আকন্দ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আকন্দ
Calotropis gigantea
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Gentianales
পরিবার: Apocynaceae
উপপরিবার: Asclepiadoideae
গণ: Calotropis
প্রজাতি: C. gigantea
দ্বিপদী নাম
Calotropis gigantea
(L.) W.T.Aiton
প্রতিশব্দ[১]
  • Asclepias gigantea L.
  • Calotropis gigantea (L.) R. Br. ex Schult.
  • Madorius giganteus (L.) Kuntze
  • Periploca cochinchinensis Lour.
  • Streptocaulon cochinchinense (Lour.) G. Don

আকন্দ এক প্রকারের ঔষধি গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Calotropis gigantea (C. procera)। গাছটির বিষাক্ত অংশ হলো পাতা ও গাছের কষ। কষ ভীষণ রেচক, গর্ভপাতক, শিশু হন্তারক, পাতা মানুষ হন্তারক বিষ। আকন্দের ফুল দেবাদিদেব মহাদেবের পুজোয় লাগে। আকন্দের ফুলকে সংস্কৃতে অর্ক পুষ্প বলা হয়ে থাকে ।

পরিচিতি[সম্পাদনা]

আকন্দ এক প্রকার গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এই গাছ সাধারণত: ৩-৪ মিটার পর্যন্ত উচুঁ হয়ে থাকে। আকন্দ দুই ধরনের গাছ শ্বেত আকন্দ ও লাল আকন্দ। শ্বেত আকন্দের ফুলের রং সাদা ও লাল আকন্দের ফুলের রং বেগুনি রং এর হয়ে থাকে। গাছের পাতা ছিড়লে কিংবা কাণ্ড ভাঙ্গলে দুধের মত কষ (তরুক্ষীর) বের হয়। ফল সবুজ, অগ্রভাগ দেখতে পাখির ঠোটের মত। বীজ লোম যুক্ত, বীজের বর্ণ ধূসর কিংবা কালচে হয়ে থাকে।

প্রজাতি[সম্পাদনা]

বিজ্ঞানীদের মতে, এর দুটি প্রজাতি রয়েছেঃ কেলোট্রপিস গাইগেনটিয়া (Calotropis Gigantea) এবং কেলোট্রপিস প্রসেরা (Calotropis Procera)।

প্রাপ্তিস্থান[সম্পাদনা]

এক সময় বাংলাদেশের আনাচে -কানাচে নিরস পতিত জমিতেও যে মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ দেখা যেত, অথচ এখন তা দুর্লভ। তার নাম আকন্দ বা অর্ক। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন, পাকিস্তান, নেপাল,[২] পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে এবং পরিত্যক্ত স্থানে বেশি পাওয়া যায়।

রাসায়নিক উপাদান[সম্পাদনা]

পাতায় এনজাইম সমৃদ্ধ তরুক্ষীর বিদ্যমান। এতে বিভিন্ন গ্লাইকোসাইড, বিটা-এমাইরিন ও স্টিগমাস্টেরল আছে।

আবাসস্থল ও বংশ বিস্তার[সম্পাদনা]

আকন্দ উন্মুক্ত পতিত জমি, রাস্তার পার্শ্ববর্তী স্থান এবং রেললাইনের ধারে ও গ্রামে কাঁচা রাস্তার পাশে, বিশেষ করে শুকনো স্থানে ভালো জন্মে। আকন্দের বংশবিস্তার হয় আঁশ এবং বাতাসের মাধ্যমে। এর ফুল ফোটে ফাল্গুনচৈত্র মাসে।

গুণাগুণ[সম্পাদনা]

ওষুধ হিসেবে আকন্দের ভেষজ ব্যবহার বিষয়ে আয়ুর্বেদইউনানি চিকিৎসায় উল্লেখ রয়েছে। এই উদ্ভিদের ব্যবহার্য অংশ হলো ছাল, পাতা, ফুল, মূল ও কষ। বায়ুনাশক, উদ্দীপক, পাচক, পাকস্থলীর ব্যথা নিবারক, বিষনাশক, ফোলা নিবারক। প্লীহা, দাদ, শোথ, অর্শ, ক্রিমি ও শ্বাসকষ্টে উপকারী। ব্রণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, বুকে কফ, খোসপাচড়া, একজিমায় আকন্দের পাতা, কাণ্ড ও মূলের ব্যবহার রয়েছে। ইহার ফুল বহুমূত্ররোগ এর জন্যে বিশেষ উপকারী বলে মনে করা হয়। শরীরে খোস পাচড়া হলে আকন্দ আঠার সাথে চার গুণ সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করে নিতে হবে। গরম তেলের সাথে কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খোস পাচড়ায় ভালোভাবে মেখে নিলে এটা দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। যদি ঠান্ডা লেগে বুকে সর্দি লেগে যায় তবে প্রথমে বুকে পুরোনো ঘি ঢালতে হবে। এবার এর উপর আকন্দ পাতা গরম করে ছেকা দিলে আরাম পাওয়া যাবে। খেলতে গিয়ে বা পড়ে গিয়ে পা মোচকে গেলে আকন্দ পাতা প্রথমে গরম করে ব্যাথা স্থানে ছেকা দিলে ব্যাথা কমে যাবে। বিষাক্ত কিছু যেমন বিছে, কাঠ পিপড়া ইত্যাদিতে কামড়ালে আকন্দ পাতার রস লাগালে বিষাক্ত কেটে যাবে। মুখে ব্রণ হলে আকন্দ পাতা ভিজিয়ে ব্রণের উপর চেপে রেখে দিলে ব্রণ ফেটে যাবে। শরীরের কোন স্থানে দূষিত ক্ষত হলে সেই স্থানটিতে পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে । তাহলে পুঁজ হবে না। আকন্দ পাতার সোজা দিকে সরিষার তেল মাখিয়ে পেটের উপর ছ্যাকা দিলে পেট কামড়ানো সেরে যাবে। কোন স্থান ফুলে গেলে সেই স্থানে আকন্দ পাতা বেধে রাখলে ফুলা কমে যায়। আকন্দ পাতার মূল গুড়া করে ২ গ্রাম করে প্রতিদিন খেলে ক্ষধা বৃদ্ধি পাবে। আকন্দ এর পোড়া ছাই পানিসহ পান করলে সাথে সাথে উপকার পাওয়া যায়।

বিশেষ কার্যকারিতা[সম্পাদনা]

বায়ুনাশক, পাকস্থলীর ব্যথা ও হজমকারক[৩]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Plant List: A Working List of All Plant Species"। ১২ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৪ 
  2. Bingtao Li; Michael G. Gilbert; W. Douglas Stevens, "Calotropis gigantea (Linnaeus) W. T. Aiton, Hortus Kew. ed. 2. 2: 78. 1811", Flora of China online, সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৫ 
  3. আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত;লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; আক্টোবর ২০০৯; পৃষ্ঠা- ১৫৩-৫৪

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]