অমর মিত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অমর মিত্র
জন্ম৩০ আগস্ট, ১৯৫১
পরিচিতির কারণবাঙালি লেখক
পুরস্কারসাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার

অমর মিত্র (জন্ম :৩০ আগস্ট, ১৯৫১) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। কর্মজীবন কাটে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের এক দপ্তরে। তিনি ২০০৬ সালে ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন।[১] অশ্বচরিত উপন্যাসের জন্য ২০০১ সালে বঙ্কিম পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে। এ ব্যতীত ২০০৪ সালে শরৎ পুরস্কার ( ভাগলপুর ), ১৯৯৮ সালে সর্ব ভারতীয় কথা পুরস্কার স্বদেশযাত্রা গল্পের জন্য। ২০১০ সালে গজেন্দ্রকুমার মিত্র পুরস্কার পান। ২০১৭ সালে সমস্ত জীবনের সাহিত্য রচনার জন্য যুগশঙ্খ পুরস্কার, ২০১৮ সালে কলকাতার শরৎ সমিতি প্রদত্ত রৌপ্য পদক এবং গতি পত্রিকার সম্মাননা পেয়েছেন। খ্যাতনামা অভিনেতা ও নাট্যকার মনোজ মিত্র তার অগ্রজ।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

৩০শে আগস্ট ১৯৫১, বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ। তিনি বর্তমানে কলকাতা শহরের মানুষ।

সাহিত্যিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯৭৪ সালে মেলার দিকে ঘর গল্প নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তার আত্মপ্রকাশ। ধীরে ধীরে নিজেকে বিকশিত করেছেন। প্রথম উপন্যাস নদীর মানুষ ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয় অমৃত পত্রিকায়। প্রথম গল্পের বই মাঠ ভাঙে কালপুরুষ ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। ধ্রুবপুত্র লেখা হয়েছিল ৭ বছর ধরে। এই উপন্যাস খরা পীড়িত প্রাচীন উজ্জয়িনী নগরের কথা। এর যা কাহিনি তার সমস্তটাই লেখকের নির্মাণ। কবির নির্বাসনে নগর থেকে নির্বাসনে যায় জ্ঞান। মেঘে তার যাত্রাপথ বদল করে নেয়। প্রকৃতির এই পরিবর্তনে নগরে নেমে আসে বিপর্যয়। দীর্ঘ এই আখ্যান শেষ পর্যন্ত শূদ্র জাতির উত্থান ও কবির প্রত্যাবর্তন এ পৌঁছয়। এই কাহিনি যেন কবি কালিদাসের মেঘদূত কাব্যের বিপরীত এক নির্মাণ। খরা, জলের অভাবে আমার দেশ নিরন্তর দগ্ধ হয়। সেই কাহিনি এখানে এসেছে রূপক হয়ে। মেঘের অভাব জ্ঞানের অভাব। সৃজন কাল বন্ধ্যা হয়ে থাকে। দেশ তার ভিতরে পোড়ে। ক্ষমতা কী ভাবে মানুষকে অন্ধকারে ঠেলে নিরন্তর, এই উপন্যাস সেই কথাও খুঁজে বের করতে চেয়েছে। ২০০৬ সালে এই উপন্যাস সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছে। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত উপন্যাস অশ্বচরিত তথাগত বুদ্ধের ঘোড়া কন্থক ও তার সারথী ছন্দকের কাহিনি। তারা এই আড়াই হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করছে রাজপুত্রের প্রত্যাবর্তনের জন্য। এতদিনে এই পৃথিবী হিংসায় পরিপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরের তীরে দীঘার ছোট এক হোটেলের খরিদ্দার সংগ্রহকারী ভানুদাস নিজেকে নিজেকে বলে ছন্দক। হোটেলওয়ালার টাট্টু ঘোড়ার পালক সেই ভানুদাস ঘোড়াটিকে বলে কন্থক। বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে ঘোড়াটি পালায়। ভানুদাস সেই ঘোড়ার খোঁজে যায় চারদিকের গ্রামে গ্রামে, হাটে হাটে। রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে কোথায় না ? এই উপন্যাস সময় থেকে সময়ান্তরে যাত্রা করেছে বারে বারে। তথাগত বুদ্ধের সময় থেকে হিংসাদীর্ণ এই সময়ে। সেই ঘোড়াটিও পালাতে পালাতে শেষ পর্যন্ত যেন হিরোসিমায় গিয়ে কালো বৃষ্টির ভিতরে গিয়ে পড়ে। লেখক ভারতীয় প্রতিবেশে জাদু বাস্তবতার ব্যবহার করেছেন এই উপন্যাসে। ঘোড়াটি প্রতি আশ্বিনে পালাত। এইবার পালিয়েছে ঘোর বৈশাখে। প্রকৃতি এক দিনেই দুই ঋতু যেন পার হয়ে গিয়েছিল। এই উপন্যাসের কোনো শেষ নেই যেন। চলতেই থাকে। অশ্বচরিত বাংলা উপন্যাসে এক আলাদা রীতির জন্ম দিয়েছে যেন। লেখক হিংসা আর মৃত্যুর বিপক্ষে জীবনের কথা শুনিয়েছেন। পরমাণু অস্ত্রের বিপক্ষে কথা বলেছেন। ২০০১ সালে এই উপন্যাস বঙ্কিম পুরস্কারে ভূষিত হয়। কলকাতার সুখ্যাত নাট্যদল অভিনয় করেছে চারটি নাটক, তার গল্প ওউপন্যাস অবলম্বনে। যথাক্রমে, ১) পিঙ্কি বুলি ( গল্প বালিকা মঞ্জরী ),২) দামিনী হে ( গল্প আকাল ও অন্য কয়েকটি তারই গল্প)৩) পাসিং শো ( নভেলা পাসিং শো )৪) পুনরুত্থান ( ঐ নামের উপন্যাস )

কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র ধ্রুবপুত্র এবং অশ্বচরিত মঞ্চস্থ করেছেন। এবং পরে মালদা নাট্যসেনা ধ্রুবপুত্র উপন্যাসটিকে নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করেন। দুটি দলের প্রযোজনা ভিন্ন আঙ্গিকে নির্মিত।

একটিই নাটক লিখেছেন, "শেষ পাহাড় অশ্রু নদী"। করিমপুরের নাট্যদল অশ্রুনদী নামে অভিনয় করেছেন। এবং বেঙ্গালুরুর নাট্য দল স্মরণিক শেষ পাহাড় নামে অভিনয় করছেন।

২০১৯ সালের ৪-ই সেপ্টেম্বর থেকে ৬-ই সেপ্টেম্বরে কাজাখস্তানের রাজধানী নূর-সুলতান শহরে প্রথম এশিয়ান লেখক সম্মেলনে ( The First Forum Of Asian Countries' Writers ) একমাত্র ভারতীয় লেখক হিশেবে আমন্ত্রিত হন। এবং কাজাখস্তানের রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে কংগ্রেস হলে উনুষ্ঠিত উদ্বোধনী মঞ্চে তাঁর লিখিত প্রতিবেদন ' মিথিকাল লাইফ' পাঠ করেন। এশিয়া মহাদেশের পাঁচজন লেখককে উদ্বোধনী মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান হয়েছিল। তিনি তাঁদের অন্যতম একজন লেখক।

গ্রন্থ তালিকা[সম্পাদনা]

  • অমর মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প
  • অর্ধেক রাত্রি
  • ডানা নেই উড়ে যায়
  • ধুলোগ্রাম
  • অশ্বচরিত ( বঙ্কিম পুরস্কার-২০০১ )
  • আগুনের গাড়ি
  • ধ্রুবপুত্র ( সাহিত্য একাদেমি-২০০৬)
  • নদীবসত
  • কৃষ্ণগহ্বর
  • আসনবনি
  • পাঁচটি উপন্যাস
  • নিস্তব্দ নগর
  • প্রান্তরের অন্ধকার
  • ভি আই পি রোড
  • শ্যাম মিস্ত্রী কেমন ছিলেন
  • গজেন ভূঁইয়ার ফেরা
  • জনসমুদ্র
  • সবুজ রঙের শহর
  • নয় পাহাড়ের উপাখ্যান
  • সারিঘর
  • শূন্যের ঘর শূন্যের বাড়ি
  • সোনাই ছিলো নদীর নাম
  • হাঁসপাহাড়ি
  • পুনরুথহান
  • বহ্নিলতা
  • কুমারী মেঘের দেশ চাই
  • কন্যাডিহি
  • ধনপতির চর
  • সেরা ৫০টি গল্প
  • একান্নটি গল্প
  • প্রিয় পঞ্চাশটি গল্প
  • নিসর্গের শোকগাথা
  • ভুবনডাঙা
  • মালতী মাধব
  • কুসুমকুমারী ও মধুবালা
  • বাতাসবাড়ি জ্যোৎস্নাবাড়ি
  • সূর্যাস্তের পথে সূর্যাস্তের দেশে ( ভ্রমণ কাহিনি )
  • ভালো মানুষ মন্দ মানুষ ( অভিজ্ঞতার নির্যাস )
  • হারানো দেশ হারানো মানুষ ( দেশভাগ বিষয়ক আখ্যান)
  • একটি গ্রাম একটি নদী
  • দশমী দিবসে
  • নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান ও অন্যান্য কাহিনি
  • মোমেনশাহী উপাখ্যান
  • ২১টি গল্প
  • সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে ( জীবন বিষয়ক রচনাদি )
  • কিশোর গ্রন্থ ঃ
  • চাঁদু গায়েনের ডাকাত ধরা
  • পালিয়ে গেল গরম সিং
  • স্টিফেন হকিঙের চিঠি
  • ভূতুড়ে কথা
  • জামাই ষষ্টীর ভূত
  • রয়াল সার্কাসের গণেশ দাদা
  • দশটি দশ রকম
  • নরেন হরেন সাধু মানুষ

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "আউটলুক ইন্ডিয়া"। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ 

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]