অল্টারনেটর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককার একটি অল্টারনেটর যা হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে তৈরি হয়েছিল।

অল্টারনেটর এমন একটি জেনারেটর যা পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎপন্ন করে।[১] যে কোন জেনারেটরের আর্মেচার ওয়াইন্ডিংয়ে প্রথমত পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। কিন্তু ডি সি জেনারেটরের বেলায় পরিবর্তনশীল ভোল্টেজকে কম্যুটেটরের মাধ্যমে ডি সি তে রুপান্তরিত করে লোডে সরবরাহ করা হয়। অল্টারনেটরে পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎপন্ন করার জন্য চুম্বকক্ষেত্র ও আর্মেচার প্রয়োজন। কোন চৌম্বকক্ষেত্রে আর্মেচার অর্থাৎ কন্ডাক্টরকে ঘুরিয়ে বা স্থির আর্মেচারের চতুর্দিকে চৌম্বকক্ষেত্রকে ঘুরিয়ে পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎপন্ন করা হয়। কিন্তু উচ্চ চাপ ও ক্ষমতার অল্টারনেটরে আর্মেচারকে ঘুরালে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হওয়ার কারণে সাধারণত চৌম্বকক্ষেত্রকে ঘুরিয়ে ভোল্টেজ উৎপন্ন করা হয়।

অল্টারনেটরের মুলতত্ত্ব[সম্পাদনা]

তড়িৎ-চৌম্বক আবেশের (Electromagnetic induction) তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে অল্টারনেটর তৈরি করা হয়। ডি সি জেনারেটরের মত অল্টারনেটরেও আর্মেচার ও চৌম্বকক্ষেত্র থাকে। অল্টারনেটরে আর্মেচার ওয়াইন্ডিং একটি স্থির কাঠামোর উপর বসানো থাকে। একে স্টেটর বলা হয়। আর মেশিনের চৌম্বক কয়েল একটি ঘূর্ণনশীল কাঠামোর উপর বসানো থাকে যাকে রোটর বলা হয়। একটি ঢালাই লোহার ফ্রেমের সাথে আর্মেচার ও স্টেটরের কেন্দ্রভাগ আটকানো থাকে। কেন্দ্রভাগের ভিতরের দিকে ওয়ান্ডিং বসানোর জন্য খাঁজ কাটা থাকে। রোটরের বাইরের দিকে পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ ও উত্তর মেরু সৃষ্টি হয়। পোলের গায়ে জড়ানো কয়েল দিয়ে ডি সি সাপ্লাই থেকে ১২৫ কিংবা ২৫০ ভোল্টে বিদ্যুত প্রবাহিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডি সি প্রবাহ দেয়ার জন্য রোটর শ্যাফ্‌টের সঙ্গে সংযুক্ত একটি ছোট শান্ট জেনারেটর ব্যবহার করা হয় যাকে এক্সাইটার বলা হয়। এক্সাইটার থেকে বিদ্যুত কারেন্ট ব্রাশ ও স্লিপ রিং হয়ে কয়েলে জায়। রোটর ঘুরতে আরম্ভ করলে সে সঙ্গে চুম্বক বলরেখাও ঘুরতে থাকে। ঘুরন্ত চৌম্বক বলরেখা যখন স্টেটরের খাঁজে বসানো পরিবাহকগুলোকে ছেদ করে, তখন তড়িৎ-চুম্বকীয় আবেশের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি পরিবাহকে তড়িচ্চালক শক্তি আবিষ্ট হয়। আবিষ্ট পরিবাহকের অভিমুখ ফ্লেমিং এর দক্ষিণ হাত নিয়ম থেকে জানা যায়। এ নিয়ম প্রয়োগ করলে দেখা যায় কোন পরিবাহকের সামনে যখন দক্ষিণ প্রান্ত এসে দাঁড়ায় তখন আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি ও বিদ্যুৎ যে দিকে কাজ করে উত্তর প্রান্ত আসলে তার বিপরিত হয়। ফলে আর্মেচারের আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তিও তড়িৎ দিক পরবর্তি হয়।

অল্টারনেটরের বিভিন্ন অংশের তালিকা[সম্পাদনা]

অল্টারনেটরের প্রধান অংশ তিনটি:

  • স্টেটর
  • রোটর
  • এক্সাইটার

স্টেটর[সম্পাদনা]

বড় বড় অল্টারনেটরের স্টেটর দুই ধরনের হয়ে থাকে:

  • ফ্রেম বা ইয়ক
  • স্টাম্পিং

রোটর[সম্পাদনা]

অল্টারনেটের রোটর দুই ধরনের:

  • স্যালিয়েন্ট পোল
  • নন স্যালিয়েন্ট পোল

ডি সি জেনারেটরের সাথে তুলনা[সম্পাদনা]

ডিসি জেনারেটরের সাথে অল্টারনেটরের বেশ কিছু পার্থক্য বিশেষ গুরুত্বের দাবীদার।

অল্টারনেটর ডিসি জেনারেটর
এতে পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় এবং স্লিপ রিং এর মাধ্যমে লোডে সরবরাহ করা হয়। এতে প্রাথমিক অবস্থায় পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ উৎপন্ন হলেও পরে কম্যুটেটরের সাহায্যে ডি সি তে রুপান্তরিত করে লোডে সরবরাহ করা হয়।
এতে স্লিপ রিং থাকে। এতে কম্যুটেটর থাকে।
চৌম্বক ক্ষেত্র ও আর্মেচার যেকোন একটি ঘুরন্ত এবং অপরটি স্থির থাকতে হবে । চৌম্বক ক্ষেত্র স্থির থাকবে ও আর্মেচার ঘুরবে।
আর্মেচার ওয়াইন্ডিং খোলা থাকে। আর্মেচার ওয়াইন্ডিং বন্ধ থাকে।
ফিল্ডে ডি সি সাপ্লাই দিতে হয়। আলাদা ডি সি সাপ্লাই দিতে হয়না।
ফিল্ড কোর লেমিনেটেড শিট দ্বারা তৈরি। ফিল্ড কোর ঢালাই লোহার তৈরি।

এই নিবন্ধে ব্যবহৃত পরিভাষা তালিকা[সম্পাদনা]

  • Electromotive force (EMF) - তড়িচ্চালক শক্তি
  • Alternating - পরিবর্তনশীল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Aylmer-Small, Sidney (১৯০৮)। "Lesson 28: Alternators"Electrical railroading; or, Electricity as applied to railroad transportation। Chicago: Frederick J. Drake & Co.। পৃষ্ঠা 456–463।