অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন, ২০১৪

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন, ২০১৪
ভারতীয় সংসদ
প্রণয়নকারীভারতীয় সংসদ
অবস্থা: বলবৎ

অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন, ২০১৪ হল ভারতের একটি সংসদীয় আইন। এই আইনটি তেলেঙ্গানা বিল নামে সমধিক পরিচিত। এই আইন বলে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যটিকে ভেঙে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ নামে দুটি রাজ্য গঠিত হয়েছে।[১] এই আইনে নবগঠিত রাজ্যদুটির সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে, সম্পত্তি ও দায়িত্ব সম্পূর্ণ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে এবং হায়দ্রাবাদের মর্যাদাও নিরূপণ করে দেওয়া হয়েছে।[২][৩] অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি এই বিলটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।[৪]

২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিলটি লোকসভায় এবং ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এটি রাজ্যসভায় পাস হয়। ২০১৪ সালের ১ মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বিলটিতে স্বাক্ষর করেন এবং বিলটি সরকারি গেজেট হিসেবে প্রকাশ করেন।[৫] ২০১৪ সালের ২ জুন নতুন রাজ্য দুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।[৬]

পরিষদীয় ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০১৩ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীগোষ্ঠী গঠন করে। এই মন্ত্রীগোষ্ঠী অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য বিভাজনের প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখে। এই মন্ত্রীগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন তদনীন্তন অর্থমন্ত্রী পি. চিদম্বরম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ, আইনমন্ত্রী কপিল সিবাল, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও নারায়ণস্বামী। এই মন্ত্রীগোষ্ঠী তেলেঙ্গানা প্রসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ কমিটির রিপোর্টও খতিয়ে দেখে।

২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি লোকসভায় তেলেঙ্গানা বিল পেশ করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ মীরা কুমার[৭] বিল পাসের সময় লোকসভায় হইহট্টগোল চলছিল। সাংসদ লগদপতি রাজাগোপাল সংসদকক্ষে মরিচ স্প্রে করেন।[৮] পরে তিনি জানান, ভিন রাজ্জ্যের কয়েকজন কংগ্রেস সাংসদ কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে আত্মরক্ষার জন্য তিনি মরিচ স্প্রে করেছিলেন। বিল পাসের পর সংসদ মুলতুবি হয়ে যায়।[৯]

লোকসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, তিনি জানতেন না যে বিলটি লোকসভায় পেশ করা হয়েছে।[১০] ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিজেপির সমর্থনে বিলটি লোকসভায় পাস হয়ে যায়।[১১]

২০ ফেব্রুয়ারি বিজেপির সমর্থনে বিলটি রাজ্যসভাতেও পাস হয়ে যায়। [১২][১৩] ১ মার্চ বিলটিতে রাষ্ট্রপতি সাক্ষর করেন এবং সরকারি গেজেটে প্রকাশ করেন।[১৪]

সাংসদ বহিষ্কার[সম্পাদনা]

লোকসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ মীরা কুমার অন্ধ্রপ্রদেশের ১৮ জন সাংসদকে বহিষ্কার করেন। এঁরা হলেন জাতীয় কংগ্রেসের সাব্বাম হরি, অনন্ত ভেঙ্কটরামি রেড্ডি, রায়পতি শাম্বশিব রাও, এসপিওয়াই রেড্ডি, এম শ্রীনিবাসুলু রেড্ডি, ভি অরুণ কুমার, এ সাই প্রতাপ, সুরেশ কুমার শেটকর, কেআরজি রেড্ডি, বাপি রাজু কানুমুরি ও জি সুখেন্দর রেড্ডি; তেলুগু দেশম পার্টির নিরামাল্লি শিবপ্রসাদ, নিম্মালা কৃষ্টাপ্পা, নারায়ণ রাও; ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ওয়াইএস জগন্মোহন রেড্ডি ও এম রাজামোহন রেড্ডি এবং তেলেঙ্গানার দুজন সাংসদ।[১৫][১৬][১৭]

অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় অখণ্ড রাজ্যের প্রস্তাবনা[সম্পাদনা]

