত্ত্বেয় সাবধানতার খাতিরে কোরআন সংকলনের সময় একে সূরা আনফালের পরে স্থান দেয়া হয়েছে।

যেহেতু অবতরণের সময়ই এর শুরুতে বিসমিল্লাহ ছিল না, তাই বিজ্ঞ 'আলেমদের বক্তব্য হলো, কেউ যদি সূরা আনফালের পরে সূরা তওবা পড়ে, তাহলে সে বিসমিল্লাহ পড়বে না; তবে কেউ যদি পরম্পরাহীনভাবে সূরা তওবাই প্রথমে পড়ে, তাহলে বিসমিল্লাহ জুড়ে নিবে। অনেকে বিসমিল্লাহ'র বদলে 'আঊযুবিল্লা-হি মিন না-র পড়ে থাকেন, যার কোনো ভিত্তি কোনো বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত নয়।

অবিশ্বাসীদের সাথে সম্পর্কের আলোচনা[সম্পাদনা]

সূরা তওবার সর্বত্র কিছু যুদ্ধ (মক্কা বিজয়, হোনাইন যুদ্ধ, তাবুক যুদ্ধ), যুদ্ধ সংক্রান্ত ঘটনাবলী এবং এসংক্রান্ত হুকুম, মাসায়েল ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে। এসকল যুদ্ধের প্রেক্ষিতে আরবের সকল গোত্রের সাথে সকল চুক্তি বাতিলের নির্দেশ আসে।

নামকরণ[সম্পাদনা]

আলোচ্য সূরার নাম আততাওবা। এর অপর একটি নাম হচ্ছে البراءه (আল বারায়াত)। তাফসীরে কাশশাফসহ অন্যান্য তাফসীরগ্রন্থে মুফাসসিরগণ এ সূরার আরো দশটি নাম বর্ণনা করেছেন, তবে এ দুটি নামই প্রসিদ্ধ। আর । براءه শব্দের অর্থ হলো, সম্পর্কচ্ছেদ ও দায়িত্বমুক্ত হওয়া। এ সূরা অবতীর্ণের মধ্য দিয়ে চুক্তি ভঙ্গকারী সকল মুশরিকের সাথে সন্ধিচুক্তি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাদের সাথে সকল প্রকার সম্পর্কচ্ছেদ করা হয়েছে। সূরাটির প্রথম আয়াতের প্রথম শব্দটি । এ হিসেবে এর নামকরণ করা হয়েছে । ( সূরা আল বারায়াত)। অপরদিকে শব্দের আভিধানিক অর্থ- অনুশোচনা, অনুতাপ, প্রত্যাবর্তন, ক্ষমা, তওবা ইত্যাদি। "এ সূরার শেষের দিকে কতিপয় মুসলমান (সাহাবী) তওবা করার পর তাদেরকে তওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা তাবুক অভিযানে যোগদান করেননি তাদের গুনাহ মাফ হওয়ার কথা ঘোষিত হয়েছে। তাই এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে গ্রহণ করে এ সূরার নাম আততাওবা রাখা হয়েছে"। সুতরাং বিষয়বস্তুর আলোকে সূরাটির নামকরণ যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত হয়েছে।

নাযিলের সময়কাল[সম্পাদনা]

মুসা আঃ সালামের সময় কাল।

নাযিলের প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

তওবা বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা।

আলোচ্য বিষয়[সম্পাদনা]

হজ্জের সময় মানুষ আল্লাহর কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয় যে তাঁরা আর ভবিষ্যতে পাপ কাজে লিপ্ত হবে না।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Nasr, Seyyed Hossein (২০১৫)। The Study Qur'an। New York: HarperCollins। পৃষ্ঠা 503। আইএসবিএন 978-0-06-112586-7 
  2. পবিত্র কোরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর) - মূল: তাফসীরে মা'আরেফুল ক্বোরআন, মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শাফী'; অনুবাদ ও সম্পাদনা: মাওলানা মহিউদ্দীন খান। সউদী আরবের শাসক বাদশাহ ফাহদ ইবনে আবদুল আজীজের নির্দেশে ও পৃষ্ঠপোষকতায় মুদ্রিত।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]