ভারতীয় সংবিধানের ৩ নং ধারা অনুসারে, কোনো রাজ্য ভাগ করতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বিধানসভার একটি মতামত প্রয়োজন হয়। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি, অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভা ও অন্ধ্রপ্রদেশ বিধান পরিষদে বিলটি প্রত্যাখ্যাত হয়। বিধায়করা এই বিলটির সঙ্গে ৯,০৭২টি সংশোধনী এবং বিধান-পারিষদরা এর সঙ্গে ১,১৫৭টি প্রস্তাব যুক্ত করেন। তবে সংবিধানের ৩ নং ধারা অনুযায়ী, ভারতের সংসদ নতুন রাজ্য সৃষ্টির ব্যাপারে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর। এই ব্যাপারে সংসদ সংশ্লিষ্ট রাজ্য বিধানসভার আপত্তি শুনতে বাধ্য নয়। তাই অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভা ও বিধান পরিষদের বিল প্রত্যাখ্যান তেলেঙ্গানা বিল সংসদে পাসের ব্যাপারে বাধা হয়নি।[১৮]

সুপ্রিম কোর্টে মামলা[সম্পাদনা]

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন বিল সংসদে উত্থাপনের বিরুদ্ধে মোট ৯টি মামলা দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আবেদনগুলি খারিজ করে দিয়ে জানায়, সংসদে বিল পাস হওয়ার পরই এই ধরনের মামলা করা যাবে।[১৯] তবে ২০১৪ সালের ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে এই ব্যাপারে একটি নোটিশ দেয়। ৫ মে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা গ্রহণ করবে।[২০]

অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন রাজধানীর প্রস্তাব[সম্পাদনা]

২০১৪ সালের ১১ মার্চ, তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন বিল-সংক্রান্ত মন্ত্রীগোষ্ঠীর সদস্য জয়রাম রমেশ বলেন, "বিশাখাপত্তনম, বিজয়ওয়াড়া, গুন্টুর, রাজামুন্দ্রি, তিরুপতি, কুর্নুল, ওঙ্গলনেল্লোরের মতো শহরগুলির মধ্যে একটিকে নতুন রাজধানী হিসেবে ভাবা হচ্ছে। সবক'টি শহরের অবস্থান খতিয়ে দেখে সেপ্টেম্বরে নাম চূড়ান্ত করা হবে।" নাগার্জুন বিশ্ববিদ্যালয়, নুজিভিদডোনাকোন্ডার মতো ছোটো শহরকে মহানগরীতে রূপান্তরিত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।[২১]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. "On eve of GoM meet, Minister says Bill on Telangana is ready"। ২ ডিসেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৪ 
  2. http://www.firstpost.com/india/special-status-to-telangana-residuary-ap-under-article-371-d-1262525.html
  3. The writer has posted comments on this article। "Andhra Pradesh bifurcation: GoM for special status to both states - The Times of India"। Timesofindia.indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-২৫ 
  4. "Andhra Pradesh assembly rejects the Bill for separate Telangana"IANS। Biharprabha News। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ 
  5. "President rule in Andhra Pradesh, assent to Telangana bill"Times of India। ১ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৪ 
  6. "Gazette Notification of commencement" (পিডিএফ)। Government of India। ২৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৪ 
  7. "Telangana Bill introduced in Lok Sabha"Times of India 
  8. "Telangana: Indian MP uses pepper spray in parliament"BBC 
  9. "Used pepper spray in self defence as a mob attacked me"CNN-IBN। ৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৪ 
  10. "Opposition refuses to accept Telangana bill introduced"Times of India 
  11. "Telangana bill passed in Lok Sabha; Congress, BJP come together in favour of new state"। Hindustan Times। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  12. "Telangana state may come into existence by month-end"Times of India। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  13. "Rajya Sabha passes Telangana bill"। Hindustan Times। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  14. "THE ANDHRA PRADESH REORGANISATION ACT, 2014" (পিডিএফ)। Ministry of Law and Justice, Government of India। ৮ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৪ 
  15. "Telangana crisis: 18 Andhra MPs suspended from Lok Sabha over ruckus in Parliament"The Indian Express 
  16. "18 Andhra MPs suspended from Lok Sabha"The Hindu 
  17. "16 Andhra MPs suspended from Lok Sabha"TOI 
  18. Arghya Sengupta, Alok Prasanna Kumar। "Interpreting a federal Constitution"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  19. "Supreme Court rejects 9 petitions seeking stay on Centre's Telangana plans"NDTV 
  20. "http://www.ndtv.com/article/south/supreme-court-refers-telangana-petitions-to-constitution-bench-492795"। NDTV  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  21. "Capital Quest to Begin in May, End in September"। New Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]